![আজিজ ও তার ভাইদের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্তের অপেক্ষায় দুদক](uploads/2024/06/16/aziz-1718530912.jpg)
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তার দুই ভাইয়ের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে এখনো মাঠে কাজ করছে দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট। ঈদের পর তাদেরও প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হতে পারে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দ্রুত অনুসন্ধান শুরু করতে দুদককে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। আগামী ২৯ জুনের মধ্যে অনুসন্ধান শুরু না হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন নোটিশকারী আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।
তিনি শনিবার (১৫ জুন) খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান ও তার দুই ভাইয়ের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করতে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে ৯ জুন আইনি নোটিশ জারি করা হয়েছে। এরপর ১১ জুন আরেকটি আবেদন করা হয়েছে। যেখানে গণমাধ্যমে গত ৫ মে প্রকাশিত ‘জেনারেল আজিজের তেলেসমাতি’ শিরোনামে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করতে দুদককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর পরও দুদক যদি অনুসন্ধান শুরু না করে, সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টে রিট করা হবে। ঈদের ছুটি ও অবকাশ (ভ্যাকেশন) শেষে আগামী ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্ট খুলবে। ফলে ৩০ জুন কিংবা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের যে কোনো দিন এই রিট করা হবে।’
দুদকের একটি সূত্র জানায়, আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো যাচাই করেছে অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)। যাবাকের সুপারিশে পাসপোর্ট ও এনআইডি জালিয়াতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে তদন্তের নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী দুদক থেকে ইসি ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইসি ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর তদন্তও শুরু করে দিয়েছে। সেসব তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ ও তার দুই ভাইয়ের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বা জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে অনুসন্ধান শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দুদক। এছাড়া, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদনে আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ বা দুদকের তফসিলভুক্ত কোনো অপরাধের তথ্য পাওয়া গেলেও অনুসন্ধান শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর সেনাপ্রধান ছিলেন আজিজ আহমেদ। ২০১২ সাল থেকে চার বছর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেনাপ্রধান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে অবসরের পর গত ২০ মে ‘তাৎপর্যপূর্ণ দুর্নীতিতে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ দুটি এবং আরেক ভাই আনিস একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তাদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন আরেক ভাই জোসেফ। এ মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পান।