![উৎপাদনে ফিরছে সাফকো স্পিনিং](uploads/2024/06/13/Safko-1718268060.jpg)
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেড কোম্পানির উৎপাদন মিলগুলো বন্ধের দুই মাস পরে পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মাসের জন্য উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কোম্পানিটি। কী কারণে উৎপাদন বন্ধ করেছে তা জানানো হয়নি। এরপর চলতি বছরের ১২ এপ্রিল থেকে আরও দুই মাস উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটি।
তবে বুধবার (১২ জুন) কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ থাকার মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানিটি ৩০ জুন পর্যন্ত কারখানা এবং উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সমস্যার কারণে সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেড উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কার্যক্রম গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন বন্ধের কারণ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে উৎপাদন বন্ধ হলেও মেইনটেন্যান্সসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু আছে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময় ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলসের সম্পদ নিলামে তোলা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ব্যাংক এশিয়ার কাছে ঋণ নেওয়ার জন্য বন্ধক ছিল কোম্পানিটির সম্পদ। ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটির সম্পদ নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটি এই বিষয়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ সময় জানানো হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। নিলামে কোম্পানিটির হবিগঞ্জে ৬১০ ডেসিমেল জমি এবং কারখানার অবকাঠামোর জন্য দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এ সময় ব্যাংক এশিয়ার এক কর্মকর্তা নিলামের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা তাদের যথেষ্ট সময় দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা ঋণ পরিশোধ করেনি। সে কারণেই আমরা তাদের সম্পদ নিলামে তুলছি।’ জানা যায়, ২০১৫ সালে ব্যাংক এশিয়ার করপোরেট শাখা থেকে ঋণের জন্য সম্পদ বন্ধক হিসাবে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত সুদসহ সাফকোর বকেয়া পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২২ কোটি টাকা। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে সাফকো স্পিনিংয়ের সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ১৪০ কোটি টাকার বেশি।
তবে সাফকোর স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব ইফতেখার আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা নিলামের বিজ্ঞপ্তি পাইনি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, নানা কারণে কোম্পানিটি ব্যবসায়িক চাপে রয়েছে। যে কারণে ঋণ খেলাপিতে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, কোম্পানিটির এই ঋণ পুনর্নির্ধারণের জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক এশিয়ার কাছে আবেদন করেছিল। এর আগে ২০১৯ সালে একবার ঋণ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্পিনিং মিলের রাজস্ব আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ কমে ৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক সংকট অব্যাহত ছিল। এই সময়ের মধ্যে রাজস্ব আয় ৮৬ শতাংশের বেশি কমে যায়।
সাফকো স্পিনিং মিলসের ২০২২-২০২৩ হিসাব বছরে লোকসান হয়েছে ৩৭ কোটি ২১ লাখ ৫৫ হাজার ১৭৫ টাকা। আর বছর শেষে পুঞ্জীভূত নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৯ টাকায়। ২০২২-২০২৩ হিসাব বছরে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫ টাকা ৫২ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরে অবশ্য কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ৩৩ পয়সা। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৯৪ পয়সায়। আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ২১ টাকা ৪৪ পয়সায়।
সাফকো তার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, মূল্যস্ফীতি, ডলারের ঘাটতি এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটসহ বেশ কয়েকটি কারণে এর উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া সুতার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এদিকে গত এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে স্থানীয় বাজারে সুতার দাম। ফলে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে সুতা বিক্রি করে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানিটির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির মূলধন সংকট রয়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া আর্থিক সমস্যার কারণে সাফকো স্পিনিং গত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি।
সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেডের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে উল্লেখিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৯২ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৫৫ পয়সা। অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে বা ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ টাকা ৩৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ২ টাকা ৫৫ পয়সা।