![বাহারকে ১ লাখ, শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা](uploads/2023/12/27/1703681300.bahar_shamvu.jpg)
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কুমিল্লা-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এক লাখ টাকা ও বরগুনা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে তলবের শুনানি শেষে এ রায় দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি বলেন, ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জরিমানার টাকা তিন দিনের মধ্যে তাদের জমা দিতে হবে এবং সেটা রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও জানাতে হবে। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই বিষয় পুনরায় নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।
এর আগে গত রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) নির্বাচনি আচরণবিধি মানার প্রশ্নে তাদের কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেয় ইসি। ওই ঘোষণার একদিন পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুই সংসদ সদস্যের ব্যাখ্যা তলব করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
একাধিকবার নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বাহারের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না এবং শম্ভুকে জরিমানা বা কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না- এমন নোটিশের ভিত্তিতে যথাক্রমে এই দুই প্রার্থীকে সশরীরে ইসিতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে তলব করে কমিশন।
বাহাউদ্দিন বাহার এর আগেও নির্বাচনি অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সুপারিশসহ ইসিতে প্রতিবেদন পাঠায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এজন্য গণপ্রতিধিনিত্ব আদেশ অনুযায়ী বাহারের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে ইসির পক্ষ থেকে তলব নোটিশ পাঠানো হয়।
অন্যদিকে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রচার শুরুর আগেই তিনি প্রচারে নামেন। গত ২৮ নভেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর শম্ভু তার সহস্রাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ মিছিল ও সভা করেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি এরই মধ্যে মধ্যে চার দফা প্রতিবেদন দিয়েছে। একাধিকবার সতর্ক করার পরও শম্ভু ‘নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম’ করে যাচ্ছেন বলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে জরিমানা ও প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে ইসির পক্ষ থেকে তাকেও তলব নোটিশ পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
শুনানি শেষে বাহার ও শম্ভু
আবেগ থেকে আমি ওই কথা বলেছি : বাহার
নির্বাচন ভবনে তলবের শুনানি শেষে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কুমিল্লা-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের উত্তর দিয়েছি। দুইটা অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়ামে নির্বাচনি প্রচারের সময় গাড়িতে ওঠার আগে একাত্তর টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধিকে গালাগাল করেছি ও ধর ধর বলে চিৎকার করেছি- এত নিচে নেমে আমি রাজনীতি করি না। ঘটনাস্থলে তো একুশে টিভিও ছিল তারা তো অভিযোগ করেনি।’
এ ছাড়া হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো ইঙ্গিত আমি সাংবাদিকদের দেয়নি। আমি বিএনপি-জামায়াতকে বলেছিলাম তাদের হাত-পা ভেঙে দেব। কারণ বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করছে। আমার নির্বাচনী প্রচারের দিন ট্রেনের ৪টি বগি পুড়েছে- একজন মা ও শিশু মারা গেছে। আর সেই কথা আমি আমার আবেগ থেকে বলেছি।’
নাশকতা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো আছে, আপনাকে কেন এর দায়ভার নিতে হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা মনোভাব রেখেই ব্যাপারগুলো বলেছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাকে কিছু বলেনি তবে আমি আমার বক্তব্য দিয়ে তাদের আশ্বস্ত করতে পেরেছি। আমি নির্দোষ, আমার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’
আমি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি : শম্ভু
অন্যদিকে শুনানিতে ঢোকার আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেন বরগুনা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি। আমার সমর্থকরা করে থাকতে পারে। এখন ইসি ডেকেছে বলেই এসেছি।’
উল্লেখ্য, আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে তাদের নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
এলিস/সালমান/