![পতনের বৃত্ত থেকে বের হচ্ছে পুঁজিবাজার](uploads/2024/06/24/pujibazar-logo-1719211250.jpg)
দেশের পুঁজিবাজারে ঈদের আগে টানা পতন চললেও ছুটির পর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আগের দুই কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল রবিবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে ঈদের পর লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসেই পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
তিন কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১২৮ পয়েন্ট।
গতকাল মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসই এবং সিএসইতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে।
এর আগে অব্যাহত দরপতনে ঈদের আগে এক মাসের মধ্যে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কমে যায়। আর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। বাজারে ক্রেতাসংকট প্রকট হয়ে ওঠে।
এ পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাজারে ক্রেতা বেড়েছে। অবশ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দানা বাঁধা আতঙ্ক এখনো কাটেনি। ফলে দাম বাড়ার পরই দাম কমার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।
রবিবার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।
এরপর একশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। এতে দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকা বড় হয়। লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম এক দিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিপুল পরিমাণ ক্রয় আদেশ এলেও বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
এদিকে দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান থাকলেও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সব কটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৫২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিচ হ্যাচারি, ওরিয়ন ইনফিউশন, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইউনিক হোটেল।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে স্যালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।
স্যালভো কেমিক্যালের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে ৪ টাকা ২০ পয়সা বা ১০ শতাংশ। তাতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। আর ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে বিডি মনোস্পুল পেপার।
গতকাল রবিবার দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সোনালী আঁশ, বিএসআরএম স্টিল, ওয়ালটন, রেনাটা, সোনালী পেপার, ওয়াটা কেমিক্যাল এবং আফতাব অটোমোবাইলস।
এদিন ডিএসইতে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড।
নর্দার্ন জুটের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড।
গতকাল রবিবার দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, জেএমআই সিরিঞ্জ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, এপেক্স ট্যানারি, খান ব্রাদার্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বিকন ফার্মা।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৫টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।