মায়ানমার মংডু শহরে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যুদ্ধের মধ্যে মংডুর হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিজ গ্রাম থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন টেকনাফ সীমান্তে বসবাসকারীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাত ৮টা থেকে সারা রাত মংডুর কয়েকটি গ্রামে চলছে ব্যাপক যুদ্ধ। মংডুতে চলমান যুদ্ধে মায়ানমারের জান্তা বাহিনী জল-স্থল ও আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর।
রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানা যায়, মংডুতে যুদ্ধ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। হাদিবিল, নুরুল্লাপাড়া, হাইরপাড়া, মুন্নীপাড়া, সাইরাপাড়া, ফাতনজা, ফেরানপ্রু, সিকদারপাড়া, হারিপাড়া, হেতিল্লাপাড়া, নলবইন্না গ্রামে আরকান আর্মি অবস্থান নেওয়ায় জান্তা বাহিনী হামলা চালাচ্ছে। এতে অনেক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। অনেক রোহিঙ্গা গ্রাম থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু পালিয়ে অন্য গ্রামে বা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছে।
সরকারি বাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দার শাহ আলম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৮টার পর থেকে মংডু থেকে মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়। রাত ১১টার পর থেকে মায়ানমার ওপারে ভারী মর্টারশেল, বিমান হামলা, গুলির শব্দে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। এরকম শব্দ মায়ানমারে যুদ্ধ হওয়ার পর থেকে শুনিনি।’
সীমান্তে বসবাসকারী রাজিয়া বেগম বলেন, ‘মায়ানমারের বোমা ও গুলির শব্দের মাটি কেঁপে উঠছে। ভয়ে সারা রাত না ঘুমিয়ে বসে আছি। এমন শব্দ কোনো দিন শুনিনি। কখন শেষ হবে যুদ্ধ আর কতদিন লাগবে আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে!’
ডেইলপাড়ার বাসিন্দার ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে। মায়ানমারের চলমান যুদ্ধের বোমা ও মর্টারশেলের আওয়াজ কোনো দিন এভাবে শুনিনি।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সারা রাত মায়ানমার ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিকট শব্দ শোনা যায়। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থা রয়েছে। তবে আমরা সীমান্তের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি।’
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, মায়ানমারে চলমান সংঘাতের কারনে নাফ নদী সীমান্ত দিয়ে নতুন করে যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে ২৪ ঘণ্টা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
এদিকে, মায়ানমারের যুদ্ধের কারণে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, কায়ুকখালীপাড়া, জালিয়াপাড়া, কুলালপাড়া, অলিয়াবাদ, কলেজপাড়া, ইসলামাবাদ, পুরাতন পল্লানপাড়া, ডেইলপাড়া, খাংগার ডেইল, শীলবনিয়াপাড়া, চকবাজার, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, সাবরাংমগপাড়া, আছারবনিয়া, ডেগিল্ল্যা বিল, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া, উত্তরপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, পশ্চিমপাড়াসহ গ্রামগুলোয় মর্টারশেল ও বোমার বিকট শব্দে বাড়ি-ঘর কাঁপছে। আতঙ্কে রয়েছে সীমান্ত এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
শাহীন/অমিয়/