![আইনজীবীর পরামর্শে কথা বলছেন না বেনজীর](uploads/2024/06/01/Benjir-Anmed-1717224448.jpg)
দুর্নীতি নিয়ে বিতর্কের মুখে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ কোথায় আছেন, তা নিয়ে দেশজুড়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কেউ বলছেন, তিনি ঢাকার গুলশানের বাসায়ই (গুলশান-১ নম্বরের র্যানকন আইকন টাওয়ার) রয়েছেন। আবার কারও মতে, তিনি গোপনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে তিনি কোথায় আছেন, সরকার বা পুলিশের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে কোনো তথ্য মিলছে না। তবে পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছে, বেনজীর ঢাকাই আছেন। কিন্তু আইনজীবীর পরামর্শে তিনি কোনো কথা বলছেন না। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকে গণমাধ্যমে তিনি কোনো কথা বলেননি।
তবে বেনজীরের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সেক্রেটারি শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘আমি জানি না তিনি কোথায় আছেন।’
পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তারা জানান, তদন্ত এবং কৌশলগত কারণে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব নয়।
শুক্রবার (৩১ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনে অভিযুক্ত বেনজীরের দেশত্যাগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি বলেছেন, বেনজীর বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যেই আছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার পর আদালত ঠিক করবেন, কখন তাকে গ্রেপ্তার করবেন, জেলে পাঠাবেন।
বেনজীর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ইতোমধ্যে টাকা তুলে ফেলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি অবহিত নই, এটা আইনের বিষয়। দুদক বলছে, তারা টের পেয়েছে, দুদক সেটা প্রমাণ করুক।’
বেনজীরের আরেক আস্থাভাজন বন্ধু বলেন, তিনি এখন রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের র্যানকন আইকন টাওয়ারের অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। তিনি খুব কমই বাইরে যান।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগ ওঠার পর গত ২৬ মে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই দিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়। তা ছাড়া বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মির্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা (৯১ একর) জমি এবং বেনজীরের পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেন আদালত। বেনজীর আহমেদের পরিবারের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করার আদেশও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি ডিএমপি কমিশনার ও র্যাব ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আইজিপি পদে থাকার সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন বেনজীর আহমেদ। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও কয়েকজন ব্যক্তিও নিষেধাজ্ঞার শিকার হন।
অবসরে যাওয়ার পর থেকে বেনজীর আহমেদ প্রাথমিকভাবে তার কর্মজীবন এবং পুলিশ-জীবন সম্পর্কে দুটি বই লেখেন। এর একটি তার আত্মজীবনী। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে তার ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট’-এও সময় দিয়েছিলেন তিনি।