![সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি এক কথা নয়: ওবায়দুল কাদের](uploads/2024/07/01/Obaidul_Quader-1719849923.jpg)
ভারতের সঙ্গে সরকার চুক্তি করেছে- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি কি এক? পড়াশোনা করেন না? ডিপ্লোমেসির ভাষা জানেন না? জেনে নেন- সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি এক কথা নয়।’
সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এই সভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে পদ্মা সেতুর জন্য সমঝোতা স্মারক করেছি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করেছি। আমরা যদি চুক্তি করতাম, তাহলে বাধ্য হতাম পদ্মা সেতু নির্মাণের দায়িত্ব তাদের দিতে।’
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব সমস্যার সমাধান হয়নি, ভারতের নতুন সরকার তা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছে। আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে।’ তিস্তার পানি চুক্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি হতে হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘মমতাকে রাজি করাতে হবে। তিনি এতদিন না বলে আসছেন। তাকে ‘হ্যাঁ’ বলাতে হবে। না হলে ভারতের সংবিধান এটি অ্যালাও করবে না। তাদের রাজ্যকে বাদ দিয়ে ভারত সরকারের এই চুক্তি করার সুযোগ নেই।’
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছা করলে কোনো রাজ্য সরকারের অধীনের পানি অন্য দেশকে দিতে পারে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যখন গঙ্গার পানি দিল, তখনকার পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতি বসু সরকার ছিল। তারা রাজি ছিল বলেই আমরা পেয়েছি।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সব নাকি ইন্ডিয়া হয়ে গেছে। গেল রে গেল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব গেল! ৫৩ বছর স্বাধীনতা নিয়ে আমরা টিকে আছি। কোথায় যাব? ভারত আমাদের বন্ধু, আর তোমরা ভারতের দাসত্ব চেয়েছিলে। নরেন্দ্র মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন বিএনপির নেতারা সকালে মিষ্টি আর ফুল নিয়ে হাজির। এই হচ্ছে বিএনপি। তারা এখন ভারত বিরোধিতা করে। তারা ওয়াশিংটনে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করার অঙ্গীকার দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল ২০০১ সালে।’
বিএনপি নেতাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের মনে অশান্তির আগুন। রাতে লন্ডন থেকে ফরমান এসেছে। অমুক আউট, অমুক ইন। এখন ইন-আউট চলছে বিএনপিতে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এখন অবিশ্বাস। বিএনপিতে একজন আরেকজনকে বলে সরকারের এজেন্ট। আন্দোলন তাহলে কারা করবে? বিএনপির কর্মসূচি ভুয়া।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছেন বলেই আজ ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়, আরেকটা বাংলাদেশের সমান সমুদ্রসীমা আমরা ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পেরেছি, শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে।’
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-পরবর্তী কোনো সামরিক পেট থেকে বেরিয়ে আসা দল নয়। এই দল পাকিস্তানের নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে এই দেশের মানুষকে মুক্তির জন্য গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বিএনপির সমালোচনা করে নানক বলেন, বিএনপির নেতারা বলেন শেখ হাসিনা নাকি ভারতের তাঁবেদার, ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে চান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিহাসকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দিল্লিতে গিয়ে পা ধরেছিলেন, আপনাদের খালেদা জিয়া মোদি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন রসগোল্লা খাইয়েছিলেন। সে কথা মানুষ ভুলে যায়নি। আন্দোলনের নামে আবার কোনো ষড়যন্ত্র হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর জবাব দেবে।
আজ বেলা ৩টায় আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে আধা ঘণ্টা পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। উত্তর আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ থেকে অনুষ্ঠানটি ‘আলোচনা সভা’ নাম দিলেও বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সেটি জনসভায় রূপ নিতে দেখা যায়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিকসহ মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন।