![যুদ্ধংদেহী পৃথিবীতে চলুন ফিরে যাই বঙ্গবন্ধুর কাছে : প্রধান বিচারপতি](uploads/2024/06/26/Untitled-1719415845.jpg)
পৃথিবীর এক প্রান্ত যখন ভোগবিলাসের আয়োজনে মত্ত, অন্য প্রান্ত তখন করপোরেট পুঁজির অসম সঞ্চালনে হিমশিম খাচ্ছে অর্থনীতির জটিল ঘূর্ণাবর্তে। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পৃথিবী দেখছে নিরপরাধ শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ; নিরন্ন মানুষের হাহাকার ছবি আঁকছে দুর্ভিক্ষের। সমকালীন প্রেক্ষাপটে মানবিকতা, অর্থনীতির জোরালো প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বুধবার (২৬ জুন) শহিদজননী জাহানারা ইমামের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা’, আলোচনা সভা এবং ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি। তবে দাপ্তরিক প্রয়োজনে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার অধস্তন আদালতগুলো পরিদর্শনের কার্যক্রম গ্রহণ করায় তিনি শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে পারেননি। তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নির্মূল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতায়’ প্রধান বিচারপতির বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন এবং ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’।
একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘১০ এপ্রিল, ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কীয় প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, যারা জঘন্য যুদ্ধাপরাধী আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তাদের বিচার হবে। এই যে ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা এটাকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম মূলনীতি বললে অত্যুক্তি হবে না।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য শহিদজননী যে মশাল জ্বালিয়েছিলেন, আমরা পরবর্তী প্রজন্ম সেটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
নির্মূল কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ শহিদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা বাঙালির জন্য এবং বিশ্বের সব শোষিত মানুষের জন্য, এটিই তার দর্শন। তিনি তার মানবিক আদর্শের আদলেই দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। সেই আদর্শকে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।’
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘অপরাধীরা ব্যাংকে সঞ্চিত যাবতীয় অর্থ নিয়ে নিরাপদে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, তাদের ব্যাংক লেনদেন বন্ধ করা হয়- এটা একটা তামাশায় পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে দুদকও তাদের গাফিলতির দায় এড়াতে পারে না। কারা বেনজির ও মতিউরের মতো ভয়ংকর দুর্নীতিবাজদের নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ করতে দিয়েছে, এরও তদন্ত হওয়া দরকার।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রতি বছরের মতো এ বছরও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদান করা হয়। এ বছর ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী নাগরিক আন্দোলনের পুরোগামী নেতা বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম এবং সংগঠন হিসেবে ‘এম্পাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অব দ্য কমন পিপল’ (এলকপ)-কে জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক প্রদান করা হয়। এর আগে গতকাল সকাল ৮টায় মিরপুরে শহিদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নির্মূল কমিটির নেতারা।