![ভোট-পরবর্তী ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে নানা আলোচনা](uploads/2024/01/06/1704559518.bd map & flagkk.jpg)
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে কী হবে, সেটি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব আলোচনায় সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাসহ বাংলাদেশ কী কী কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেই আলোচনায় যুক্ত হয়েছেন খোদ শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারাই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবারও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ প্রচণ্ড শত্রুতার মুখে। দেশে শত্রু, বিদেশেও শত্রু।’ তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আটলান্টিকের ওপারের নিষেধাজ্ঞাকে ভয় পান না। নিষেধাজ্ঞার বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরি পোশাকে নিষেধাজ্ঞা দিলে সেই সব দেশও বিপাকে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র তার পেছনে লেগে আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বীকার করেছেন নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের চাপে আছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য বাঁচাতে হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। এর কিছুদিন পর সম্প্রতি সিইসি নিয়মিত বলছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারলে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তিনি ছাড়াও একজন নির্বাচন কমিশনারও এমন কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না নির্বাচন কমিশনাররা এমন কথা কেন বলছেন। সম্ভবত তারা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তবে তারা এটি বলতে পারেন না। এগুলো বলার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রসচিব আছেন।’
চলছে নানা ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণ
ব্রাসেলসভিত্তিক একটি অলাভজনক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতের পাশাপাশি সম্ভাব্য সংকটগুলো নিয়ে পূর্বাভাস ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে সংস্থাটি। সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে এই সংস্থার পূর্বাভাস হলো, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে চীন-ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বাড়বে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
এ ছাড়া নির্বাচনের এত কাছাকাছি এসে ভারতের ভূমিকা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা চলছে কূটনৈতিক মহলে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতের মিল হচ্ছে না। গত নভেম্বরে নয়াদিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে তা দিল্লির পক্ষে যায়। এর পর থেকে দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। তা ছাড়া নানাভাবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই ভারত চায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেশটির জনগণই ঠিক করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এ জন্য নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যারা বাধা দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে দেশটি। এই জায়গাতেই মূলত ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের অমিল বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন বলছেন, ‘পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে। যেহেতু ইন্দো-প্যাসিফিকে দেশটির আগ্রহ অনেকটা বেড়েছে, সব ক্ষেত্রে হয়তো সেটি ভারতের চাওয়ার সঙ্গে মেলে না।’
অন্যদিকে বাংলাদেশকেন্দ্রিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে চীনেরও। ভারতও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের ওপর বেশি চাপ দিলে দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সম্প্রতি বলেছেন, নির্বাচনের পর বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্প নিয়ে এগোতে চায় চীন। ইয়াও ওয়েন এমনটি বললেও বিষয়টি অত সহজ নয় বলেও মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
ইয়াও ওয়েনের পূর্বসূরি লি জিমিং ঢাকা ছাড়ার আগে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে সরাসরিই বলেন, ‘আমি খোলামেলাভাবে বলতে চাই, এ প্রকল্প ঘিরে স্পর্শকাতরতা আছে, আমরা সেটি লক্ষ করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ যদি শেষ দিকে এসে এই প্রকল্পে তার অবস্থান পরিবর্তন করে, কেউ এসে যদি বলে- এটি চীনের আরেকটি ঋণের ফাঁদ হবে, তাহলে আমাদের জন্য বিব্রতকর হবে।’ তার পর থেকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত, চীন ও বাংলাদেশ কেউই কথা বলেনি। সম্প্রতি চীনই নীরবতা ভেঙে বলেছে, তারা নির্বাচনের পরই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায়।