![‘চ’ বগির সিট থেকে আগুনের সূত্রপাত](uploads/2024/01/06/1704557483.Train.jpg)
“বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘চ’ বগির পেছনের বগিতে দাঁড়িয়ে আসছিলাম আমি। এদিকে মানুষজন চিল্লাই (চিৎকার) উঠছে, আগুন ধরছে, আগুন ধরছে। তাকিয়ে দেখি কোচ ধোঁয়াতে অন্ধকার হয়ে গেছে। তখন আমার মাথায় বুদ্ধি এল, চেইন টান দিতে হবে। ধোঁয়ার কারণে চেইন খুঁজে পাই না। পরে ভিড় ঠেলে আরেক বগিতে গিয়ে চেইন ধরে টান দিয়ে ট্রেন থামালাম।” একটানা কথাগুলো বললেন ওই ট্রেনের যাত্রী পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ আলী।
রেল পুলিশ সূত্র জানায়, ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছানোর পর আগুন লাগে। প্রথমে একটি বগিতে লাগলেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে চারটি বগিতে। এরপর আধা ঘণ্টার মধ্যে মূল বডি থেকে ইঞ্জিন আলাদা করে ফেলা হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন র্যাব সদস্যরাও। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন যাত্রীরা। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে যাত্রীরা ট্রেনের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় নিচে নেমে আসেন। তবে এ সময় অনেক যাত্রী ভেতর থেকে বের হতে পারেননি। এ ঘটনায় ৪ জন মারা গেছেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ট্রেনে যারা ছিলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। জানার চেষ্টা করছি আগুন কীভাবে লেগেছে? কারা আগুন দিতে পারে? তারা আমাদের কিছু তথ্য দিয়েছেন। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি বড় ধরনের একটি নাশকতা মনে হচ্ছে। এ ঘটনায় নাশকতাকারীরা কোনো ধরনের বোমা বা কেমিক্যাল ব্যবহার করছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন বিএনপির নেতারা। সে অনুযায়ী তারা ভিডিও কনফারেন্সে একটি মিটিং করেন। ১৭ মিনিটের ওই মিটিংয়ে ট্রেনে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়।
অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের সিআইডির ফরেনসিকের একটি বিশেষজ্ঞ দল ও ক্রাইম টিম কাজ করছে। কিছু আলামত পাওয়া গেছে, সেগুলো নিয়ে সিআইডি কাজ করছে।’
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার বলেন, ‘ঘটনাটি পিবিআই খতিয়ে দেখছে। তবে নাশকতার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের তদন্ত টিম কাজ করছে।’
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা খান জানান, ট্রেনে আগুনের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে ঢাকা বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী মো. সৌমিক শাওন কবিরকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা একটি মামলা করছি। ওই ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) এস এম নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন।’
উল্লেখ্য, ১৫৪ জন যাত্রী নিয়ে শুক্রবার দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে কমলাপুর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসে ট্রেনটি। যাত্রাপথে ১১টি স্টেশনে বিরতি নেয় বেনাপোল এক্সপ্রেস। ট্রেনে কমলাপুরগামী যাত্রী ছিলেন ৪৯ জন। ট্রেন ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রাত ৯টার দিকে। এর মধ্যে রাজধানীর গোপীবাগে পৌঁছালে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের চারটি বগি পুড়ে যায়। এ ঘটনায় চারজন পুড়ে মারা যান।
এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির লালবাগ ও ওয়ারী বিভাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ, যুবদল নেতা কাজী মনসুর আলম, মো. ইকবাল হোসেন স্বপন, মো. রাসেল, দেলোয়ার হাকিম বিপ্লব, মো. সালাউদ্দিন, মো. কবির ও মো. হাসান আহমেদ।
অন্যদিকে এ ঘটনার পর রাজধানীর জুরাইন রেলগেটসংলগ্ন রেললাইনের পাশের বস্তির একটি বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ককটেল, বোমা এবং বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে র্যাব।