![চুয়াডাঙ্গায় দেড় হাজার কোটি টাকার পশু বেচাকেনার সম্ভাবনা](uploads/2024/06/15/coww-1718442920.jpg)
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশুর হাটগুলো। পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। গত বছর থেকে এবার পশুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি ক্রেতাদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে গেছে, জেলায় প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হতে পারে। জেলায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি চাহিদার বিপরীতে পশু রয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭৬টি, আলমডাঙ্গায় ৩ হাজার ৫৯৯, দামুড়হুদায় ১ হাজার ৯২৮ ও জীবননগরে ২ হাজার ৭১৪টি। এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৯টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১টি, মহিষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি, ভেড়া ৩ হাজার ৯২টি এবং অন্যান্য ৭টি পশু।
এ বছর কোরবানির জন্য জেলায় ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে চাহিদার সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি। যা থেকে প্রায় ৫২ হাজার ৯৫১টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫৪ হাজার ৮১৯টি, মহিষ ১৬০, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬ ও ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫টি।
চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে আলমডাঙ্গায়, ৭৯ হাজার ৭০৫টি। এ উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৫৯ হাজার ৭৭৯টি। যা থেকে ১৯ হাজার ৯২৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদরে ৪১ হাজার ৬২৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। অবিক্রীত থাকবে প্রায় ১০ হাজার ৪০৭টি পশু। দামুড়হুদায় ৪২ হাজার ৭৮টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ৫৫৯টি। যা থেকে উদ্বৃত্ত থাকবে ১০ হাজার ৫১৯টি পশু এবং জীবননগরে ৪৮ হাজার ৩৯৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩৬ হাজার ২৯৮টি। অবিক্রীত থাকবে প্রায় ১২ হাজার ৯৯টি পশু।
চুয়াডাঙ্গায় মোট ১১টি পশুহাটের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বসে ডুগডুগি ও শিয়ালমারিতে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এই দুই হাটে কয়েক হাজার পশু বেচাকেনা হয়। এসব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহুসংখ্যক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
জেলার অন্যতম দামুড়হুদার ডুগডুগি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা এসেছেন হাটে। হাটে পর্যাপ্তসংখ্যক পশু থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশ কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। যে কারণে এবারের কোরবানিতে বড় সাইজের গরুর চাহিদা একটু কম। তবে মাঝারি সাইজের গরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার ছোট গরু ও ছাগল কিনতে বেশি আগ্রহী।
স্থানীয় খামারিরা বলছেন, পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। তাই কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে।
ডুগডুগি পশুর হাটে গরু কিনতে আসা নোমান নামের এক ক্রেতা বলেন, প্রতি ঈদে এই হাট থেকেই পশু কিনে কোরবানি দেওয়া হয়। এবার তুলনামূলকভাবে গরুর দাম অনেকটাই বেশি। এ জন্য খাসি কিনতে হচ্ছে।
বগুড়া থেকে আসা ব্যাপারী সৈয়দ আলী জানান, ‘পশুখাদ্যের অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় পশুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি এই হাটে ২৪টি গরু নিয়ে এসেছি। অনেকেই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তারা গরু কিনছেন। গত সোমবারে আমার এ হাটে ৯টি গরু বিক্রি হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামীমুজ্জামান শামীম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলার হাটগুলোতে প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হওয়ার আশা করছি। খামারিরা যাতে লাভবান হতে পারেন, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলার চারটি বড় পশুহাটে আমাদের পক্ষ থেকে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। এখান থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই যেকোনো পরামর্শ নিতে পারবেন।’