দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ১৫৮ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এবং ৩৩৮ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলির অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বদলির নির্দেশ হওয়া ওই কর্মকর্তাদের তালিকা ইসিতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওসি-ইউএনও বদলির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত ফাইল স্বাক্ষরও হয়েছে। এরপর চিঠি ইস্যু হবে। তারপর ওই এই চিঠি জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এর আগে গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দেশের আট বিভাগের ৪৭ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলির প্রস্তাবে সম্মতি দেয় নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে দেশের সব ইউএনও এবং থানার ওসিদের পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। তারপর বদলির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে গত ৩০ নভেম্বর জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন ওই প্রস্তাব অনুমোদন করলে বদলির আদেশ জারি করবে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষ।
ইসির ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনওর বর্তমান কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ এক বছরের বেশি হয়েছে, তাদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ইসিতে পাঠানো প্রয়োজন। এছাড়া যেসব ওসি বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন প্রথমে তাদের ও পরে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ওসিদের বদলির নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও আইজিপিকে চিঠি পাঠিয়ে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ওসিদের বদলির প্রস্তাব ইসিতে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে নির্বাচন কমিশন বদলির প্রস্তাব পাঠাতে আরও তিন দিন সময় বাড়ায়। দেশে বর্তমানে ৬৫০টির বেশি থানা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরির লক্ষ্যেই মূলত এই রদবদলের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এছাড়া কয়েকজন ডিসি ও এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষপাত ও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সামনে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও জানা গেছে- বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের বেশিরভাগই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন। মাঠপ্রশাসন ও পুলিশের অনেক কর্মকর্তা একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে তাদের অনেকের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িয়েছেন। এ অবস্থায় প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশন এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
এদিকে সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগেই নতুন করে ৮৩ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থীর তালিকা থেকে নবম গ্রেডের এই কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। এতে নিয়োগপ্রাপ্তদের আগামী ১২ ডিসেম্বর যোগদান করতে বলা হয়েছে। ইসির ওই নোটিশে বলা হয়েছে ওই তারিখে যোগদান না করলে তার নিয়োগপত্র বাতিল করা হবে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। ভোটে অংশ নিতে সারা দেশে প্রার্থীদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর)। সারা দেশে ১৯৮৫ জন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাছাইয়ে অবৈধ হয়েছে ৭৩১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।
এ পর্যায়ে চলছে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল আবেদন, যা চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল আবেদনগুলো শুনানি ও নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
এলিস/এমএ/