![প্রচারে বিধি ভঙ্গ করলে ইসির কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি](uploads/2023/12/18/1702916082.EC.jpg)
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রচারে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। এবার প্রার্থীরা প্রচারের সময় পাচ্ছেন ১৯ দিন। এই প্রচার শেষ হবে ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টার মধ্যে। প্রচারকালীন আচরণবিধি ভঙ্গ করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছয় মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন- এমন বিধান রয়েছে।
প্রচারকালীন প্রার্থীদের যেসব বিধি মানতে হবে-
* রঙিন পোস্টার করা যাবে না। পোস্টারে প্রার্থী ছাড়া দলীয়প্রধানের ফটো ব্যবহার করা যাবে, তবে তা দড়িতে ঝুলিয়ে প্রচার করতে হবে। ৪০০ বর্গফুট এলাকার বেশি বড় কোনো প্যান্ডেল করে প্রচার চালানো যাবে না।
* পোস্টারের সাইজ দৈর্ঘ্যে ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার কোনোভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না। প্রচারের অংশ হিসেবে যেকোনো প্রকার দেয়াললিখন, পোস্টানো সাঁটানো দণ্ডনীয় অপরাধ।
* কাপড়ের তৈরি ব্যানার করে প্রচার চালানো গেলেও ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার করা যাবে না। জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
* সভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানিয়ে অনুমতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সভার দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।
* মাইকের প্রচার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
* নির্বাচনী এলাকায় প্রতি ইউনিয়ন আর পৌর ও সিটি এলাকার ওয়ার্ডপ্রতি নির্বাচনী ক্যাম্প করতে হবে একটি। ক্যাম্পে ভোটারদের কোনো কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনোরূপ উপঢৌকন দেওয়া যাবে না।
* প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা বা অনুদান প্রকাশ্যে বা গোপনে দিতে পারবেন না। এমনকি অঙ্গীকার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
* প্রচারের জন্য কোনো গেট, তোরণ নির্মাণ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকতে হবে।
* নির্বাচনী ক্যাম্প এমন স্থানে তৈরি করতে হবে যেন জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা না হয়।
* মোটরসাইকেলসহ যেকোনো মোটরগাড়িতে করে মিছিল, মশাল মিছিল বা শোভাযাত্রা একদম নিষিদ্ধ।
* বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারে প্রতীক হিসেবে জীবন্ত কোনো প্রাণীর ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে।
* প্রচারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
* কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অন্য কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সম্মানহানিকর কিছু করতে পারবেন না। কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, বিস্ফোরক বহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
* সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সব সুবিধা ত্যাগ করে প্রচারকাজে অংশ নিতে হবে। কোনো ডাকবাংলো ব্যবহার, সরকারি গাড়ি ব্যবহারসহ প্রোটোকল ছাড়তে হবে।
* সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না তারা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ আইনে অনুমতি থাকায় নিরাপত্তার কারণে প্রটোকল পাবেন।
* বন্ধ রাখতে হবে অনুদানের ঘোষণা, প্রকল্প, ফলক উন্মোচন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও।
* সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের মেয়ররাও সুবিধাভোগের বাইরে থাকবেন। তবে সরকারি কাজে তারা সরকারি সুবিধা পাবেন। কিন্তু সরকারি কাজে গিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না।
* দলীয়প্রধান ছাড়া অন্য কেউ হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। যাতায়াতের সময় হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট, ব্যানার বা অন্য কোনো প্রচারসামগ্রী প্রদর্শন বা বিতরণ করতে পারবেন না।
* দেয়াল, দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়কদ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অংকন করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি।
* পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল সিটি ও পৌর এলাকার দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে, সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনাসমূহে এবং যানবাহনে সাঁটাতে পারবেন না। অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টারের ওপর নিজের পোস্টার লাগানো বা অন্যের প্রচারসামগ্রী নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
* প্রার্থীকে আইনে নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে প্রচারে নির্বাচনী ব্যয় করতে হবে।
এবার ভোটারপ্রতি ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ১০ টাকা। তবে কোনো আসনে ভোটার সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন একেকজন প্রার্থী। এই ব্যয় একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব থেকে বহন করতে হবে। প্রতিদিনের ব্যয় ভাউচারসহ সংরক্ষণ করে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে। কোনো প্রার্থী আইনে নির্ধারিত এসব নির্দেশনা অমান্য করলে ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। কোনো দল এই নির্দেশনা না মানলে ওই দলের জরিমানা হবে ৫০ হাজার টাকা।
ইসির যুগ্ম সচিব (আইন শাখা) মাহবুবার রহমান জানিয়েছেন, প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাহী হাকিমদের। এরই মধ্যে ৮০২ জন নির্বাহী হাকিম মাঠে নেমেছেন। ভোটের দুই দিন আগে থেকে পাঁচ দিনের জন্য মাঠে নামবেন ৬৫৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটের মাঠের সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ তারাই সম্পন্ন করবেন। ভোটের আগে-পরে ১৩ দিন মাঠে নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আনসারের ৫ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের ২ হাজার ৩৫০ জন, বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য, পুলিশের (র্যাবসহ) থাকবেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন সদস্য। এ ছাড়া সব নির্বাচনী এলাকায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।