দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকারের অবস্থান জাতীয় কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আজকাল সংবাদপত্রে দৃষ্টি দিলেই বেনজীর, মতিউর, আছাদুজ্জামান আরও কত নাম আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই সমস্ত দুর্নীতির মহানায়করা সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বড় বড় সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকল কীভাবে? এর উত্তর কি প্রধানমন্ত্রী দিতে পারবেন? তাহলে কি কোনো ভাগ-বাটোয়ারার কারণে এই সমস্ত নিষ্ঠুর পুলিশ কর্মকর্তাদের সব গোপন বিষয় ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে? আসলে গায়ে দুর্নীতির কালিমাখা আওয়ামী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা জাতীয় কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয়।’
বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ ছাড়া বুধবার খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে জেলাভিত্তিক সমাবেশ চলাকালে নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানান রিজভী।
দুদকের কোনো শক্ত মেরুদণ্ড নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের নির্দেশমতো বিরোধী দলকে নির্যাতন করা আওয়ামী-দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ। তা না হলে বিগত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লুটপাটের সরকার যে অনিয়ম, অপচয় এবং মহাদুর্নীতিকে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্পেটের তলায় ঢেকে রাখে, সেই কমিশনারদের দ্বারা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ পুলিশ এবং সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হবে বলে জনগণ বিশ্বাস করে না।’
তিনি বলেন, “পর্দাকাণ্ড, বালিশকাণ্ড থেকে শুরু করে মতিউর-কাণ্ড পর্যন্ত অসংখ্য কাণ্ড-কারখানা এবং পাচারকৃত লুটের টাকার অনুসন্ধানে উদাসীনতা দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জনগণ দেখে আসছে। অথচ দুদক ‘রিপ ভ্যান উইংক্যাল’-এর মতো ঘুমিয়ে থেকেছে। জনগণের টাকার একচেটিয়া লুণ্ঠন ও আত্মসাৎকারীদের ডামি আওয়ামী সরকার মাফ করে দিয়েছে।”
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘ট্রানজিট ও এশিয়ান হাইওয়ের নামে শেখ হাসিনা মূলত ভারতকে করিডোর দিচ্ছেন। এটি চিরদিনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের ক্রীতদাস বানানোর গভীর অভিসন্ধি। রেলওয়ে করিডোর স্থাপনের চুক্তি তারই প্রতিফলন। বিএনপির শাসনামলে কোনো ট্রানজিট আদায় করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ভারতের নীতি নির্ধারকরা বাংলাদেশ এবং জনগণকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে। অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যিক ভারসাম্যসহ নানা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী নয় তারা।’
রিজভী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের বুকচিরে রেললাইন স্থাপন দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করার শামিল।’
তিনি বলেন, ‘গত সোমবার থেকে দেশের সব মহানগর ও বুধবার দেশের সব জেলা শহরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী সরকার। ব্যর্থ আওয়ামী সরকার পুনরায় গুমের মতো নৃশংসপন্থা অবলম্বন করে আবারও জনমনে ভীতি তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নাটোরে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাটোর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা শ্রমিকদলের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, পৌর বিএনপি আহ্বায়ক চপল, পৌর বিএনপি নেতা হিপলু, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মিজান, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং কলাপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন সিকদার, মুশফিকুর রহমান লিটু বিশ্বাস, সুমন গাজী, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুল ইসলাম দীপু, রাঙ্গাবালী স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। এ ছাড়া বাগেরহাগ জেলা বিএনপির সমাবেশে হামলা হয়েছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর শিশু হাসপাতাল থেকে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মারজুক আহমেদ, আল-আমিনকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এখনো তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবিলম্বে তাদের জনসম্মুখে হাজির করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শফিকুল ইসলাম/সালমান/