![চামড়া সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কায় বরিশালের ব্যবসায়ীরা](uploads/2024/06/04/Barishal-01_30.05-(2)-1717476672.jpg)
নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চকবারের পদ্মাবতী এলাকা। একসময় বরিশাল বিভাগের চামড়া বেচাকেনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। বিভাগের ছয় জেলার চামড়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হতো এই পদ্মাবতীতে। এখানে ৫৪ জন বড় ব্যবসায়ী দাপটের সঙ্গে এই ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তবে বর্তমানে সেই পদ্মাবতীতে গেলে চামড়ার আড়ত আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বছরের পর বছর পুঁজি হারিয়ে ব্যবসার ধরন পাল্টেছেন এখানকার চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের আড়তগুলো কাপড়, দরজা জানালার পর্দা, লেপ-তোশক তৈরির কারখানায় রূপান্তর হয়েছে। বিছানার চাদর ও ফোমের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক সময়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার রপ্তানিতে ধস এবং ঢাকার আড়তদারদের কাছে পাওনা টাকার ফেরত না পেয়ে ব্যবসার এ অবস্থা হয়েছে। পুঁজি হারানো ব্যবসায়ীদের দাবি, মাঠপর্যায়ের চামড়া ব্যবসা পুনরুদ্ধার করতে এবং এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া উচিত।
তারা বলেন, ঢাকায় অবস্থিত ট্যানারি মালিক কিংবা আড়তদাররা মাঠপর্যায়ে এসে চামড়া সংগ্রহ করেন না। মূলত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। অথচ সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কেবল ট্যানারি মালিকরা ভোগ করছেন। আর চামড়া সংগ্রহকারীরা প্রতি বছরই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
পদ্মাবতীতে গিয়ে দেখা যায়, চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহিনের মালিকানাধীন ‘মদিনা হাইড অ্যান্ড স্কিন স্টোরের নাম ও ব্যবসা পাল্টে হয়েছে মদিনা ক্লথ স্টোর। নাসির উদ্দিনের হাইড অ্যান্ড স্কিন নামক প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়ে ‘নাসির ক্লথ স্টোর’। এরা দুজন একসময় বরিশাল বিভাগের দাপুটে চামড়ার ব্যবসায়ী ছিলেন।
শুধু তারা দুজন নন, ২০১৯ সালের পর থেকে ৫৪ জনের মধ্যে ৫২ জনই তাদের পেশা ও ব্যবসা বদলেছেন। সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে টিকে থাকা একমাত্র ব্যবসায়ী হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশনের বরিশালের সভাপতি বাচ্চু মিয়া। তিনি এ বছর চামড়া সংগ্রহ করবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। আর নাসির কোরবানির সময় পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। এর বাইরে অন্য কেউ বর্তমানে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেই।
চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহিন বলেন, ‘গত কয়েক বছর চামড়ার দাম অব্যাহতভাবে কমে যাওয়া এবং পুঁজি হারিয়ে বরিশালের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ঢাকার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা ফেরত না পেয়ে পুঁজি সংকটে পড়েছি। তাই পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছি। শুধু পূর্বপুরুষের এবং ঢাকায় আড়তদারদের কাছে বিপুল পরিমাণ পাওনা টাকা উঠানোর জন্য ব্যবসাটা ধরে রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর চারজন কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এ বছরে তারা হয়তো চামড়া সংগ্রহ নাও করতে পারেন। তাদের কাছে বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে। ঢাকার আড়তদারদের কাছ থেকে যথাসময়ে টাকা না পাওয়ায় দেনার অঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
২০০৭ সাল থেকে শুধু বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ীরা ঢাকার ট্যানারি ও আড়তদারদের কাছে প্রায় চার কোটি টাকা পাবে।’
শহিদুর রহমান শাহিন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নগদ টাকায় পশুর চামড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠালে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারা ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করেন না। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া রপ্তানিতে ধসের অজুহাত দেখাচ্ছেন। ফলে সারা দেশের পশুর চামড়া সংগ্রহকারীরা একপ্রকার পথে বসেছেন। তারা ঠিকমতো বকেয়া পরিশোধ করলে বরিশালের ব্যবসায়ীদের পথে বসত না।’
এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘মিতালী হাইড অ্যান্ড স্কিন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া ছোট-বড় আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৮০-৯০ লাখ টাকা পাওনা আছে। বকেয়া টাকা পেলে এ বছরে কী পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। কোরবানিতে নাসিরও চামড়া সংগ্রহ করবেন কি না সন্দেহ রয়েছে। সবই নির্ভর করবে বকেয়া পরিশোধের ওপর।’
হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশন বরিশালের সভাপতি বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে পুঁজি সংকটে পড়েছেন বরিশালের ব্যবসায়ীরা। ঢাকার আড়তদাররা পাওনা টাকা পরিশোধ করলে হয়তো কয়েকজন চামড়া সংগ্রহের উদ্যোগ নিতেন। বর্তমান অবস্থায় বরিশালের কারও পক্ষেই নতুন করে এই ব্যবসায় অর্থ লগ্নী করা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় অবস্থিত ট্যানারি মালিক কিংবা আড়তদাররা মাঠপর্যায়ে এসে চামড়া সংগ্রহ করেন না। অথচ সরকার তাদের প্রণোদনা এবং ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকেন। মূলত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। চামড়া শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মাঠপর্যায়ের প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানাই।’