![শামীম হক, শাম্মী ও সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল](uploads/2023/12/15/1702619238.Shamim_Shammi_Sadik.jpg)
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুজনসহ তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আপিলে বাদপড়া প্রার্থীরা হলেন- ফরিদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক, বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ এবং বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ। তবে একই অভিযোগে ফরিদপুর-৩ আসনের এ কে আজাদের বিরুদ্ধে করা শামীম হকের আপিল খারিজ করেছে কমিশন।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানিতে এ রায় দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আদালত।
প্রার্থিতা হারালেন যারা
দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে প্রার্থিতা হারালেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ফরিদপুর-৩ আসানের প্রার্থী শামীম হক। হলফনামায় তথ্য গোপন করায় তার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। মনোনয়নপত্রে তার দ্বৈত নাগরিকত্ব (নেদারল্যান্ডস) সংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন মর্মে অভিযোগ করে মনোনয়ন বাতিল চান স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচন কমিশন আজাদের আপিলের প্রেক্ষিতে প্রার্থীর নেদারল্যান্ডসের দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য হওয়ায় আপিলে তার মনোনয়ন বাতিল করেছে ইসি।
মনোনয়ন বাতিল হয়েছে বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদের। মনোনয়নপত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব (অস্ট্রেলিয়া) সংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন মর্মে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছিলেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ দেবনাথ। অভিযোগ পেয়ে রিটার্নিং অফিসার শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বাতিল করেছিলেন।
পরে রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে শাম্মী আহমেদ নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। নির্বাচন কমিশন আপিলকারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। সে প্রেক্ষিতেই দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ পাওয়ায় ইসির আদালত শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করে।
দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বাতিল হয়েছে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন।
সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধেও দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে আপিল করেন ওই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে তার মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ নির্বাচন কমিশনে এ আবেদন করেন।
আপিলে সাদিক আব্দুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ভোটার হিসেবে উল্লেখ করে সেখানকার ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া তথ্যও যুক্ত করা হয়। নির্বাচন কমিশন আপিল শুনানি শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে রায় দেয়। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে সাদিক আব্দুল্লাহ হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
প্রার্থিতা ফিরে পেলেন এ কে আজাদ
দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ) এর বিরুদ্ধে করা শামীম হকের আপিল খারিজ করেছে ইসির আদালত। ফলে তিনি বৈধ প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকবেন।
ওই আসন থেকে এ কে আজাদ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়েছেন। তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক। তবে তার আগেই শামীমের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেন এ কে আজাদ।
হলফনামায় ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে এ কে আজাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন শামীম হক। শামীম হকের আপিলের ফলে এ কে আজাদের দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছিল সংস্থাটি।
শুনানি শেষে এ কে আজাদের আইনজীবী বলেন, ফরিদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের আইনজীবী একটি অভিযোগ দাখিল করেন যে, এ কে আজাদ যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। আজ কমিশন শুনানিতে শামীম হকের আইনজীবীর কাছে জানতে চায় তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে কি না। জবাবে তারা বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। পরে তথ্য প্রমাণ না থাকায় এ কে আজাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে দেয় ইসি।
এলিস/ইসরাত/সালমান/