নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। একই সঙ্গে নির্বাচন ঘিরে কোন ধরনের অনাচার ধরা পড়লেই আইনি ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশ দেন তিনি।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে দুই হাজারের মতো অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এবারে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক ডাইমেশনটা দেশের অর্থনীতি, সামাজিক স্বার্থে আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কোনো রকম অনাচার যদি ধরা পড়ে সেটা অবশ্যই ক্ষমতা দিয়ে প্রতিবিধান করবেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্র। তার মানে হচ্ছে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হবে। নির্বাচনে যারা সংসদে বসবেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা তারাই সংবিধান গঠন করবেন। নির্বাচন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচন নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। তাই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের যেমন বাগবিতণ্ডা হচ্ছে, সহিংসতাও হয়েছে। আমাদের নির্বাচনে আরেকটি কারণে মনোযোগী হতে হবে, কারণ রাজনৈতিক একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে। সাধারণত নির্বাচন খুব উৎসবমুখর হয়।’
সিইসি বলেন, ‘১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় নির্বাচনটা পরিচালনা করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে নির্বাচনে মুসলীম লীগের ভরাডুবি হয়েছিল। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। এরপর সব সময়ই নির্বাচন উৎসমুখর হয়েছে। সে বিষয়টা এবার ক্ষুণ্ন হয়েছে, যেহেতু একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে। ১৪ সালে নির্বাচন বর্জন হয়েছিল, সহিংসতা হয়েছিল। সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ, আপনারা জানেন। ১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও কিছু বিতর্ক হয়েছে। নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক ছিল। কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। পরবর্তীতে সেটা নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়েছে। যার ফলে আমাদের দেশে প্রচলিত নির্বাচনটা নিয়ে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা যে কোনো মূল্যে আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে একটি সরকার তার দায়িত্ব থেকে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে। নির্বাচন কমিশন ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডি, সরকার সেখানে সাংবিধানিকভাবে সাহায্য করতে বাধ্য। আবার সরকারের সহায়তা ছাড়া আমরা নির্বাচন করতে পারি না। ১৬ লাখ লোক ভোটের কাজে নিয়োজিত হবে। এতে আট লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আট লাখ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ইন্টারন্যাশনাল ডাইমেনশন পেয়েছে। কেননা, আমরা জাতিসংঘের সদস্য। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র, তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। সরকার এবং আমাদের সঙ্গে তারা বারবার সাক্ষাত করছেন। তাদের প্রত্যাশা তারা ব্যক্ত করেছেন। তারা আশা করেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু হবে। তারা যখন আশা করেন, বুঝতে হবে খুব শক্তভাবেই আশা করেন। তাদের আশাটা অন্যায় নয়। আমরা যেহেতু গ্লোবাল কমিউনিটিতে বসবাস করি।’
সিইসি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হতে হবে। সেখানে আপনাদের যে দায়িত্বটা, সেটা আপনারা খুব স্পষ্টভাবে বুঝে নেবেন। যে দায়িত্বটা আরোপ করা হবে, সে দায়িত্বটা যদি ভালোভাবে বুঝে নেন, তাহলে দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা প্রয়োগে অনেক বেশি দক্ষ হবেন।
নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে ভোটের দিন, ভোটের আগে আচরণ বিধি প্রতিপালনে কিছু অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা হয়। যেমন সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে দেওয়া, কেন্দ্র দখল হয়ে যাওয়া, এতে ভোটাররা ভোটটাকে প্রত্যাখ্যান করেন। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস গড়ে তুলবে হবে যে, নির্বাচনের পরিবেশ আছে, আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘অবাঞ্ছিত লোক যদি ভদ্রলোকও হয় তিনি কেন্দ্রে ঢুকলে বাইরে চাউর হয়ে যাবে যে কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে। কাজেই কোনো অবাঞ্ছিত লোককে কেন্দ্রে ঢুকতে দেবেন না। গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা অবাধে প্রবেশ করতে পারবেন। তারা স্বাধীনভাবে প্রবেশ করে অবাধে বিচরণ ও প্রচার করতে পারবে। জনগণ যদি গণমাধ্যমে দেখে ভেতরে পরিবেশ সুন্দর, স্বচ্ছ হচ্ছে তাহলে ভোটটা কিন্তু সুন্দরভাবে ওঠে।’
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইসি মো. আনিছুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এলিস/ইসরাত চৈতি/অমিয়/