![যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিকার নীতির টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশ](uploads/2023/11/29/1701272354.BD_USA.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতির টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশ। শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে।
ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (বাণিজ্য) মো. সেলিম রেজা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে এভাবে সতর্ক করেছেন। সেলিম রেজা গত ২০ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে এই চিঠিটি দিয়েছেন। চিঠির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণা দেওয়া ‘মেমোরেন্ডাম অন এডভান্সিং ওয়ার্কার এমপাওয়ারমেন্ট, রাইটস অ্যান্ড হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ডস গ্লোবালি’ শিরোনামের রিপোর্টটিও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, যদিও এই মেমোরেন্ডাম দেখে মনে হচ্ছে, এটা বিশ্বব্যাপী সব দেশের ওপরই প্রযোজ্য, তবু এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এর অন্যতম টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশ। রিপোর্টটি প্রকাশের সময় নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের শ্রম ইস্যুকে উদ্ধৃত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত শ্রমবিষয়ক মন্ত্রী।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এই মেমোরেন্ডাম অনুযায়ী, শ্রমবিষয়ক ইস্যুগুলোতে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক মিশনগুলো। এই নীতির ফলে অনেক অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপে আগ্রহী মার্কিন কূটনীতিক বা মিশনগুলো উৎসাহিত হতে পারে।
দৃশ্যত যদি যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বা বিশ্বাস করে যে, শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তাহলে এই সুযোগকে যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করা হতে পারে এমনভাবে সতর্ক করে চিঠিতে বলা হয়, এই মেমোরেন্ডামের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বহু কারণে উদ্বেগজনক হতে পারে। মেমোরেন্ডামে শ্রম অধিকার বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তার নেপথ্যে আছে রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারে।
তাই এই মেমোরেন্ডাম বাংলাদেশের জন্য একটি সিগন্যাল এমনটা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, কারণ মেমোরেন্ডামে বর্ণিত শ্রম ইস্যুর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। এই মেমোরেন্ডাম বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের আগে থেকেই বিষয়টি আমলে নেয়া উচিত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫১ কোটি ডলার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওই প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম সই করার পর ১৬ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে বলেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন কিংবা ভয় দেখাবেন, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ নীতির বিষয়ে জানাতে গিয়ে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিক আন্দোলনের নেতা কল্পনা আক্তারের নামটিও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কল্পনা জানিয়েছেন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং এ জন্য তিনি এখনো বেঁচে আছেন।
চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি ভিসানীতি ঘোষণা করে। ওই নীতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এই ভিসানীতির অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলে জানানো হয়।
তারও আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব ও এর ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি সাধারণত প্রতি বছরের ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়।