আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রতীক বরাদ্দ করবে নির্বাচন কমিশন। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) ছিল যাচাই-বাছাই এবং আপিল নিষ্পত্তির পর বৈধ হওয়া প্রার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। সারা দেশের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রবিবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ৩৪৭ জন প্রার্থী। স্থগিত আছে ৫ জনের প্রার্থিতা। প্রত্যাহার শেষে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৬টি।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য জানান।
ইসি সচিব বলেন, দেশের ৬৪টি জেলার রিটার্নিং অফিসার এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর আসনগুলোর রিটার্নিং অফিসার থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী মোট মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭১৬ জন। বাছাইয়ে বাতিল হয়েছিল ৭৩১ জন। ইসিতে আপিল দায়ের করেছিল ৫৬০টি এবং আপিল মঞ্জুর হয় ২৮৬টি। শুনানি শেষে আপিল নামঞ্জুর করা হয় ২৭৪টি। আপিল নিষ্পত্তি শেষে এবারের নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ২৬০ জন।
সচিব জানান, নিবন্ধিত ২৭টি রাজনৈতিক দল এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ২৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি দল অর্থাৎ গণতন্ত্রী পার্টি বাদ পড়েছে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেন যারা
ঢাকা বিভাগীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন ঢাকা সিটির ১৫ আসনের ২৬ প্রার্থী। ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি এবার রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। একই আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়ন বহাল রেখেছেন অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
ঢাকা-৬ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের স্ত্রী ফারহানা সাঈদ। ওই আসন থেকে এবার নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাঈদ খোকন।
ঢাকার অন্য যেসব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা সরে দাঁড়িয়েছেন- ঢাকা-৫ আসনে মীর আব্দুস সবুর, ঢাকা-৭ আসনের মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ঢাকা-৮ আসনের জুবের আলম খান, ঢাকা-৯ আসনের কাজী আবুল খায়ের, ঢাকা-১০ আসনের হাজী মো. শাহজাহান, ঢাকা-১১ আসনের শামীম আহমেদ, ঢাকা-১২ আসনের খোরশেদ আলম খুশু, ঢাকা-১৩ আসনের জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৪ আসনে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি (জেপি) শেখ শহীদুল ইসলাম, ঢাকা-১৫ আসনের মো. সামসুল হক এবং ঢাকা-১৬ আসরের মো. আমানত হোসেন।
মনোনয়ন প্রত্যাহার করা জাকের পার্টির প্রার্থীরা হলেন- ঢাকা-৪ আসনের মো. রবিউল ইসলাম, ঢাকা-৭ আসনের বিপ্লব চন্দ্র বণিক, ঢাকা-৮ আসনের মো. নুরুল ইসলাম লিটন, ঢাকা-৯ আসনের মোহাম্মদ মফিজ উল্লাহ, ঢাকা-১০ আসনের মো. হুমায়ুন কবীর, ঢাকা-১১ আসনের মো. মাসুদ রানা, ঢাকা-১২ আসনের হুমায়ুন কবীর, ঢাকা-১৪ আসনের জাকির হোসেন, ঢাকা-১৫ আসনের হুমায়ুন কবীর, ঢাকা-১৬ আসনের আমিনুল ইসলাম, ঢাকা-১৭ আসনের কাজী মো. রাশিদুল হাসান এবং ঢাকা-১৮ আসনে মো. শরিফ হোসেন।
জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনে থাকছেন। এবার প্রার্থী দিয়েছিলেন ২১৮টি আসনে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে ১০টির কম আসনে প্রার্থী রেখে বাকি আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নিজেদের প্রতীক গোলাপ ফুল নিয়েই তারা নির্বাচন করবেন।
এ ছাড়া বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ফরিদপুর-১ আসনে (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আব্দুর রহমানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। এ প্রসঙ্গে দিলীপ বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, মীরসরাই আসনে আমি জোট থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার পক্ষে প্রত্যাহার করেছি। আমার প্রতিনিধি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখন আমি ঢাকায় আছি। দু-একদিনের মধ্যে এলাকায় গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইব।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে সংসদীয় ৩শ আসনের বিপরীতে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে ৭৩১টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে করা আপিল নিষ্পত্তি হয় ১৫ ডিসেম্বর।
এদিকে ইসির আদালতে আপিলে বাদপড়া আওয়ামী লীগের ৫ প্রার্থীসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। তাদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে দুটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। সেই আদালতে শুনানিতে বাদ পড়াদের মধ্যে যারা বৈধতা পাবেন, আইন অনুযায়ী তারাও ভোটে অংশ নিতে পারবেন।
সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। আজ ১৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করবে নির্বাচন কমিশন। আর প্রতীক পাওয়ার পর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটের প্রচার চালাতে পারবেন। তবে এবার যে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এলিস/এমএ/