![ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন একপেশে ও উদ্দেশ্যমূলক: সেনাপ্রধান](uploads/2024/05/27/SM-Sofiuddin_Ahmed-1715611344-1716832294.jpg)
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা পাঠানো নিয়ে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি। ডয়চে ভেলের উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
সোমবার (২৭ মে) গাজীপুর সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠান শেষে সেনাপ্রধান কথা বলেন ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে।
জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ রকম একপেশে ও উদ্দেশ্যমূলক একটা প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছি। আশা করছি আমাদের দেশপ্রেম, পেশাদারত্ব এবং সর্বোপরি জাতিসংঘ পরিমণ্ডলে আমরা এতদিন যে দায়িত্ব পালন করে এসেছি, তা চলমান রেখে এই সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, শুধু সেনাবাহিনী নয়, পুরো সামরিক বাহিনী পৃথিবীর ৪৩টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছে। এখনো আমাদের ৬ হাজারের ওপরে শান্তিরক্ষী বাহিনী বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত আছেন। এসব মিশনের কোনো একটার উদাহরণ দিয়ে কেউ বলতে পারবে না কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, কিংবা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে।
সেনাপ্রধান বলেন, আমি নিজে সেন্ট্রাল আফ্রিকার একটি চ্যালেঞ্জিং মিশনের শুরু থেকেই ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার ছিলাম। সেই মিশনে অনেক ধরনের অনিয়ম হয়, এমনকি সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের মতো ঘটনাও ঘটে। সেই মিশনে স্পেশাল রিপ্রেজেনটেটিভ আমাদের সেক্রেটারি জেনারেলেরও চাকরি চলে যায়। অনেক দেশের কনটিনজেন্টদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের কনটিনজেন্টও ছিল একাধিক। কিন্তু একটা অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে আসেনি।‘শুধু আফ্রিকা নয়, এশিয়া-ইউরোপসহ সারা বিশ্বের অনেক জায়গায় এই সামরিক বাহিনী দায়িত্ব পালন করেছে। কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কথা শোনা যায়নি।
তিনি বলেন, আজকে একটা প্রতিবেদন করে বলা হচ্ছে, একজন ব্যক্তি এই অর্গানাইজেশনে থাকা অবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এটা সম্পূর্ণরূপে একটা শোনা কথা। যদি বাস্তবে এটা হয়েই থাকে, সেটা আমাদের কী জানানো হয়েছিল? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যই বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত অবস্থায় কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে, সেটার সঠিক বিচার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এটা যে কেউ যাচাই করে দেখতে পারে। এখন পর্যন্ত যত ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলোতে তদন্ত করে দোষী পাওয়া গেলে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হয়।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, সেনাবাহিনী যখন জাতিসংঘের মিশনে কোনো শান্তিরক্ষী পাঠায়, তখন খুব কমপ্রেহেনসিভ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আমাদের বাছাই পদ্ধতি, ট্রেনিং দেওয়া, লজিস্টিকস সাপোর্টসহ সব কিছু খুবই পেশাদারিত্বের সঙ্গে করা হয়। তাই এখানে কোনো ধরনের অভিযোগের সুযোগ নেই। তারপরও এই ধরনের প্রতিবেদন যারা করছে, তারা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের কাজ যথোপযুক্তভাবেই করে যেতে চায়। তারপরও অসাধু উদ্দেশ্য নিয়ে যারা এই সব করার চেষ্টা করছে, তাদের আমরা সম্পূর্ণরূপে ভুল প্রমাণ করতে চাই।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা পাঠানো নিয়ে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে তথ্যচিত্র প্রচার করেছে সম্প্রতি। সেখানে শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্ন তোলা হয়। এরপর এ নিয়ে একটি প্রতিবাদলিপি দিয়েছে সেনা সদর। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআরের মাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে সেনা সদর বলেছে, ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রটি পক্ষপাতমূলক ও একপেশে। এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ। তথ্যচিত্রটি তৈরিতে ডয়চে ভেলে সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য নেয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল প্রতিবাদলিপিতে।
সেনা সদর জানিয়েছিল, ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেনাবাহিনীর ফুটেজ ব্যবহার করেছে। একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানহানি করাই এর মূল্য উদ্দেশ্য। এটি একটি পক্ষপাতদুষ্ট অভিপ্রয়াস, যা ডকুমেন্টারিটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিনষ্ট করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কঠোর নির্বাচন এবং যাচাইকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সবচেয়ে যোগ্য ও দক্ষ সদস্যদের মোতায়েন নিশ্চিত করে। তথ্য বলছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৩১ জন বীর সেনানী সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন এবং ২৩৯ জন আহত হয়েছেন। সেনা সদরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগমুক্ত, যা একটি দৃষ্টান্তমূলক অর্জন।