বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) জেনেটিক মডিফাইড (জিএম) শস্য 'গোল্ডেন রাইস’ চাষাবাদের অনুমোদনের জন্য ফের তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘জিএম শস্য গোল্ডেন রাইস ও বিটি বেগুন: বাংলাদেশে প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশ্নের নিরসন জরুরি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই অভিযোগ তোলেন বক্তারা।
সোমবার (৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জিএমও বিরোধী মোর্চার চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, বীজ বিস্তার ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডক্টর এম এ সোবহান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন ও বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বদরুল আলম বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পরীক্ষাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
ফরিদা আখতার অভিযোগ করেন, জিএম ফসল হিসেবে গোল্ডেন রাইসে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত ঝুঁকি, কার্যকারিতা এবং এই ধানের আদৌ কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কী না এই সব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, গোল্ডেন রাইস সারা বিশ্বে বিতর্কিত। ফিলিপাইনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলা হলেও এখন তা বাতিল করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে ফিলিপিনো কৃষকরা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। কাজেই ফিলিপাইনের উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশে অনুমোদন দেওয়ার কোন অর্থ নেই।
বক্তারা দাবি করেন, বাংলাদেশের কৃষিতে জেনেটিকালি মডিফাইড প্রযুক্তি ব্যবহারের যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে এবং বিজ্ঞানের নামে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেভাবে আমাদের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছে তা বেশ উদ্বেগজনক।
বক্তারা অভিযোগ করেন, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এই গোল্ডেন রাইসকে পুষ্টির একটি মাধ্যম হিসেবে দিয়ে দাতব্য ভাব দেখাতে চাচ্ছে। তারা দাবি করছে ভিটামিন-এ ঘাটতি এবং রাতকানা রোগের জন্য এই ধানের ভাত খেতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন-এ পাওয়ার উৎস আমাদের খাদ্য ব্যবস্থার মধ্যেই আছে। আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি বেগুনেও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে বিটি বেগুন। প্রাণের গঠন সংকেতে (Gene) বিকৃতি ঘটাতে সক্ষম সেই ধরনের প্রযুক্তি (Genetic Engineering) ব্যবহার করে বেগুনে বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস (বিটি) ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রিসটাল জিন বেগুনে সংযোজন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে বেগুনের ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ভারতের মহারাষ্ট্র হাইব্রিড বীজ কোম্পানি মাহিকো বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্টোর সহায়তায় বেগুনের জিন বিকৃতির এ কাজটি সম্পন্ন করে ২০০৫ সালে। তারা বলেন, বিটি বেগুন গবেষণা একই সঙ্গে ভারত ও ফিলিপাইনে করা হলেও, এসব দেশে কোন ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।
আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ফিলিপাইনের কোর্টে গ্রীনপিস দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিটি বেগুনের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা বন্ধের জন্যে ২০১৩ সালে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, যে ভারতে ছাড়পত্র পেতে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রথম ফিলিপাইনে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সেখানেও সফল না হয়ে তাদের শেষ চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ।