![কালো মাথা বেনেবউ](uploads/2024/05/11/bird-1715400672.jpg)
‘দেখেছি হলুদ পাখি বহুক্ষণ থাকে চুপ করে,
নির্জন আমের ডালে দুলে যায়-দুলে যায়-বাতাসের সাথে বহুক্ষণ;’
-জীবনানন্দ দাশ
মেঘশিরীষগাছে নতুন পাতা এসেছে। শাখা-প্রশাখার রং ঢেকে গেছে পাতার রঙে। তখন গ্রামবাংলায় পাখিদের বাসা বানানোর সময়। পাকড়া শালিক, লাল ঘুঘু, বুলবুলি, ছাতারে, হাঁড়িচাঁচা নিয়মিত মেঘশিরীষের ডালে ডাকাডাকি করছে। বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজছে ঘুঘু।
এমন দিনে একজোড়া হলুদ পাখি উড়ে এল। ঠোঁটে তাদের হলুদ নরম খড়। মেঘশিরীষের পাতি ডালে ঘনপাতার ভেতরে ওরা চলে গেল। ওই ডালেই ওদের বাসা। দুপুরের রোদ শেষে বিকেলের সময় শুরু হলো। মেঘশিরীষ বা রেইনট্রি গাছের পাতাগুলো তখন লজ্জাবতী পাতার মতো গুটিয়ে নিল ধীরে ধীরে ঝিরিঝিরি বাতাসের ছোঁয়ায়। মগডালে বেনেবউদের কাপের মতো সুন্দর বাসাটি দেখা গেল। ইংরেজি ‘ভি’ এর মতো ছড়ানো দুটি ডালের বিভাজিত অংশে এই বাসাটি। নরম খড়, ঘাস, গাছের তন্তু ও মাকড়সার জাল দিয়ে বাসাটি বানানো হয়েছে।
এ পাখিরা সাধারণত উঁচু গাছের মগডালেই বাসা বানায়। বাসা বানানোর জন্য মেঘশিরীষ ও বড় আমগাছ তাদের বেশ পছন্দ। দেখতে দেখতে এক দিন তাদের বাসায় ছানা এল। কয়েক সপ্তাহ ছানাদের কিচিরমিচির শুনেছি। উভয় পাখি ছানাদের খাবার খাওয়াত পালা করে। এক দিন ছানারা বাসা ছাড়ল এবং উড়ে চলে গেল কোথাও।
কালো মাথা বেনেবউ গ্রামবাংলায় হলদে পাখি নামে বহুল পরিচিত। লোকে এদের কুটুমপাখিও বলে। এ পাখি ডাকলে বাড়িতে মেহমান আসবে, এমন ধারণা বরিশালের গ্রামে গ্রামে বহুল প্রচলিত। আমরাও ছেলেবেলায় এমটি মনে করতাম। কালো মাথা বেনেবউ পালকের উজ্জ্বল হলুদ রঙের জন্য খুব সহজেই মানুষের চোখে পড়ে। সাধারণত একাকী এবং জোড়ায় চলে। কণ্ঠ সুমধুর। প্রজনন মৌসুমে তাদের গান শোনা যায়। বেশ পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পাখি।
তাদের চলাফেরায় এক রকম নীরবতা, লাজুকতা এবং সৌন্দর্য আছে। আছে দারুণ ব্যক্তিত্ববোধ। যে কারণে এ পাখিটি আমার মন জয় করে নিয়েছে। মানুষকে মোটেও বিরক্ত করে না। গাছপালাময় মানুষের বসতির কাছেই থাকতে ভালোবাসে। শহরের পার্কেও তাদের দেখা যায়। এদের প্রধান খাদ্য হলো পাকা ফল, কীটপতঙ্গ ও ফুলের মধু। আম, জাম, পেঁপে, তেলাকুচা ফল পাকলে বেনেবউরা নিয়মিত সেখানে আসে।
সৌরভ মাহমুদ: প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার
[email protected]