নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে দ্বিতীয় দফায় আরও ১০০ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বদলি হচ্ছেন বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে প্রথম দফায় ৪৭ জনকে বদলি করা হয়। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক ইউএনও বদলি হতে পারেন। অপরদিকে সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সারাদেশে সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যাক্রমে বদলির নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম পর্যায়ে ৩৩৮ থানার ওসিকে বদলি করতে তালিকাসহ প্রস্তাব এসেছে নির্বাচন কমিশনে।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা এবং ইসির একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইউএনও বদলি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, প্রায় ১০০ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলির সুপারিশ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ইসি এ সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। যারা এক বছরের বেশি ইউএনও হিসেবে কর্মস্থলে ছিলেন, তাদেরই বদলি করা হবে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে বলেছে, সেই অনুসারে বিভাগীয় কমিশনাররা তালিকা তৈরি করছেন।’
জেলা প্রশাসকদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। একটি পেয়েছিলাম, সেটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের যা করতে বলবে, আমরা তাই করব।’
অল্প সময়ের মধ্যে মাঠ প্রশাসনের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে বদলি করা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবই সম্ভব। অসম্ভব বলে কোনো কথা নেই। ২০০ জনের মতো ইউএনও বদলি হতে পারেন।’
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর ইউএনওদের বদলির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায় ইসি।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে বাছাই শুরু হয়েছে, বাছাই শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।
ওসি বদলি
ইসি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার নির্বাচন কমিশনে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, যেসব থানার ওসিদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরির মেয়াদ হয়েছে, তাদের অন্যত্র বদলি করতে গত ৩০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠি দেয় ইসি। তার প্রেক্ষিতে গতকাল ৩৩৮ থানার ওসির বদলির প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচন কমিশন ওই প্রস্তাব অনুমোদন করলে বদলির আদেশ জারি করবে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষ। সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরির লক্ষ্যেই মূলত এই রদবদলের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
এ ছাড়া কয়েকজন ডিসি ও এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী পক্ষপাত ও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সামনে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও জানা গেছে- বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের বেশিরভাগই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন। মাঠপ্রশাসন ও পুলিশের অনেক কর্মকর্তা একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে তাদের অনেকের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িয়েছেন। এ অবস্থায় প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশন এ পদক্ষেপ নিয়েছে।