![আইনের তোয়াক্কা করছেন না প্রার্থীরা](uploads/2023/12/27/1703654326.election-law.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বাকি আর মাত্র ১০ দিন। দেশের সব এলাকায় প্রার্থীরা নেমেছেন নির্বাচনি প্রচারে। চলছে মিছিল, সভা-সমাবেশ। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রচারে নানারকম কৌশল অবলম্বন করছেন অনেকেই। তবে কারও কারও আচরণ হচ্ছে বেপরোয়া। এতে নির্বাচন কমিশনের জারি করা আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ফলে নির্বাচন কমিশনও বসে নেই।
প্রার্থী যত প্রভাবশালী হোন বা মন্ত্রীই হোন না কেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে যে-কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তো কঠোর অবস্থানের পরেও থামছে না আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। এমন প্রেক্ষাপটে দোষী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা, তলব, কারণ দর্শাও নোটিশসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ইসি।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনি আচরণবিধি ও সংঘাতের ঘটনায় বেশি জড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েট প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। নির্বাচন কমিশন একের পর এক প্রার্থীদের শোকজ করে যাচ্ছে, তলব করছে কাউকে কাউকে। বাড়ছে মামলার সংখ্যাও। তবে মামলায় কতটা সমাধান আসবে তা নিয়েও সন্দিহান বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনে ফৌজদারি অপরাধে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। আগেও আমরা বাতিল করেছি। এসব ঘটনায় মামলা করে বা প্রার্থিতা বাতিল করেও খুব বেশি লাভ হয় না। অনেক সময় হাইকোর্ট আবার তাদের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন। অথবা মামলার নিষ্পত্তি হতে হতে ওই প্রার্থীরা এমপি হয়ে যান। এ জন্য বিধিবিধানের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে আচরণবিধি মেনে চলায় প্রার্থীদের বাধ্য করা জরুরি’।
ইসির আইন শাখার তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত আড়াইশতাধিক প্রার্থীকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে বর্তমান মন্ত্রী-এমপিও আছেন। নোটিশে কাজ না হওয়ায় অন্তত ১০ জন প্রাথীকে তলব করা হয়েছে। তিন বার নোটিশের জবাব দেওয়ার পরও একইভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছেন কেউ কেউ। তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এ অবস্থায় কেউ কেউ প্রার্থিতা বাতিলের ঝুঁকিতে আছেন।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে গতকাল চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এর আগে তাকে শোকজ করা হয়েছিল। তিনি নিজেকে না শুধরিয়ে ফের আচরণবিধি ভঙ্গ করেন। পঞ্চগড়-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে শোকজ করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। রাজবাড়ী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী হককেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব শোকজের জবাব দিতে নির্বাচনি আদালতে হাজির হন এবং ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন। রাজশাহী-৬ আসনের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, কুমিল্লা-৬ আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে ইসিকে সুপারিশ করেছেন জেলা অনুসন্ধান কমিটি। বাহারের মতোই প্রার্থিতা বাতিলের ঝুঁকিতে আছেন। বরগুনা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু। একাধিকবার অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে তাদের তলব নোটিশ করে নির্বাচন কমিশন। ‘কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না’ তার ব্যাখ্যা দিতে ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে নির্বাচন ভবনে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কুষ্টিয়া-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী মাহবুবউল আলম হানিফ, ফরিদপুর-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরী, মানিকগঞ্জ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম, চাঁদপুর-২ আসনের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, নড়াইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাগুরা-১ আসনের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে বিধি ভঙ্গের দায়ে শোকজ, জরিমানা ও সতর্ক করেছে ওই সব আসনের নির্বাচনি তদন্ত কমিটি।
সংঘাতে নিহত ৩, আহত দেড়শতাধিক: আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি কয়েকটি আসনে সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার শিবির ও মিছিলে হামলা, কর্মীদের মারধর, হুমকি ও সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। গেল ১০ দিনে প্রায় ৫০টি আসনে অর্ধশতাধিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন অন্তত তিনজন ও আহত হয়েছেন দেড়শতাধিক মানুষ।
গত শুক্রবার ২২ ডিসেম্বর রাতে মাদারীপুর-৩ আসনের কালকিনি উপজেলায় হামলার ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের কর্মী এসকানদার খাঁ (৫০) মারা যান। ৯ ডিসেম্বর পিরোজপুর সদরের বটতলা এলাকায় নৌকার সমর্থকদের হামলায় আহত লালন ফকির নামে এক যুবক দুদিন পর মারা যান। গত ১৯ নভেম্বর ময়মনসিংহ-৪ আসনের সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়নের অস্থায়ী নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী রফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। রফিকুল ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আমিনুল হকের সমর্থক।