![কমিশন কারও গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেনি : সিইসি](uploads/2024/01/18/1705584539.Election_Commision.jpg)
দেশি-বিদেশি চাপ আর নানা উদ্বেগ ও শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন সফল হয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাতে ইসি সরকারের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে- তাদের বিরুদ্ধে উঠা এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছে সংস্থাটি। সংসদ ভোটের ফল নিয়ে সন্দেহভাজনদের প্রয়োজনে চ্যালেঞ্জ করার আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনাররা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানের সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে তারা এসব কথা বলেন।
সব রাজনৈতিক দল অংশ নিলে ভোট আরও সফল হতো : সিইসি
অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সরকারি সংস্থা হিসেবে আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অবশ্যই ছিল, তবে নির্বাচন থামিয়ে রাখাও সম্ভব ছিল না। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাতে সরকারের কোনো গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করিনি। কারণ ইসি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, রাজনীতিবিদদের যদি ইসিতে আস্থা না থাকে, তাহলে ইসির গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো নৈতিক অবস্থান থেকে অনুরোধ করতে পারি, সংকট নিরসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। আর রাজনৈতিক সংকট নিরসন কমিশনের কাজ নয়। তাই সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কমিশন তো অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারে না বা ভোট পিছিয়ে দিতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিজেদের প্রজ্ঞা খাটিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘বিগত কোনো সংসদ নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। এবারের নির্বাচনও তা ছিল। একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কমিশন ত্রিমুখী চাপে ছিল। তাই নির্বাচন খুব যে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা বলা যাবে না। কারণ একটি বড় দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করেনি, তারা সেটি প্রতিহতও করতে চেয়েছিল। তারপরও এই সংসদ নির্বাচন পুরোপুরি সফল না হলেও, তুলনামূলক ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ায় জাতি কঠিন সংকট থেকে আপাতত উঠে এসেছে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন পক্ষের ত্রিমুখী চাপের মধ্যেও এবারের নির্বাচন তুলনামূলক ভালো নির্বাচন হয়েছে। পাঁচ বছর পরপর এই সংসদ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের চলমান সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান দরকার বলে আমি মনে করি। কারণ এর ফলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এ ধরনের সংকট নিয়ে জাতি খুব একটা এগিয়ে যেতে পারে না।’
আমরা ইমানের সঙ্গে কাজ করে সফল হয়েছি : ইসি আহসান হাবিব
ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আহসান হাবিব খান বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা ইমানের সঙ্গে কাজ করে সফল হয়েছি। গণতন্ত্র, দেশ ও সংবিধান রক্ষায় এই কমিশনের এবারের নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে আমরা এই নির্বাচন নিরপেক্ষতার সঙ্গে করে যে মানে পৌঁছেছি, সেখান থেকে যে কেউ চাইলেই নামাতে পারবে না।’ নির্বাচনের সফলতার এই ধারা অব্যাহত রাখতে ইসির সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতেও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ভোট গ্রহণযোগ্য হয়েছে : ইসি রাশেদা সুলতানা
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তবে কমিশনের দায়িত্বে এসে প্রথমে শঙ্কা ছিল যে, সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারব কিনা- এখন সেটা আর নেই। সবার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবারের নির্বাচন সফল হওয়ার সেই শঙ্কা কেটে গেছে। ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারে সেই চেষ্টায় ইসি সফল হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এবারের ভোট দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
অনেকে না জেনেই ইসির ওপর দায় চাপায় : ইসি মো. আলমগীর
আলোচনায় নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘সরকারের সহায়তা ছাড়া এত বড় কর্মযজ্ঞ সফল করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সরকারসহ সবার সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টায় নির্বাচন সফল হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল অংশ নিলে সেটা আরও সফল হতো। তবে তাদের এই না আসার দায় ইসির নয়, অনেকে না জেনেই আমাদের ওপর দায় চাপান, গণমাধ্যমে নানা সমালোচনা করেন। কারণ নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল আসবে কী আসবে না- সেটা নিশ্চিত করা আমাদের কাজ নয়। তারপরও অপবাদ, বদনাম- দুটোই আমাদের ওপরই চাপানো হয়।’
ব্যালট সকালে পাঠানো ইতিবাচক ছিল : ইসি আনিছুর রহমান
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘এবারের ভোট নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। ভোটাররা যাতে নিজের ভোট দিতে পারে- সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থাও ফিরে এসেছে। তারপরও যারা সাদাকে কালো দেখেন, তাদের কখনো সাদা দেখানো যায় না। তবে কেউ চাইলে এখনো ভোটের ফল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। ভোটের দিন সকালে আমাদের ব্যালট পাঠানো সিদ্ধান্তে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। এটা না করা হলে অনেকের সন্দেহের তীর আরও বেশি আসতো।’
সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির ধন্যবাদ জ্ঞাপনের এই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, ঢাকা এবং সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইডিইএ প্রকল্প (২য় পর্যায়) ও ইভিএম প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এলিস/সালমান/