![আয় বেড়েছে মন্ত্রী-এমপিদের](uploads/2023/12/05/1701766097.parlamant.jpg)
মন্ত্রী-এমপিদের বেশির ভাগের সম্পদ ও আয় বেড়েছে। বেড়েছে ঋণের পরিমাণও। স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে অনেকের। কারও কারও বেড়েছে গাড়ি, বাড়ি ও নগদ অর্থ। তবে কয়েকজনের কমেছে অর্থ-সম্পদ। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা এবং একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের টানা ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রয়েছেন শামীম ওসমান। ১৯৯৬ সালে বিজয়ী হয়ে সপ্তম সংসদের এমপি হন। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই আসনে হয়েছেন প্রার্থী। দশম, একাদশ ও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া শামীম ওসমানের হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় যেখানে তার ছিল কেবল একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এখন তিনি পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক। নগদ টাকা না থাকলেও বেড়েছে আয়। কিনেছেন দুটি গাড়ি। দেনা রয়েছে ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা। ১০ বছরেও শোধ করেননি প্রবাসী বন্ধুর কাছ থেকে নেওয়া এই টাকা। হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪ সালে শামীম ওসমানের দেনা ছিল ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা। এর মধ্যে প্রবাসী বন্ধু অনুপ কুমার সাহা তার কাছে পেতেন ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা এবং তার স্ত্রীর আপন বড় ভাই শামীম আহমেদের কাছে ধার নিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, স্ত্রীর বড় ভাইয়ের দেনা শোধ করলেও প্রবাসী বন্ধুর দেনা শোধ করেননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তার ঋণ ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫০ টাকা। বর্তমানে তার ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৭৬ টাকা।
সম্পদ বেড়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আব্দুল মোমেনের বার্ষিক আয় কমলেও সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ১১ হাজার ২৭ টাকা। স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৭১০ টাকা। সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৭ টাকা।
২০১৮ সালে মন্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি। ২০১৮ সালে বার্ষিক আয় ছিল ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৭১ টাকা, যা কমে ২০২৩ সালে হয়েছে বার্ষিক ২৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৬ টাকা।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে
২০১৮ সালে হলফনামায় নির্ভরশীলদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের স্ত্রী ড. নাসরীন আহমদের সম্পদ ছিল ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬০ টাকার। ২০২৩ সালের হলফনামায় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার ৯ টাকা। পাঁচ বছরে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমাকৃত টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।
৭৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন হুইপ স্বপন
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কোনো ব্যাংকঋণ ছিল না হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের। এবারের হলফনামা আনুযায়ী, তার ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৭৬৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে স্থাবর ও অস্থাবর নিজের নামে সম্পদের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা। পাঁচ বছরে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৫১ টাকা। আগে নির্ভরশীলদের নামে কোনো সম্পদ না থাকলেও এবার দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৯১১ টাকা। স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৩ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আয় বেড়েছে
গত পাঁচ বছরে রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আয় বেড়েছে ৪ কোটি ৮৮ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬৬ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম তার ব্যক্তিগত আয় দেখিয়েছিলেন ৩ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৮ টাকা। কৃষি খাত, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার থেকে লভ্যাংশ, ব্যাংকের সুদ আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত সম্মানী ও পারিতোষিক বাবদ এবার তিনি আয় দেখিয়েছেন ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির বিবরণে শাহরিয়ার আলম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ টাকা। এবার নগদ টাকা ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৭৩।
পাঁচ বছরে বেড়েছে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬৭ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বেড়েছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫০ টাকা। স্থাবর সম্পদ (অকৃষি জমি) থেকে আয় বেড়েছে ৫৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
জি এম কাদেরের সম্পদ বেড়েছে ৩ গুণ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সম্পদ বেড়েছে তিন গুণ। ২০১৮ সালে লালমনিরহাট-৩ আসনে সংসদ নির্বাচনকালে নগদ টাকা ছিল ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৩ টাকা। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৩ টাকা। একই সঙ্গে স্ত্রী শেরীফা কাদেরের নগদ সম্পদ ছিল ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭০১ টাকা। পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর আগে জমা ছিল ১৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ টাকা। এবার নিজের ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৩ টাকা এবং স্ত্রীর ছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ২৫৮ টাকা নগদ দেখিয়েছেন। পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯ হাজার ৩৫৯ টাকা।
সম্পদ বেড়েছে সালাম মুর্শেদীর
খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ২০১৮ সালের নির্বাচনে হলফনামা অনুযায়ী সম্পদ ছিল ৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বার্ষিক আয় ছিল ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২ লাখ টাকা।
সেখ সালাহউদ্দিনের আয় বেড়েছে
খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেখ সালাহউদ্দিনের বার্ষিক আয় বেড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪০৫ টাকা। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ টাকা।
খুলনা-৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ২০১৮ সালে সম্পদ ছিল ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকার। পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।