![খাতুনগঞ্জে কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না](uploads/2024/06/12/Khatunganj-1718158120.jpg)
বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের মাঝে আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখন ক্রেতা-ব্যবসায়ী কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। এমনকি ব্যাংক চেকের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। যে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি খাতুনগঞ্জ বাজারে প্রতারণার ঘটনা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে প্রতারণার ঘটনার পর খাতুনগঞ্জে এলাচি বেচাকেনা একেবারে কমে গেছে। এর ফলে এলাচির দাম কেজিতে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কমেছে।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে একসময় ব্যবসা হতো শুধু বিশ্বাসের ওপর। মুখের কথায় শত শত কোটি টাকার পণ্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো। আর্থিক প্রতারণার কারণে ধীরে ধীরে সেই আস্থায় সংকট তৈরি হয়। ১৯৮৬ সালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রথম প্রতারণার ঘটনা ঘটে। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৬৮টি আর্থিক প্রতারণার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৯ সালের পর থেকে এই ব্যবসাকেন্দ্রে আর কোনো প্রতারণার ঘটনা ঘটেনি।
তবে সম্প্রতি খাতুনগঞ্জ বাজারে প্রায় ৫০ কোটি আর্থিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে ব্যবসায়ীরা এখন চেক দিয়েও পণ্য বিক্রি করছে না। ক্রেতাকে বলা হচ্ছে, আগে ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে মূল্য পরিশোধ করতে। অপরদিকে ক্রেতারাও বিক্রেতাদের বিশ্বাস করতে পারছে না। তারা বলছে গুদামে পণ্য ঢুকলেই মূল্য পরিশোধ করা হবে। এসব কারণে ব্যবসায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে এ ধরনের পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। যেহেতু এলাচি নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। তাই এলাচি বেচাকেনা একেবারে কমে গেছে। যে কারণে এই পণ্যটির দামও কিছুটা নিম্নমুখী।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক খবরের কাগজকে বলেন, প্রতারণার ঘটনার প্রভাব এলাচির বাজারে পড়েছে। পাইকারিতে এতদিন যে এলাচির কেজি ৪১০০ টাকা ছিল তা ৩৬০০ টাকা হয়েছে। মধ্যম মানের এলাচির বাজার ছিল ৩২০০ থেকে ৩৩০০ টাকা। তা এখন ২৯০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকায় নেমে এসেছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, প্রতারণার ঘটনায় পাওনাদারদের দিয়ে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পলাতক নাজিমের কাছ থেকে কতজন ব্যবসায়ী কি পরিমাণ এলাচি ক্রয় করেছেন। এ ছাড়া নাজিম কার কার কাছে টাকা পায়, সব তথ্য বের করার চেষ্টা করবে কমিটি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চাক্তাইয়ে একই ধরনের কেলেঙ্কারি করে নাজিম, খাতুনগঞ্জে এসেছে বেশিদিন হয়নি। তারপরও ব্যবসায়ীরা তাকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা কেন দিল, তা বুঝতে পারছি না। এই ঘটনার পর খাতুনগঞ্জে এলাচি বেচাকেনা স্থবির হয়ে পড়েছে। যে কারণে এলাচির দাম কিছুটা কমেছে। অন্যান্য পণ্যের ওপরও এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে। এখন কেউ আর কাউকে বিশ্বাস করছে না।
নুর ট্রেডিংয়ের নাজিম কোথায় আত্মগোপনে রয়েছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বের করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছি।
খাতুনগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী ও চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আলমগীর পারভেজ জানান, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন থেকে ব্যবসায়ীদের বারবার এ ধরনের ফাঁদে না পড়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। তার পরেও যারা টাকা দেয়, তারা বিপদে পড়ে।