![গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধ অংশ](uploads/2024/06/27/Sadek_Agro-1719503570.jpg)
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আলোচিত সেই সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের একটি অংশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধার অভিযানের সময় অবৈধ ওই অংশ গুঁড়িয়ে দেয় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। অভিযান চলাকালে আলোচিত ছাগলকাণ্ডের সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন খামারের কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার পর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কসংলগ্ন সাতমসজিদ আবাসিক এলাকায় এই অভিযান শুরু করে ডিএনসিসি।
অভিযানের সময় ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলমসহ ডিএনসিসির বেশ কয়েক জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের একপর্যায়ে খামারের আবাসিক কয়েক জন কর্মচারী বাধা দিলে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এর আগে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ‘উচ্চবংশীয়’ ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন এনবিআরের সদ্য সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। ইফাতের এই ছাগলকাণ্ডের তথ্য ফেসবুকে তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আবদুল্লাহ। তবে বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ছাগলটি আর কেনেননি ইফাত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিএনসিসির অভিযান শুরুর আগেই সকাল ১০টা থেকে রামচন্দ্রপুর খাল ভরাট করে বসানো বস্তির বাসিন্দারা ছাউনির টিন-বাঁশ-কাঠ খুলে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। বেলা ১১টার দিকে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার জন্য খামারটির সামনে সিটি করপোরেশনের ভারী যন্ত্র আনা হয়। এ সময় একই সঙ্গে পেছনের দিকে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলোও ভাঙার কাজ শুরু করে ডিএনসিসি।
এর আগে গত ১৮ জুন, এক নোটিশে খালে বর্জ্য না ফেলতে সাদিক অ্যাগ্রোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরপর খাল পরিষ্কার অভিযান চালানো হবে।
খালের জায়গা দখল করে প্রায় ১৭ বছর বসবাস করছেন মরিয়ম। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘থাকার জায়গা না থাকায় অবৈধভাবে এখানেই ছিলেন। নিজের টাকায় ঘর তুলেছিলেন তিনি। এখন উচ্ছেদের খবর পেয়ে ঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন।’
খামারের কর্মচারী পরশ জানান, আলোচিত সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে খামারে এখনো অনেক গবাদিপশু রয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, এখানে উন্নত জাতের অনেক গবাদিপশু বিক্রি করা হয়ে থাকে, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই দামও চড়া।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই ফার্মে যেসব পশু বিক্রি করা হয়, তার দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। সরকার মাংসের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা এখানেও মানা হচ্ছে না। মাংসের ওজন হিসাব করে পশু কিনে থাকেন বেশির ভাগ ক্রেতা। তবে এখানে তা মানা হয় না। ইচ্ছেমতো দাম হাঁকানো হয়।
এদিকে ছাগলকাণ্ডের সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলটি যশোরের বাজার থেকে মাস দুয়েক আগে ১ লাখ টাকায় আনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাগলটি বিদেশি বিটল জাতের বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পরেই তা কেনার জন্য অগ্রিম এক লাখ টাকা দেন ইফাত।
গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইনচার্জ মো. শরীফ। তিনি বলেন, ছাগলটি যশোর থেকে আনা হয়। এ ছাড়া এটি দেশি জাতের ছাগল।
উচ্ছেদ অভিযানের সময় সেখানে আসেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ-ইমরান। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, গতকাল বুধবার থেকেই শুনছি খামারটি উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু খামারের সামান্য অংশ খালের পাশে পড়েছে। সেটি ভাঙা হচ্ছে, পুরো খামার নয়। গণমাধ্যমে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।
অভিযান শেষে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অভিযান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, বরং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘রামচন্দ্রপুর খালের দুই পাড়ে যেসব অবৈধ দখলদার ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। খালের জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে এখান থেকে উত্তর সিটির মেয়র ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়েছেন, বহুতল ভবন ভেঙেছেন। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযান। দখলদারদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, সাদিক অ্যাগ্রোর মালিককে ঈদের আগেও আমরা নোটিশ দিয়েছি। অবৈধ স্থাপনা থাকলে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আমরা ঈদের আগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করিনি। কারণ, এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতো।
অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ৭ নম্বর সড়কে সাদিক অ্যাগ্রোর আরেকটি খামারেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। সেখানে থাকা সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
ডিএনসিসি গতকাল সব মিলিয়ে ৬০টির বেশি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে ১০ বিঘা জমি উদ্ধার করেছে।