ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

রক্তক্ষরা ব্লিডিং হার্ট ফুল

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১০:৩৯ এএম
আপডেট: ১৭ মে ২০২৪, ১০:৪০ এএম
রক্তক্ষরা ব্লিডিং হার্ট ফুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলের সামনে ফোটা ব্লিডিং হার্ট ফুল। ছবি: লেখক

বৈশাখের এক নম্র সকাল। রোদের তাত তখনো বাড়েনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের পথে হাঁটছি। চারদিকে তাকিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি কোথায় কোন গাছে আজ কী ফুল ফুটল। হঠাৎ পেয়ে গেলাম জাপানি হানিসাকল আর ব্লিডিং হার্ট গাছ। দুটোই লতানো। ভূশায়িত হয়ে কিছুটা মাথা তুলে গাছ দুটো আকাশ দেখার চেষ্টা করছে। 

আশপাশের বিশাল মেহগনি আর নাগলিঙ্গম গাছের ছায়ায় ওরা আচ্ছন্ন। সকাল বলে তবু তেরছা হয়ে একমুঠো রোদ্দুর এসে পড়েছে গাছগুলোর গায়ে। ছোট গাছের বড় গাছদের কাছ থেকে যেন এ গাছের চলছে করুণা ভিক্ষা- দাও আলো, দাও জীবন হে আমার বয়োজ্যেষ্ঠ। গাছগুলোকে দেখে বড় করুণা হলো। বেঁচে থাকার এক দুর্মর বাসনা নিয়ে ওরা টিকে আছে আসলে সেখানকার মালীদের যত্নে। এই যত্নটুকুর জন্যই হয়তো ওরা উজাড় করে ফুল ফোটাচ্ছে, আনন্দ দিচ্ছে মানুষকে।   

এত সব প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও সে গাছকে দেখে মনে হয়, ওদের যেন কোনো বেদনা নেই, কষ্ট নেই। কোনো পুষ্পপ্রেমিক হয়তো তাকে কোনো দিন দেয়নি কোনো ব্যথার ছোঁয়া। বরং তার লতানো শরীরে ঝুলে থাকা দুলের মতো গোছা গোছা ফুলের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছি আদরের হাত। তবু সে যেন এক দুঃখী রাজকন্যা, তার বুক চিরে ঝরে রক্তের ফোঁটার মতো খুদে খুদে পাঁচ পাপড়ির রক্তলাল ফুল। এ জন্যই বোধ হয় ওর ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে ব্লিডিং হার্ট। বাংলা কিরণময়ী নামটা ভারতীয়, তবে নামটা কিরণময়ী না হয়ে করুণাময়ী হলে মনে বেশি মানাত। 

বাংলাদেশে এর বাংলা নামকরণ করা হয়েছে হৃদয়হারা বা হৃদয়ক্ষরা। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Clerodendrum thomsoniae, গোত্র ভার্বেনেসী। অর্থাৎ এ গাছ ভাঁটফুলের সহোদর। এ ফুলের এরূপ উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামকরণের অনুরোধ করেন নাইজেরিয়ার এক মিশনারি চিকিৎসক রেভারেন্ড উইলিয়াম থমসন, তার প্রয়াত স্ত্রীর নামের সম্মানে, তাই এর নামাংশ দেওয়া হয় থমসনি, ক্লিরোডেনড্রাম গ্রিক শব্দের, যার অর্থ চান্স ট্রি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ ফুলের সৌন্দর্যের কারণে ইংরেজি নাম ছিল বিউটি বুশ। 

এটি আমাদের দেশের গাছ না, গাছের উৎপত্তিস্থল পশ্চিম আফ্রিকা। সত্যিই এমন অবিশ্বাস্য এ ফুলের গড়ন। এ ফুলটি আকৃতিতে লণ্ঠনের মতো। প্রতিটি ফুলের বৃতিগুলোর সুচালো ডগা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে একটি লাল ফুল, ঝুলতে থাকে নিচমুখো হয়ে। ফুলের মধ্যে কখনোবা উঁকি দেয় সাদা রঙের পুংকেশর। সবুজ হৃৎপিণ্ডাকার পাতা, লতানো স্বভাব আর থোকাভরা ফুল সত্যি বিরল। তবে কেউ চাইলে লতার আগাগুলো ছেঁটে একে ঝোপ বানিয়ে রাখা যায়। 

সারা বছর সে ঝোপে কমবেশি ফুল হয়তো ফোটে। তবে গ্রীষ্ম-বর্ষায় ফোটে বেশি। এ গাছটি বাড়ির আঙিনায় হয়ে উঠতে পারে চিরদুঃখী এক স্বপ্নকুমারী। আর বর্ষাকালে ডাল কেটে কলম করে বাড়িয়ে নেওয়া যায় গাছ। এ দেশে এই লতানো স্বভাবের শোভাবর্ধক ফুলের গাছটা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন বাগানে ছড়িয়ে পড়েছে, কেউ কেউ টবেও লাগিয়েছেন। নার্সারিতে এখন কয়েক জাতের ব্লিডিং হার্টের চারা পাওয়া যাচ্ছে। খুলনায় এক নার্সারিতে দেখেছি একটি বিচিত্র ব্লিডিং হার্টের গাছ। সে জাতের গাছের পাতা সবুজ ও সাদা রঙে চিত্রিত, কিন্তু ফুলের আকার ও রং একই। আর এক জাতের ব্লিডিং হার্টের গাছ দেখেছি, যার বৃতির রং হালকা বেগুনি।

ব্লিডিং হার্ট ভূশায়িত লতানে প্রকৃতির বহুবর্ষজীবী চিরসবুজ গাছ। ৪ মিটার পর্যন্ত গাছটি লম্বা হতে পারে। পাতা অবডিম্বাকার, সবুজ ও শিরাবিন্যাস স্পষ্ট। একটি ছড়ায় অনেক ফুল গুচ্ছাকারে ফোটে। আমরা ফুলের বোঁটার কাছে যে সাদাটে ঘিয়া রঙের ত্রিকোণাকার অঙ্গ দেখি, সেটা ফুলের বৃতি। পাঁচটি বৃতি আবদ্ধ করে রাখে ফুলের পাপড়িকে। ফুল ফুটলে লাল রঙের পাপড়ি নিয়ে বৃতির বাইরে এসে ঝুলতে থাকে ফুল। পাপড়িগুলোর মাঝখান থেকে বেরিয়ে আসে লম্বা চিকন সুতার মতো কেশরগুলো। সাধারণত গ্রীষ্মকালে বেশি ফুল ফোটে। তবে বছরের অন্য সময়েও কিছু কিছু ফুল ফুটতে দেখা যায়। 

পতঙ্গ দ্বারা ফুলের পরাগায়ন ঘটে, এরপর হয় ফল। ফলের রং প্রথমে থাকে সবুজ, পরে হয় লাল, শেষে কালো হয়ে ফেটে বীজ ছড়িয়ে পড়ে। একটি ফলে চারটি কালো রঙের বীজ থাকে। বীজ থেকেও চারা হয়। বেশি ও ভালো ফুল পেতে চাইলে এ গাছে পর্যাপ্ত পানি ও পরিমিত সার দিতে হবে। রোদ যেখানে পড়ে, সেখানে এ গাছ ভালো হয়।

দেশে প্রাণীটির বিলুপ্তির শঙ্কা ছয়বার ডিম দিয়েও বাচ্চা ফোটাতে পারেনি ঘড়িয়াল

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:০৮ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:০৯ এএম
ছয়বার ডিম দিয়েও বাচ্চা ফোটাতে পারেনি ঘড়িয়াল
রাজশাহীর শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে থাকা ঘড়িয়াল জুটি। ইনসেটে ঘড়িয়ালের ডিম

রাজশাহীর শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটি আবারও ডিম দিয়েছে। তবে এর আগে ছয়বার ডিম দিলেও বাচ্চা ফোটানো যায়নি। এবার বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ঘড়িয়ালের প্রজনন উপযোগী পরিবেশও তৈরি করা হয়। প্রজনন করানো না গেলে দেশে প্রাণীটির বিলুপ্তির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এর আগে ১৯৯০ সালে পদ্মা নদী থেকে দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে রাখা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয় তাদের বংশ বৃদ্ধি ঘটানোর। তখন একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ঢাকায় স্থানান্তর করে সেখান থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল আনা হয়। প্রত্যাশা অনুযায়ী নারী ঘড়িয়ালটি ডিম দিলেও কোনোভাবেই তা থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি। 

উদ্যানে কর্মরত বারব আলী জানান, ৬ দফায় ডিম দিলেও সেগুলো কোনোভাবেই প্রজননের জন্য বাচ্চা ফোটানো যায়নি। বেশির ভাগ ডিম পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে অন্তত ৩২টি ডিম দেয়। তবে পানিতে দেওয়ায় তা নষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে। এর আগেও একইভাবে ঘড়িয়ালের ডিম নষ্ট হয়েছে। তবে গত বছর অল্প কিছু ডিম পুকুরের পাড়ে পাওয়া যায়। সেগুলো বালুতে পুঁতে রাখলেও ফল মেলেনি। অনেক ক্ষেত্রে ঘড়িয়াল নিজেই ডিমগুলো নষ্ট করে দেয়। 

প্রায় তিন মাস আগে ঘড়িয়ালের প্রজননের বিষয়ে কাজ করতে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিয়েছেন সরীসৃপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন। তিনি বলেন, ‘ডিম ফোটানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব এখানে প্রধান সমস্যা। প্রজনন মৌসুমে ডিম দেওয়ার অন্তত তিন মাস আগে থেকেই ঘড়িয়াল পলিমিশ্রিত মাটি, নরম ঘাস রয়েছে এমন স্থান নির্বাচন করে রাখে। যেখানে দিনে তাপ থাকবে, রাতেও তাপ ধরে রাখবে। কিন্তু এখানে সেই পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে না।’

বোরহান বিশ্বাস রমনের পরামর্শে সম্প্রতি উদ্যানে পুকুরের এক পাশের মাটি ও ঘাস বলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রজনন মৌসুমে ঘড়িয়ালগুলোকে দর্শনার্থী থেকে আড়ালে রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
 
বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, ‘প্রজননে সফল হলে নদীতে ঘড়িয়াল বাচ্চাদের ছেড়ে দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। তবে তার আগে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত নদী নিশ্চিত করতে হবে। এখান থেকে দুটি ঘড়িয়ালের বাচ্চা উৎপাদন করা গেলেও আগামী ৫০ বছর প্রাণীটি দেশে টিকে থাকবে। কেননা, ঘড়িয়ালের গড় আয়ু অন্তত ৬০ বছর। এরা সর্বাধিক ২০ ফুট লম্বা এবং ১৬০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। মার্চ ও এপ্রিল ঘড়িয়ালের প্রজনন ঋতু।

এ সময়ে মা ঘড়িয়াল নদীর বালিয়াড়িতে ডিম পেড়ে বালু দিয়ে ঢেকে রাখে। একসঙ্গে এরা ২০ থেকে ৯৫টি ডিম পাড়ে। ৭১ থেকে ৯৩ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ফারাক্কা বাঁধ তৈরির আগে পদ্মা নদীতে মিঠা পানির ঘড়িয়ালের দেখা মিলত। পরে নদীতে রুক্ষতা দেখা দেওয়ায় ক্রমেই বিলুপ্ত হয় প্রাণীটি। এখন বলতে গেলে দেশের প্রকৃতিতে ঘড়িয়াল দেখাই যায় না।’

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে বিপন্ন লজ্জাবতী বানর অবমুক্ত

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ০৯:২৫ এএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে বিপন্ন লজ্জাবতী বানর অবমুক্ত
ছবি: খবরের কাগজ

লোকালয় থেকে উদ্ধার হওয়া একটি বিপন্ন প্রজাতির লজ্জাবতী বানরকে রাঙামাটির কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মাসুম আলমের উপস্থিতিতে বন বিভাগের কর্মীরা বানরটি অবমুক্ত করেন। 

কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এএসএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত হওয়া লজ্জাবতী বানরটি সোমবার (২৪ জুন) নানিয়ারচর থেকে উদ্ধার করেছে বন বিভাগের সদস্যরা।

এ সময় কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার মো. এএসএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ বিভাগের নানিয়ারচর স্টেশন কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম, সদর রেঞ্জ বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, বুড়িঘাট স্টেশন অফিসার মো. মনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

জিয়াউর রহমান/সাদিয়া নাহার/অমিয়/

আষাঢ়ের প্রথম দিনে

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ১০:১৫ এএম
আষাঢ়ের প্রথম দিনে
চট্টগ্রাম থেকে ছবিটি তুলেছেন মোহাম্মদ হানিফ

প্রচণ্ড দাবদাহ শেষে জ্যৈষ্ঠের শেষ দিন শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে দেশজুড়ে ঝরেছে বৃষ্টি। প্রাণ যখন তৃষিত-তপ্ত-ক্লান্ত, ঠিক তখন ঋতুচক্রের পালাবদলে এসেছে বর্ষা। মেঘলা ভোর জানান দিচ্ছে আজ পহেলা আষাঢ়। রবীন্দ্রনাথের গানে আছে ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে...’। 

গ্রীষ্মের দাবদাহে জ্বলে যাওয়া অবসাদে শ্রান্ত বৃক্ষরাজি এখন থেকে সিক্ত হবে নবধারাজলে। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ ইতোমধ্যেই সক্রিয় হতে শুরু করেছে। বর্ষা যেন বাঙালি জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা বয়ে আনে জীবনের বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা বাংলার নবজন্ম ঘটে বোধহয় এই বর্ষা ঋতুতেই। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষ ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকেই। 

বর্ষা তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বারবার প্রতিভাত হয়েছে কবিতা, গল্প, গানে, চারুশিল্পে। প্রেমময় এই ঋতুতেই তো ফোটে কদম, কামিনি, কেয়া। সুরভি ছড়াবে বেলী, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ। ফুটবে কদম ফুল। বর্ষা প্রকারান্তরে যেন রকমারি ফুলেরই ঋতু। পত্র-পুষ্প-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে বর্ষা। প্রকৃতির রূপবদল সবাইকে জানান দেবে যে, হ্যাঁ বর্ষা এখন সমাগত। 

তবে গ্রামবাংলার বর্ষা আর শহুরে বর্ষায় যেন বহু তফাত। রূপে-গন্ধে, বর্ণে শহরে বর্ষাকে আবাহন করা হয় নাগরিক উৎসবের ডামাডালে। যে বৃক্ষরাজি বর্ষা নামায় এই শহরে, সেই শহরে বনানী উজাড় হয় প্রতিনিয়ত। বর্ষণমুখর দিন শেষে তাই নগরজীবনে ভোগান্তির নাম জলাবদ্ধতা। বর্ষা জনদুর্ভোগেরও কারণ হয়।  

এমন বাস্তবতায় প্রকৃতি রক্ষার ব্রত আর বর্ষার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আজ শনিবার সকালে আয়োজন করবে বর্ষা উৎসব। বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আজ সকাল ৭টায় শুরু হবে এ অনুষ্ঠান। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের আয়োজনে অংশ নেবেন দেশবরেণ্য সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যের গুণীজনরা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ সকাল সাড়ে ৭টায় বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের বর্ষা উৎসব শুরু হবে। প্রবীণ বংশীবাদক মো. হাসান আলীর বাঁশি বাদনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রশিল্পী আবুল বারাক আলভী। গান, কবিতা, আবৃত্তি ও কথনে সাজানো হয়েছে এই উৎসব। অনুষ্ঠান শেষে শিশু-কিশোরদের মাঝে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করা হবে।

আমেরিকান ফুল সোনাপাতি

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ৩১ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আমেরিকান ফুল সোনাপাতি
শাহবাগে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্যানে গ্রীষ্মে ফোটা সোনাপাতি ফুল। ছবি: লেখক

শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সুপার স্পেশালাইজড একটি হাসপাতাল আছে। সে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ছোট্ট একটি নান্দনিক উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে। গাছপালাও তরুণ, এখনো ছায়া দেওয়ার মতো যথেষ্ট বড় হয়নি। কিন্তু তাতে কী? জারুল আর লাল সোনালু গাছগুলোতে ফুল ফোটা শুরু না হলেও সোনাপাতি গাছগুলো সে অভাব পুষিয়ে দিচ্ছে। সোনারঙা হলদে ফুলগুলো ফুটছে থোকা ধরে। গাছের কাছে গেলে সেসব ফুলের মিষ্টি সুবাসে মন ভরে যাচ্ছে। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ায় সে সুবাস চলে যাচ্ছে দুরান্তে। ভোরের আলোর ছটা ঠিকরে পড়ছে ফুলগুলোর গায়ে, চাপ চাপ ছায়া মেখে আছে ঝোপাল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে। কালো, হালকা সবুজ, গাঢ় সবুজ, হলুদ, উজ্জ্বল হলুদ- আহা কত রঙের খেলা চলছে গাছগুলোর পরতে পরতে। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে সে দৃশ্যের সঙ্গে দেখা যায় মৌমাছিদের নাচানাচি। ওদের মেয়েগুলো বড্ড বদমাশ, একটি মেয়ে মৌমাছি নাচিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে অনেকগুলো পুরুষ মৌমাছিকে। পরিষ্কার নীল আকাশে সে উড়ছে আর সর্পিল আকারে নেচে বেড়াচ্ছে। পুরুষগুলোও মেয়েটির সঙ্গে মিলনের আশায় নেচে নেচে তার পিছু ছুটে বেড়াচ্ছে। আর বোকা শ্রমিক মৌমাছিগুলো মাথা খুঁড়ে মরছে এ ফুল থেকে ও ফুলে মধু সংগ্রহে। সোনাপাতি ফুলের তো অভাব নেই, তাই সোনাপাতি ফুলেরাও মধুর গুদাম খুলে রেখেছে। মধুগন্ধী সৌরভে টেনে আনছে মৌমাছিদের। বোঝা গেল ধারে কাছে হয়তো কোথাও কোনো গাছে ওরা চাক বেঁধেছে। মেয়ে আর পুরুষ মৌমাছিদের খাদ্য জোগাতে মাইলের পর মাইল দিনভর উড়ে বেড়াচ্ছে ওসব শ্রমিক মৌমাছি। এসব ভাবছি আর সোনাপাতি ফুলে বাতাস আর মৌমাছিদের খেলা দেখছি। ছবি তোলার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একটি গাড়ির হর্নে ঘোর ভাঙল।

এ রকম আরেকবার ঘোর লেগেছিল গত মাসে রমনা উদ্যানে মৎস্য ভবনের দিকে থাকা প্রবেশপথের কাছে আরেকটি সোনাপাতি ফুলের গাছ দেখে। একটি গাছের তলায় এত ফুল ঝরে সবুজ ঘাসের ওপর থাকতে পারে! পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই তার সৌরভে উতলা হতে হয়। এ ফুল এ দেশে নতুন না। বিভিন্ন বাগানে ও বাড়ির আঙিনায় অনেক দিন আগে থেকেই লাগানো চলছে। এ গাছ নগরে মোটেই বিরল না, চারদিকে একটু চোখ মেলে তাকালেই এদের চোখে পড়ে। এমনকি রোকেয়া সরণির সড়ক বিভাজকেও এ গাছ লাগানো হয়েছে। নার্সারিগুলোতেও এর চারা পাওয়া যায়। 

এ দেশে এখন সোনাপাতি গাছ যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে মনে হয় সে যেন আমাদের দেশি গাছ। কিন্তু আসলে তা না, গাছটি উত্তর আমেরিকা থেকে নানা দেশ ঘুরে এসেছে আমাদের দেশে। এ গাছের ইংরেজি নাম ইয়েলোবেল বা ইয়েলো এলডার, অন্য একটি বাংলা নাম পেলাম চন্দ্রপ্রভা। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম টেকোমা স্ট্যানস (Tecoma stans) ও গোত্র বিগ্নোনিয়েসি। এ জন্য একে কেউ কেউ হলদে টেকোমা বলেও ডাকেন। টেকোমা এর মহাজাতি বা গণের নাম। এ গণের অন্তত তিনটি প্রজাতির গাছ এ দেশে আছে। এগুলোর মধ্যে টেকোমা ক্যাপেনসিস প্রজাতির ফুলকে টেকোমা ফুল নামে ডাকা হয়, অন্য নাম কেপ হানি সাকল, এর ফুল কমলা রঙের আর সরু নলের মতো চোঙাকৃতির পাঁপড়ি, বাংলা নাম মৌচুষি। অন্যটি টেকোমা আনডুলাটা, যার বাংলা নাম সোনাদলা। এর কোনোটিই আমাদের দেশের গাছ না।

সোনাপাতি প্রায় চিরসবুজ বহুবর্ষজীবী গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ। ঢাকায় ফার্মগেটের কাছে মণিপুরীপাড়ায় একটি সোনাপাতি গাছ দেখেছি, যা পাশের দোতলা ভবনকে ছাড়িয়ে গেছে। এ গাছ ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতা বর্শার ফলার মতো, অগ্রভাগ সুঁচালো, কিনারা সূক্ষ্মভাবে করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা, পাতা খসখসে। ডালের আগায় থোকা ধরে অনেকগুলো হলদে সোনা রঙের ঘণ্টাকৃতির ফুল ফোটে বসন্ত থেকে হেমন্ত পর্যন্ত। ফুল ফুটলে ফুলের মধু খেতে আসে মৌমাছি, প্রজাপতি ও হামিং বার্ড পাখিরা। হা করে মুখ খোলা ফুলের পাঁপড়ির অগ্রপ্রান্ত পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত হলেও গোড়া যুক্ত হয়ে ফানেলের মতো আকৃতি তৈরি করে। বসন্ত থেকে শরৎ পর্যন্ত প্রচুর ফুল ফোটে। ফল হয়, ফলের ভেতর হলদে রঙের বীজ হয়। বীজে পর্দার মতো ডানা থাকে। ফল পেকে ফেটে গেলে বীজগুলো সে ডানায় ভর করে দূর-দূরান্তে বাতাসে ভেসে যায় ও নিজেদের বংশ বাড়ায়। এর শাখা কেটে কলম করেও সহজে চারা তৈরি করা যায়। চারা লাগানোর পর দ্রুত বাড়ে। পুষ্পিত গাছ থেকে করা শাখা কলমের গাছে পরের বছর থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করে। দ্রুত এ গাছ বেড়ে সে স্থানে ঝোপ করে ফেলে। এ জন্য এ গাছকে কোনো কোনো দেশে আগাছার মতো আপদ মনে করা হয়। কিন্তু সোনাপাতি আমাদের দেশে আপদ না, সম্পদ। পুষ্প ও বাহারি গাছের সম্পদ। টবে, বাগানে, উদ্যানে সব জায়গাতেই একে লাগানো যায়। এমনকি পথতরু হিসেবেও দীর্ঘ প্রস্ফুটনের জন্য সমাদৃত।

পথে পথে লিচুর পসরা

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
পথে পথে লিচুর পসরা
মৌসুমি ফল লিচু এসেছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে তোলা। ছবি : খবরের কাগজ

গ্রীষ্মকাল মানেই হরেক রকম সুস্বাদু ও রসালো ফলের সমাহার। তীব্র তাপের কারণে এই ঋতু অনেকের পছন্দ না হলেও গ্রীষ্মকালীন ফল পছন্দ করেন না, এ রকম মানুষের সংখ্যা হাতে গুনে খুঁজে বের করা যাবে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুর দিকেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে স্বাদে-গুণে ভরা রসালো ফল লিচু। ক্ষণকালীন এ ফল পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার।

মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও লিচু সংগ্রহ ও বিক্রির ব্যাপারে তৎপর হয়ে ওঠেন।  ফলের দোকান তো বটেই, ভ্যানে ও ঝুড়িভর্তি লিচু জনবহুল জায়গায় বিক্রি করেন তারা। বাজারে লিচু ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে হামলে পড়েন মৌসুমি এই ফলের ওপর। ঝুড়িভর্তি লাল টসটসে ফলটি নজরে পড়লেই কেনার জন্য ভিড় জমে যায়।    

বাজারে বিভিন্ন জাতের লিচুর দেখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বছর কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩ বোম্বাই, এলাচি, পাতি ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর চাহিদা রয়েছে শীর্ষে। গতকাল  সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী আর দিনাজপুরের কিছু লিচু উঠতে শুরু করেছে। পিস হিসেবে বিক্রি হয় এসব।  জাতভেদে বিভিন্ন লিচু ‘শ’ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। স্থানভেদে রাজশাহীর লিচু প্রতি ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে। ক্রেতারা যার যার চাহিদামতো কিনে নিচ্ছেন। 

শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয়, স্বাস্থ্যগুণেও ভরপুর এই ফল। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের তথ্য, লিচু ভিটামিন-সির বড় একটি উৎস। ভিটামিন-সি স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪২ শতাংশ কমিয়ে দেয়। লিচু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেরও একটি ভালো উৎস। এতে অন্যান্য ফলের তুলনায় পলিফেনলের মাত্রা বেশি থাকে। এ ছাড়া লিচু এপিকেটেচিনের একটি ভাণ্ডার, যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এবং ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।  এই ফলে আছে রুটিন উপাদান। ফুড কেমিস্ট্রি জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুসারে, রুটিন মানবদেহকে ক্যানসার, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাগুলোর মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।

সোমবার (২৭ মে) বাংলামোটরের ইস্কাটন রোডের ফুটপাতে ভ্যানে করে লিচু বিক্রি করছিলেন মো. ইদ্রিস আলী। তিনি খবরের কাগজকে জানান, বাজারে মৌসুমের নতুন লিচু ওঠা শুরু হয়েছে। তার জন্য মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। তিনি এক হাজার পিস  নিয়ে এসেছিলেন সকাল বেলা। দুপুরের মধ্যেই ৪০০ পিস  বিক্রি করেছেন। 

ফার্মগেটে দিনাজপুরের লিচু বিক্রি করছিলেন নাসির উদ্দীন। তিনি জানান, এসব লিচু আড়ত থেকে পাইকারি দরে সংগ্রহ করেন তারা। পাইকাররা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাগান হিসাবে লিচু কিনে থাকেন। ঢাকায় পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজারে। সেখান থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ লিচু কেনা যায়। পাইকারিতে প্রতি ১০০ পিস লিচু ৩৫০ টাকা পড়ে। তার সঙ্গে পরিবহন ভাড়া যুক্ত হয়। সব খরচ যোগ করে এসব লিচু খুচরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন ক্রেতাদের কাছে। 

নাসিরউদ্দীন জানান, এ বছর আবহাওয়া লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে লিচুর প্রাচুর্য থাকে। চাহিদার বড় জোগান আসে সাধারণত রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, রাজবাড়ী, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া ও গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে। 

হুমায়রা বেগম নামের এক ক্রেতা খবরের কাগজকে জানালেন, তাদের বাসার প্রত্যেকেই লিচু খুব পছন্দ করেন। বিশেষ করে বাচ্চারা এই মৌসুমের জন্য মুখিয়ে থাকে। লিচুর দিনে ঘরভর্তি করে কিনে রাখা হয়। লিচু বাজারে খুব কম সময় পাওয়া যায়। তাই মন ভরে খেতে না পারলে যেন তৃপ্তি মেটে না।

আরেকজন ক্রেতা রাজীব ভূঁইয়া জানান, মৌসুমি এই ফলের দাম আরও কম রাখা উচিত।  তিনি ঢাকা শহরে মেসে থাকেন। লিচু তার খুব পছন্দের একটা ফল হলেও দাম চড়া হওয়ায় বেশি করে কিনতে পারেন না। তবুও পছন্দের ফল বলে কথা, অল্প করে নিলেও মৌসুমের প্রথমে বাজারে উঠেছে, তাই কিনছেন। 

আরেক বিক্রেতা সবুর বলেন, প্রথম দিকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে বলে লিচুর দাম এখন বাড়তি। কিছুদিন গেলে বাজারে যখন একটু বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে, তখন দাম আরেকটু হয়তো কমবে।