জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যসহ তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৫ জনের স্থাবর সম্পদ ক্রোক (অ্যাটাচ) এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
ফয়সাল ছাড়াও আদেশের আওতায় আছেন তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন, আফতাব আলী, মমতাজ বেগম, আহমেদ আলী, ফারহানা আক্তার, কাজী খালিদ হাসান, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুন, শেখ নাসির উদ্দিন, রওশন আরা খাতুন, ফারহানা আফরোজ, মাহফুজা আক্তার ঊর্মি ও ময়নুল হাসান।
আদেশে ফয়সাল, স্ত্রী আফসানা জেসমিনসহ ১৫ জনের মোট ৮৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা স্থিতি রয়েছে। ফয়সাল ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ সাতজনের নামে ১৫টি সঞ্চয়পত্র ফ্রিজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া তাদের নামে থাকা সব স্থাবর সম্পদ ক্রোকের নিদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে থাকা রাজধানীর ভাটারায় ৫ কাঠা করে দুটি ও পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে একটি প্লট এবং চারটি ব্যাংকে মোট ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রোক ও ফ্রিজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফয়সালের নামে শান্তিনগরে (হোল্ডিং-১, ফ্ল্যাট- বি-১১) বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৩ থেকে ৬ কাঠার চারটি প্লট এবং দুইটি ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রোক ও ফ্রিজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আফতাব আলীর নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ। এর মধ্যে রয়েছে দুইটি ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। আহমেদ আলীর নামে কিনেছেন সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় কার পার্কিংসহ ৩ হাজার স্কয়ার ফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, মমতাজ বেগমের নামে খিলগাঁওয়ে রয়েছে ১০ কাঠার প্লট। এগুলো সবই ক্রোক ও ফ্রিজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চলমান আছে। আরও তথ্য পাওয়া গেলে ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ চাইবে দুদক।
অবৈধ উপায়ে অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফয়সালের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনুসন্ধান শুরু করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ। অনুসন্ধান চলাকালে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তার স্ত্রী জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পে তাদের ২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ কাঠার প্লট বিক্রি করেন। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট অর্থসম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করতে আদালতে আবেদন করা হয়।
আবেদনে বলা হয়, অপরাধলব্ধ আয়ের অভিযোগসংশ্লিষ্ট বর্ণিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ মানিলন্ডারিং আইনের ১৪ ধারা মতে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য ব্যক্তির নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধে ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রাখা সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) এবং স্থাবর সম্পদ ক্রোক (অ্যাটাচ) করা একান্ত প্রয়োজন।
শুনানিতে আবেদনের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন দুদকের প্যানেল আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল।
দুদক সূত্র বলছে, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় তার নিজ নামে অনেকগুলো এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদপূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ আনয়ন করে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরে এসব টাকা এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী ও শেখ নাসির উদ্দিনসহ অন্য ব্যক্তিদের নামে ৭০০-এর বেশি অ্যাকাউন্ট খুলে গচ্ছিত রেখেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (কর) হিসেবে কর্মরত আছেন। চাকরিতে যোগদানের পর এ পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন।