![পাপুলের শ্যালিকাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা](uploads/2024/05/16/Papul-1715869028.jpg)
আয়কর রিটার্ন ও রেজিস্টারে ঘষামাজা করে আয়-ব্যয় ও সম্পদের বিবরণ পরিবর্তনের অভিযোগে লক্ষীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন সংস্থার উপপরিচালক মশিউর রহমান। এ মামলায় কর অঞ্চল-৪-এর উপ-কর কমিশনার খন্দকার হাসানুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়। আরেক আসামি হলেন- কর অঞ্চল ৮-এর উচ্চমান সহকারী হিরেশ লাল বর্মণ।
এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালে কর সার্কেল-১৬৫ কর অঞ্চল-৮-এর অফিস কর্মচারীদের যোগসাজশে জেসমিন প্রধান ১০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে তড়িঘড়ি করে করবর্ষ ২০১৬-২০১৭ থেকে ২০২০-২০২১ পর্যন্ত ওই দিনে রিটার্ন দাখিল করেন। এ সময় প্রধান আসামি খন্দকার হাসানুল ইসলাম কর অঞ্চল-৮-এর কর্মরত ছিলেন। তার যোগসাজশে কর সার্কেলের রেজিস্টারে জেসমিনের যাবতীয় তথ্য ঘষামাজা করে টাকার অঙ্ক পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হয়।
জেসমিন প্রধানের ২০১৬-২০১৭ থেকে ২০২০-২০২১ করবর্ষ পর্যন্ত মোট পাঁচটি করবর্ষের আয়কর রিটার্নগুলো, রিটার্ন রেজিস্ট্রারে যথাক্রমে ৮৬৮, ৬৫৩, ৭৮০, ১১০১ এবং ৫৬ নং ক্রমিকে এন্ট্রি হয়। রিটার্ন রেজিস্টারের রেকর্ড হতে দেখা যায়, (১) মোট আয়ের কলামে ঘষামাজা, (২) ৭৪ ধারার কর কলামে ঘষামাজা, (৩) ব্যবসায় মূলধন বিনিয়োগ কলামে ঘষামাজা, (৪) হাতে নগদ ও ব্যাংক স্থিতি কলামে ঘষামাজা, (৫) রিটার্ন রেজিস্টারে নিট সম্পদ কলামে ভিন্ন হাতের লেখায় বিভিন্ন সংখ্যা বসানো, (৬) রিটার্ন রেজিস্টারে পারিবারিক ব্যয়ের যে তথ্য লেখা রয়েছে, আয়কর রিটার্নে এর ভিন্নতা রয়েছে।
আয়কর নির্ধারণী আদেশে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রিটার্ন দাখিলের তারিখেই করদাতাকে ওই মাসের ৩১ তারিখে শুনানির জন্য ৭৯ ও ৮৩ (১) ধারায় নোটিশ জারি করা হয়েছিল। সার্কেল কর্মকর্তা খন্দকার মো. হাসানুল ইসলামের কাছে করদাতার পক্ষে আয়কর আইনজীবী মো. আদনান শুনানি করেন। অথচ ২০২০-২০২১ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বরে রিটার্নে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১২৫ টাকা কর পরিশোধ দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে ১৪ ডিসেম্বর পে-অর্ডারে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের গুলশান শাখার মাধ্যমে ওই টাকা জমা করা হয়েছে। নথি অনুযায়ী, ২০১৬-২০১৭ করবর্ষের ৩০ নভেম্বর চালানের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা, ২০১৭-২০১৮ করবর্ষের ২৯ নভেম্বর ৫ হাজার টাকা, ২০২৮-২০১৯ করবর্ষের ২ ডিসেম্বর চেকের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধিত হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইস্যুকৃত চেকের এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা, ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বরের তিন লাখ ৭৯ হাজার ৬৯ টাকার চেক, ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর ইস্যু করা চেকের ছয় লাখ ৭৩ হাজার ২৬২ টাকা এবং ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ৯ লাখ ৬০ হাজার ৬২৩ টাকার চেক সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। আয়কর নথিতে খন্দকার মো. হাসানুল ইসলাম অনুস্বাক্ষরিত ও ক্যানসেল লেখা চারটি চেক সংরক্ষিত জব্দ করা হয়েছে।
করদাতার স্টক ও মাসিক কর নির্ধারণী রেজিস্টার অনুযায়ী, জেসমিনের ২০১৬-২০১৭ করবর্ষে ৮২ ধারায় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০১৭-২০১৮ করবর্ষে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে চার লাখ ৫০ হাজার এবং ২০১৯-২০২০ করবর্ষে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় লেখা রয়েছে। অথচ রিটার্নে ২০১৬-২০১৭ করবর্ষে ৮২ ধারায় আয় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০১৭-২০১৮ করবর্ষে আয় ২১ লাখ ৫০ হাজার, ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার এবং ২০১৯-২০২০ করবর্ষে ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ জেসমিনের রিটার্নের সঙ্গে স্টক এবং মাসিক কর নির্ধারণী রেজিস্টারের কোনো ধরনের মিল নেই।
ফলে কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে আয়কর রিটার্ন এবং রেজিস্টার ঘষামাজা করে আয়-ব্যয় ও সম্পদের বিবরণ পরিবর্তন করায় জেসমিন প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
২০২০ সালের ১১ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম এবং শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকেও আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার ও ১৪৮ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
অর্থ পাচার, মানব পাচার ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ২০২০ সালের জুনে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন পাপুল। কুয়েতে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। একটি মামলা হয় ঘুষ লেনদেন ও মানব পাচারের অভিযোগে এবং অন্যটি অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের দায়ে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় মানব পাচারের দায়ে একই বছর ২৬ এপ্রিল তাকে আরও ৩ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ কুয়েতি দিনারের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থ পাচারের মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
এদিকে ঘুষ লেনদেনের মামলায় কুয়েতের আদালতের কারাদণ্ডের রায়ের নথি পাওয়ার পর ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাপুলের সংসদ সদস্য পদ খারিজ করে জাতীয় সংসদ।