![বন খঞ্জন বিরল পরিযায়ী](uploads/2024/05/25/Bird-1716621473.jpg)
বসন্ত এলে বাংলায় আবাসিক পাখ-পাখালির কলরব বাড়তে থাকে। গ্রীষ্মের তপ্ত দিনে পাখিদের গানের রেশ আরও বেড়ে যায়। গ্রীষ্মের সময় বাংলার বনেবাদাড়ে কয়েক প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। তার মধ্যে বনতলে চুপচাপ একা একা লেজ দুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো একটি পাখি হলো বন খঞ্জন।
বাংলাদেশে ধলাভ্রু খঞ্জন বাদে সব প্রজাতিই পরিযায়ী এবং তাদের আগমন ঘটে শীতে। কেবল বন খঞ্জনই গ্রীষ্মে শরতের সময় বাংলাদেশে দেখা যায়। তবে পাখিটি খুব সহজেই চোখে পড়ে না। ১০ বছর আগে বন খঞ্জন দেখার একমাত্র জায়গা ছিল ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের একটি ঘন গাছপালাময় ও ছায়া-শীতল অংশ। কেবল সেখানে গিয়ে লুকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলে বনতলে একটি বা দুটি বন খঞ্জন দেখা যেত। তবে কোনোরকমভাবে মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই উড়ে গিয়ে গাছের ডালে বসত। গ্রীষ্মে কয়েকবার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে বন খঞ্জন দেখতে গিয়ে মাত্র একবারই তার দেখা পেয়েছিলাম।
দেখলাম এরা প্রায়ই গাছের ডাল থেকে উড়ে গিয়ে অন্য গাছের ডাল বরাবর পোকামাকড় ধরে। বনের মধ্যে খাড়া শাখায় আরোহণ করে এবং অনুভূমিক শাখা বরাবর দ্রুত উড়তে পারে। বনের মধ্যেকার হাঁটার পথেও খাবার খুঁজে বেড়ায়।
বাংলায় এমন সতর্ক খঞ্জন একটিও নেই। অন্যসব খঞ্জন মানুষের প্রায় কাছাকাছি এসে লেজ দুলিয়ে হেঁটে চলে বেড়ায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বন খঞ্জনের দেখা পেয়েছি ২০১৮ সালে সোনাদিয়া দ্বীপের ঝাউবনে, শরতের সময়। সংখ্যায় ছিল গোটা বিশেক। সম্ভবত কয়েক দিন আগেই তারা ওই ঝাউবনে এসেছিল। সম্ভবত সোনাদিয়া দ্বীপের ঝাউবন তাদের গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাবিরতির স্থান অথবা একত্র হওয়ার জায়গা ছিল। এখান থেকে তাদের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার কথা ছিল হয়তো। ঝাউবনের তলে কয়েক দিন বন খঞ্জনদের হেঁটে হেঁটে খাবার সংগ্রহ করতে দেখেছি। বনের ওই অংশে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। যে কারণে পাখিগুলো অনেকটাই নিরাপদ মনে করে বনতল চষে বেড়াত খাবারের জন্য।
বন খঞ্জন বাংলাদেশে বিরল পরিযায়ী পাখি। দেশের প্রায় সব বিভাগের বনে দেখা যায়। বিশেষ করে পাতাঝরা বন, ঝাউবন, দেবদারু বন ও বাঁশবনের কাছে বিচরণ করে। প্রধানত একা, কদাচিৎ জোড়ায় এবং ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। ছায়াময় বনতল তাদের পছন্দের আবাস। পিঙ্ক পিঙ্ক সুরে গান গায় কেবল ওড়ার সময়। মাকড়সা, পিঁপড়ে ও অন্যান্য পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য। সারা পৃথিবীতে বন খঞ্জনের কেবল একটি প্রজাতি আছে। তাই পৃথিবীর একমাত্র বন খঞ্জন নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি বটে!