পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদ ক্রোকি (অ্যাটাচ) পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ঢাকা, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজার ও মাদারীপুরের সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসমূহে এই পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও শেয়ার অবরুদ্ধ রাখতে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ মে) দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার ও রবিবার দুই দফায় বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ২০২টি দলিলে থাকা ৪টি ফ্ল্যাট ও ৬২১ বিঘা জমি ক্রোক এবং ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ৪টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ রাখতে আদেশ দিয়েছেন আদালত। সেই আদেশ অনুযায়ী সোমবার ডাকযোগে ক্রোকি পরোয়ানা ও নোটিশ জারি করা হয়েছে।’
সোমবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতের সেরেস্তাদারের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত শতাধিক ক্রোকি পরোয়ানা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ রাখার নোটিশ সরকারি ডাকযোগে জারি করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকার গুলশান, সাভার, গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, মাদারীপুর সদর, মাদারীপুরের রাজৈর, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সাব রেজিস্ট্রারদের কাছে এসব পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ রাখতে সিটি ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, আইএফআইসি, প্রিমিয়ার, ইউনিয়ন, সাউথইস্ট, আইবিবিএল, এবি, ইবিএল ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
একইভাবে শান্তা ও লংকা বাংলাসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
শেয়ার মার্কেটে থাকা সব শেয়ার অবরুদ্ধ রাখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ড্রাগন সিকিউরিটিজ ও ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
একইভাবে বেনজীর ও তার পরিবারের সব ব্যবসায়ীক শেয়ার অবরুদ্ধ রাখতে ১৫টি কোম্পানিকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
কোম্পানিগুলো হলো- নর্থ চিকস রংপুর, নর্দার্ন বিজনেস অ্যাসোসিয়েট, সেইন্ট পিটার্স স্কুল অব লন্ডন, স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলা টি ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি, ডেল্টা আর্টিসান, ইস্ট ভ্যালি ডেইরি, গ্রিন মাল্টিমিডিয়া, কমিউনিটি ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন, পুলিশ ট্রাস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট, পুলিশ ট্রাস্ট সার্ভিস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট, পুলিশ ট্রাস্ট কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ।
শুধু তাই নয়, বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদের ক্রোকি পরোয়ানা ও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ রেখে আদালতের দেওয়া আদেশ গেজেটে প্রকাশ করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
একই আদেশ বিজ্ঞপ্তি আকারে পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিবের কাছে।
ক্রোকের সম্পত্তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করতে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালককেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারে দুদক
অনুসন্ধানে সহযোগিতা না করলে বা পালিয়ে বিদেশ যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন দুদকের সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘অভিযোগসংশ্লিষ্টরা অনুসন্ধানে অসহযোগিতা বা পালিয়ে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করলে কিংবা অন্য কোনো কারণে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা চাইলে অভিযোগসংশ্লিষ্টদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ চাইতে পারেন। এ জন্য ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে আবেদন করতে হবে। তবে দুদক কর্মকর্তারা এখনই এ ধরনের কোনো প্রস্তুতি নিয়েছেন কি না জানা নেই।’
বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম কাজ করছেন। অপর দুই সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু অনুসন্ধানকাজে অভিযোগসংশ্লিষ্টদের মনোভাব এখনো সহযোগিতাপূর্ণ এবং তারা সহসাই দেশ ছেড়ে পালাবেন এমন কোনো আশঙ্কা তৈরি হয়নি। তাই তাদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতি তৈরি হলে যেকোনো সময় এ আবেদন করা হবে।