![শেষ সময়ে খরচ বাড়ছে ৩৪ শতাংশ : বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর দূষণরোধ ও সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প](uploads/2024/06/24/burigonga-1719206371.jpg)
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ জুন। এরি মধ্যে দুইবার সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও কাজ শেষ হয়নি। এখন তৃতীয়বার সংশোধন করে ৮৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ৩৪ শতাংশ। সময় বাড়ানো হচ্ছে আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর দূষণ রোধ সৌন্দর্য বর্ধনে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তৃতীয়বার সংশোধনের জন্য প্রকল্পটি আগামী একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর তীর ভূমির অবৈধ দখল রোধ করা, নদীর পানির দূষণ কমানো ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সরকার ২০১৮ সালের ২২ মে এই প্রকল্প প্রথমবারের মতো অনুমোদন দেয়। তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজের মধ্যে ধরা হয়েছিল নদীর তীর ভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রায় ৩৪ কিলোমিটার, নদীর তীর ভূমিতে কলামের ওপর ওয়াকওয়ে নির্মাণ, প্রায় ১৮ কিলোমিটার, তীর রক্ষার কাজ ২৪ হাজার ৬৮৫ মিটার ও সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে রক্ষার্থে বোলার্ড নির্মাণ ১০০টি। এসব কাজ দেখভালো করার জন্য পরামর্শক সেবা খাতে থোক প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়।
কিন্তু ঠিকমতো কাজ না হওয়ায় ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম সংশোধন করা হয়। তখন সময় বাড়ানো হয় এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকায় আনা হয়। এরপর আবারও সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করতে বলা হয়। কাজ দ্রুত শেষ করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। কিন্তু ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ।’ আবার সময় বাড়ানো হচ্ছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার জন্য সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সঙ্গে খরচও বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা অর্থাৎ মূল খরচ থেকে ৪২৮ কোটি টাকা বা ৩৪ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।
তৃতীয় দফা যাচাই-বাছাই করতে গত ডিসেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে তা সংশোধন করতে বলা হয়। সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে বাকি কাজ শেষ করে আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে রক্ষার্থে বোলার্ড নির্মাণ করা হবে। এটি নতুন করে সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া চুরি, ছিনতাই রোধে ওয়াকওয়েতে স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হবে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে অতিরিক্ত ৪টি বিশেষ ধরনের সিঁড়ি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী নদীবন্দর, মিরপুর বড়বাজার ও নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের বিপরীতে তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে।
এ পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে ২৫ কিলোমিটার। যা ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগকে করেছে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটনবান্ধব। ২০১৯ ও ২০২০ সাল টানা দুই বছরের অবৈধ দখলমুক্ত করা ও নদী রক্ষার শক্তিশালী অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার অবৈধ স্থাপনা। উদ্ধার হয়েছে নদীর দখল করা প্রায় সাড়ে ৩০০ একর জায়গা।
ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকায় শেষ হয়েছে তিনটি পরিবেশবান্ধব ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ যা নদী তীরে আসা মানুষকে সবুজ পরিবেশ পেতে সহায়তা করছে। সব মিলিয়ে রাজধানীর চারপাশের নদীতীর রক্ষার এই প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওয়াকওয়ের রুট হচ্ছে কামাড়পাড়া থেকে ধউর এবং ইস্টার্ন হাউসিং হতে গাবতলী-রায়েরবাজার-বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-নিতাইগঞ্জ খালঘাট থেকে প্রিমিয়ার সিমেন্ট এলাকায় ডিপিটিসি এলাকা, গোদনাইল এলাকা, সুলতানা কামাল ব্রিজ হতে কাঁচপুর ব্রিজ এলাকা, টঙ্গী নদীবন্দর এলাকা। প্রাথমিকভাবে ওয়াকওয়ের সঙ্গে তিনটি ইকোপার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, বসার বেঞ্চ, ফুডকোর্ট ও টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে।
ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পর নদীর চারপাশে বসবাসরত জনগণের জীবনযাত্রার মান ও পরিবেশগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর, সোনারগাঁও ও রূপগঞ্জ উপজেলা রয়েছে। ঢাকার সদরঘাট, উত্তরখান, তুরাগ, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচর, কোতোয়ালি ও মিরপুর রয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর সদর, নরসিংদীর ঘোড়াশাল ও মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম উপজেলা রয়েছে প্রকল্পের আওতায়।