![ঢাকা উত্তর আ.লীগে পদ-বাণিজ্য: ‘কল রেকর্ড’ ফাঁস করেন সাবেক এমপি হাবিব](uploads/2024/07/01/mp-1719815461.jpg)
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের অর্থের বিনিময়ে দলীয় পদ দেওয়ার একটি ‘কল রেকর্ড’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই কল রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার পেছনে মূল কলকাঠি নেড়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি হাবিব হাসান। দুজনই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা। কল রেকর্ডটি ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই হাবিবের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের কাছে বিচার দেওয়ার কথা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন শেখ বজলুর রহমান।
গত ২৬ জুন ‘আ. লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি- সভাপতি বজলুর অর্থ লেনদেনের অডিও ফাঁস’ শিরোনামে খবরের কাগজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে শেখ বজলুর রহমানের পদ বাণিজ্যের এই কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। খোদ সভাপতির এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারাও। ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ফোনালাপে শোনা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের শীর্ষ পদ পেতে আকবর আলী নামের এক নেতা শেখ বজলুর রহমানের মোবাইলে ফোন করেন। সেখানে ওয়ার্ডের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আকবর আলী নগর সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের এই কল রেকর্ড ফাঁস হওয়ার নেপথ্যে রয়েছেন একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান। গতকাল সেই পদপ্রার্থী আকবর আলীর সঙ্গে সাবেক এমপি হাবিব হাসানের একটি ফোনালাপ খবরের কাগজের কাছে এসেছে। অডিও বার্তাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর আগে সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা আকবর আলী ১০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে দলীয় পদ নেওয়ার কথা বলেন। আকবর আলী কৌশলে এই কলটি রেকর্ড করে সাবেক এমপি হাবিব হাসানের কাছে পাঠান। হাবিব হাসান এই রেকর্ডটি বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল করেন। সে কথা আবার সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের কানেও পৌঁছে যায়। এরপর হাবিব ও আকবরের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন শেখ বজলুর রহমান।
‘হাবিব ও আকবর আলীর নতুন ফাঁস হওয়া ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডটিতে শোনা যায়, আকবর আলী বলছেন, ভাই এইডা কি হইলো ভাই, বুঝলাম না!
হাবিব হাসান: কোনডা ভাই?
আকবর: এই যে ওই দিন বজলু ভাইয়ের লগে যে কথা বললাম। আমনের (হাবিবের) অফিসে আমারে নিয়ে- গিয়া- ডাইক্কা কথা বললাম, তয় রেকর্ডটা এই সাংবাদিক পুরা ভাইরাল করে দিলো! দুই জনের ছবি দিয়া। এডার কী জবাব দিই? বজলু ভাই ওনে (এখন) ফোন দিছে, আমি কী জবাব দিই? কন তো। ক্যারুম (কেমন) প্যাঁচের ভিত্তে পড়লাম! ভাই?
হাবিব হাসান: চুপ-চাপ বয়ে (বসে) থাকেন গা। ফোন বন্ধ করে বয়ে থাকেন গা।
আকবর: আমনে তো আমারে আশ্বাস দিতে হইবো, আমি তো রেকর্ডটা শুধু আমনেরে (আপনাকে) দিছিলাম। আর তো কেউরে দিছি না। যেমনে হোক আমনে (আপনি) তো আমার নলেজে দিবেন যে- আকবর ভাই কেউ ফোন দিলে ধরবেন না। চুপ-চাপ আপনে বয়ে (বসে) থাকেন, যা করার আমি করতাসি, তাইলে বুঝি আমার ভাই কাজ করতাছে আমার লাইগা।
হাবিব হাসান: আপনে ফোন বন্ধ করে বয়ে থাকেন।’
এর পরে দুই নেতা আরও কিছু কথা বলেন।
এই কল রেকর্ডের বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি হাবিব হাসান এবং আকবর আলীকে একাধিকবার কল করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। মেসেজের কোনো জবাব দেননি। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক নেতা ও হাবিব হাসানের ঘনিষ্ঠ একজন কল রেকর্ডটি তাদের বলে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে হাবিব ও আকবরের কল রেকর্ডটি শুনেছেন বলে জানান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে চাইলে সব কিছু করতে পারি না। আমরা এই পদে থেকে অনেক কিছুই করা যায় না। তাই আমি দলীয় হাইকমান্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে।’ অবশ্য তিনি ইতোমধ্যে থানায় জিডি করেছেন বলে জানা গেছে।