![রেইনকোট গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর HSC বাংলা প্রথম পত্র](uploads/2024/05/12/HSC-Bangla-1715498958.jpg)
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-৫. ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদা যে কারণে বাড়ি পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে গিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পাশের ফ্ল্যাটের গোলগাল মুখের মহিলা নুরুল হুদার স্ত্রীকে তার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে তা শুনেই ভয়ে নুরুল হুদা বাড়ি পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে লেগে গেলেন।
‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টু নুরুল হুদার শ্যালক। মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে নুরুল হুদা ভীতু প্রকৃতির সাধারণ মানুষ। তিনি কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নন। মিন্টুর ব্যাপারে তিনি সবসময়ই তটস্থ থাকেন। মিন্টুকে নিয়ে কেউ বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালেই ভয় পেয়ে যান। তাই পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা যখন নুরুল হুদার স্ত্রীর কাছে ছোট ভাইয়ের খবর জানতে চান, তখন তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দ্রুত নিবাস পরিবর্তনের জন্য অস্থির হয়ে যান। ভয় ছিল পাকিস্তান মিলিটারি সব জেনে ফেলে কি না!
প্রশ্ন-৬. ‘আব্বু ছোট মামা হয়েছে।’- কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইনকোট পরার পর নুরুল হুদাকে দেখতে মিন্টুর মতো লাগায় এ প্রসঙ্গে তার ছোট মেয়ে এ উক্তিটি করেছে।
‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার সন্দেহে নুরুল হুদাকে সেনাক্যাম্পে ডেকে পাঠানো হয়। বৃষ্টির মধ্যে বাইরে যাচ্ছেন দেখে নুরুল হুদার স্ত্রী তাকে মিন্টুর রেইনকোট পরিয়ে দেন। নুরুল হুদা বিপদ ও ঝুঁকি এড়িয়ে চলা একজন সাধারণ মানুষ। রেইনকোট গায়ে দেওয়ার পর তার মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয় যে, তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো দেখাচ্ছে। ছোট মেয়েও যখন এ কথা বলে, তখন তিনি আরও শঙ্কিত হয়ে পড়েন। মামার রেইনকোট বাবা গায়ে দেওয়ায় মেয়ের মনে এমন ভাবনা এসেছিল; কিন্তু তাতেই নুরুল হুদা ভয় পেয়ে যান।
প্রশ্ন-৭. ‘ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুনরূপে তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খান।’- কে, কেন ভ্যাবাচ্যাকা খায়?
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদা শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইনকোট পরায় পাকিস্তানি সেনারা তাকেও মুক্তিযোদ্ধা ভেবে আটক করতে পারে ভেবে তিনি আতঙ্কিত হয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খান।
‘রেইনকোট’ গল্পের প্রধান চরিত্র কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা ভীতু প্রকৃতির মানুষ। কলেজের প্রিন্সিপালের নির্দেশে বৃষ্টির মাঝেও কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন তিনি। বৃষ্টির কারণে মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরায় তাকেও মুক্তিযোদ্ধার মতোই লাগছিল। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে মুক্তিযোদ্ধা ভেবে গ্রেপ্তার করতে পারে, সন্দেহ করতে পারে। এসব ভেবে তিনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুন রূপ দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান, দুশ্চিন্তায় পড়েন। তার ভীরুতা, বাস্তববিমুখতা তাকে প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণায় কাবু করেছিল।
প্রশ্ন-৮. ‘টুপির তেজ কি পানিতেও লাগল নাকি?’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইনকোট পরে ভীতু নুরুল হুদার মধ্যে যে সাহসের সঞ্চার ঘটেছিল, সে প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে।
‘রেইনকোট’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নুরুল হুদা ভীতু প্রকৃতির মানুষ। শ্যালক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর ভয়ে সে চারবার বাড়ি বদল করেছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়ে সর্বদা ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। একদিন তিনি শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট পরে সাহসী হয়ে ওঠেন। চেতনায় অনুভব করেন, মুক্তিযোদ্ধার উষ্ণ অনুভূতি। একজন মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট কীভাবে মানুষের মধ্যে সাহস, উষ্ণতা ও দেশপ্রেমের সঞ্চার করে- তারই ব্যঞ্জনাময় ও প্রতীকী প্রকাশ ঘটেছে প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কলি