নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগপর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইসি ভোটের প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব কথা জানান। এদিন নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশের অনুমতি না দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা।
চিঠিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনীকাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে, এরূপ কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগে পর্যন্ত যেকোনো দলের সভা, সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। গণতান্ত্রিক দেশে এটি সঠিক কি না, এটি সংবিধান পরিপন্থী হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি তো অতিসাধারণ বিষয়। একটি বিশেষ সময়, একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি দল যার যার প্রার্থী নিয়ে তাদের প্রচার-প্রচারণা করবে, সে সময় এই দল-সেই দল মুখোমুখি হতেই পারে যাতায়াতের পথে। সেখানে যদি আবার আরেকটি নতুন দল নির্বাচন ছাড়া অন্য কথা বলে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেটি বলেছে ব্যাঘাত হতেই পারে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সঠিক, সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন হতে দেওয়ার জন্য সিইসি যা যা বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেগুলো করবে।’ এর আগের নির্বাচনগুলোতে এমন হয়নি- দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন হয়তো উনি চিন্তা করছেন এ রকম হতে পারে, সে জন্য উনি এ কথা বলেছেন।’
এবারের নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অনেক বেশি অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন কি না- প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘মোটেই অবনতি হবে না। অবনতি করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে সেটিও আপনারা দেখছেন। বাস পুড়িয়ে দিচ্ছে, রেললাইন উঠিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থাকে স্বাভাবিক করার জন্য নির্বাচন কমিশন তাদের দৃষ্টিতে যা সঠিক মনে হয়েছে, সেটিই ঘোষণা দিয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্দেশনা পালনের জন্য যাদের যাদের দায়িত্ব, আমার মনে হয় চিঠি অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করবেন।’
‘বিএনপি যাতে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর সভা-সমাবেশ করতে না পারে সে জন্যই কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আপনি নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করবেন। ইসি তো স্পষ্টই বুঝতে পারছে, তারা (বিএনপি) নির্বাচনে না এসে ধ্বংসের খেলায় নেমেছে। সেটি যাতে করতে না পারে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়, এ দেশের জনগণ যাতে সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে। আমার মনে হয় সে জন্য এই ঘটনাটি ঘটছে।’
মঙ্গলবার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ দিয়ে এ-সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।