![প্রাসঙ্গিক, শুদ্ধ ও যথার্থ উত্তর লিখবে](uploads/2024/02/07/1707285483.a3.jpg)
এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি আছে, তাই তোমাদের প্রস্তুতি এর মধ্যেই গুছিয়ে ফেলতে হবে। বেশি টেনশন না করে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস অনুযায়ী বোর্ড-বইয়ের অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়বে। লেখক-পরিচিতি থেকে শুরু করে অধ্যায়ের ভেতরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বাক্য কিংবা পঙ্ক্তি রয়েছে, সেগুলোর অর্থসহ ব্যাখ্যা পড়বে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে যেসব শব্দার্থ, টিকা ও পাঠ-পরিচিতি রয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে পড়বে। কেননা, জ্ঞান স্তর ও অনুধাবন স্তরের প্রশ্নগুলো সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট অধ্যায় থেকে আসবে। আর প্রয়োগ স্তর ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নগুলো উদ্দীপক ও বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় মিলে হবে। তাই এক্ষেত্রে ভালো করে প্রস্তুতি বইয়ের একটি অধ্যায় পড়ার পর ওই অধ্যায়ের দিক এবং যেসব চরিত্র রয়েছে সেগুলোর কার কী ভূমিকা রয়েছে, তা ভালোভাবে বুঝে খাতায় না দেখে লেখার চর্চা করবে।
প্রতিটি উদ্দীপকে চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তরের প্রশ্ন থাকে। তোমাদের সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার।
(ক) জ্ঞানমূলক: পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় বা গল্প ও প্রবন্ধ এবং কবিতার ভেতর থেকে যে বাক্যগুলো এক কথায় প্রশ্নোত্তর হয় সেখান থেকে, শব্দার্থ থেকে এবং লেখক-পরিচিতি থেকে জ্ঞান স্তরের প্রশ্ন হবে। এ স্তরের মান ১। পরীক্ষার্থী শুধু একটি শব্দ দিয়ে জ্ঞান স্তরের আক্ষরিক অর্থটির উত্তর লিখবে; তবে উত্তর একটি বাক্যে লেখাই উত্তম।
(খ) অনুধাবনমূলক: প্রশ্নপত্রে অনুধাবন স্তরের মান ২ লেখা থাকলেও তোমরা দুটি অংশে উত্তর লিখবে। অর্থাৎ প্রথম অংশে জ্ঞান স্তরের ১ নম্বরের জন্য একটি বাক্য ভাবার্থে এবং দ্বিতীয় অংশে অনুধাবন স্তরের ১ নম্বরের জন্য বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে দুটি থেকে চারটি বাক্যের মধ্যে উত্তর লিখবে। এক্ষেত্রে কেউ ইচ্ছা করলে অনুধাবন অংশটি আগেও লিখতে পারে এবং জ্ঞান স্তরের অংশটি পরে লিখতে পারবে।
(গ) প্রয়োগমূলক: প্রয়োগ স্তরের মান-বণ্টন ৩ (জ্ঞান স্তর=১, অনুধাবন স্তর=১ ও প্রয়োগ স্তর=১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি লিখবে বই ও উদ্দীপকের ভাবানুবাদে, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে এবং প্রয়োগ স্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে। তবে উদ্দীপকের কথা হুবহু লিখবে না, নিজের ভাষায় বর্ণনা করবে। শেষে প্রয়োগের জ্ঞানটি অর্থাৎ বই ও উদ্দীপক উভয় জায়গাতে যে দিকটি ফুটে উঠেছে সেটা সংক্ষেপে লিখবে। এভাবে তিনটি স্তর তিনটি প্যারায় লেখা উত্তম।
(ঘ) উচ্চতর দক্ষতামূলক: উচ্চতর দক্ষতা স্তরের মান-বণ্টন ৪ (জ্ঞান স্তর = ১, অনুধাবন স্তর = ১, প্রয়োগ স্তর = ১ ও উচ্চতর দক্ষতা = ১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি লিখবে সিদ্ধান্তের ভাব অনুযায়ী, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে, প্রয়োগ স্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরটি লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ এবং উদ্দীপকের অংশের সমন্বয় সাধন করে এবং জ্ঞান স্তরে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেবে তা পুনরাবৃত্তি করে। এ প্রশ্নের উত্তর চারটি প্যারায় লিখলে ভালো। (ঘ) নম্বর প্রশ্নোত্তরের জ্ঞান স্তরের উত্তরটিও খুবই চিন্তা করে লিখবে। কেননা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল লিখলে ওই প্রশ্নের অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতার দক্ষতা স্তরের ভুল উত্তরের প্রভাব পড়বে। তখন হয়তো পরীক্ষক ওই প্রশ্নোত্তরে কম নম্বর এমনকি শূন্য নম্বর দিতে পারেন। (ঘ) নম্বর প্রশ্নে উচ্চতর দক্ষতা স্তরের মধ্যে জ্ঞানের উত্তরের সঙ্গে কারণটি লেখা উত্তম। আর শেষ প্যারায় প্রাসঙ্গিক নৈতিকতার কথা এক বাক্যে লিখলে ভালো।
২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নে গদ্য, কবিতা এবং সহপাঠ অংশে উপন্যাস ও নাটক- এ চারটি বিভাগ থেকে মোট ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। গদ্য অংশ থেকে ন্যূনতম দুটি, কবিতা অংশ থেকে ন্যূনতম দুটি, উপন্যাস অংশ থেকে ন্যূনতম একটি ও নাটক অংশ থেকে ন্যূনতম একটিসহ মোট সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তাই একজন পরীক্ষার্থীকে ৭০ নম্বরের পূর্ণ উত্তরে একটি উদ্দীপকের চারটি প্রশ্নোত্তরের (ক, খ, গ এবং ঘ) জন্য প্রায় ৩৫টি বাক্যে গড়ে ২০-২২ মিনিট সময় ভাগ করে নিলে ভালো; অন্যথায় বাকি উত্তরগুলো ঠিকভাবে লিখে রিভিশন দেওয়ার সুযোগ পাবে না। সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় (ক, খ, গ ও শেষে ঘ নম্বর প্রশ্নের উত্তর) ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করবে।
বানানের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবে। বিশেষ করে (ক) নম্বর প্রশ্নের জ্ঞান স্তরের উত্তরে বানান ভুল হলে সাধারণত নম্বর দেওয়া হয় না। যেকোনো কবিতা/ প্রবন্ধ/গল্প/উপন্যাস/নাটকের নাম লিখতে হলে অবশ্যই উদ্ধরণ চিহ্ন (যেমন- ‘বহিপীর’ নাটক) দেবে। অন্যান্য বিরামচিহ্নের ব্যাপারেও ঠিকভাবে লক্ষ রাখবে। কেননা শুদ্ধভাবে বিরামচিহ্নের ব্যবহার না করলে অনেক সময় অর্থ পরিবর্তন হতে পারে।
পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়া থাকলে বহুনির্বাচনি প্রশ্নে সঠিক উত্তর নির্বাচন করতে তেমন সমস্যা হবে না। তবে বহুপদী সমাপ্তিসূচক ও অভিন্ন তথ্যভিত্তিক অংশে অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরে একাধিক অপশন থাকায় একটু কঠিন মনে হতে পারে; অবশ্য ঠান্ডা মাথায় ভেবে উত্তর করলে তেমন কোনো কঠিন মনেই হবে না।
২০২৪ সালে বহুনির্বাচনি প্রশ্নপত্রে গদ্যাংশ (১২টি), কবিতাংশ (১২টি) ও সহপাঠ (উপন্যাস ৩টি ও নাটক ৩টি) থেকে মোট ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে। এই ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থেকে তোমরা ৩০টির উত্তর ওএমআরে বৃত্ত ভরাট করবে। আর বহুনির্বাচনি পরীক্ষার সময় একটি প্রশ্নোত্তরে কখনোই একাধিক বৃত্ত ভরাট করবে না, ফ্লুয়িড ব্যবহার করবে না কিংবা ব্লেড দিয়ে ভুল উত্তরটির আস্তরণ তুলে ওএমআরে নতুন বৃত্ত ভরাট করবে না এবং ভাঁজ করবে না।
পরিশেষে তোমাদের পাঠ্যবই গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে এবং সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কেও সঠিক নিয়ম জানতে হবে। পরীক্ষায় যেকোনো উদ্দীপক/দৃশ্যকল্প এবং প্রশ্ন দেওয়া হোক না কেন, পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের শিখনফল ভালোভাবে আত্মস্থ করা থাকলে মানসম্মত উত্তর দেওয়া তোমাদের পক্ষে খুব সহজ হবে।
পরীক্ষার খাতায় হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করবে। প্রশ্নের শুদ্ধ ও যথার্থভাবে প্রাসঙ্গিক উত্তর লিখবে তাহলে ভালো নম্এর পাবে। উত্তর লেখা শেষে রিভিশন দেবে। তাহলেই তোমরা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারবে।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা),
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা
জাহ্নবী