![জেন্ডার বাজেট: টাকায় বাড়লেও জিডিপিতে কমছে বরাদ্দ](uploads/2024/06/08/Budget-2024-24-1717826213.jpg)
নতুন অর্থবছরে জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা যা চলতি অর্থবছরে আছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে ১২ হাজার ১২৮ কোটি টাকা বেড়েছে নতুন জেন্ডার বাজেট। শতকরা হিসাবে এটি মোট বাজেটের ৩৪ দশমিক ১১ শতাংশ, যা চলতি বছরে আছে ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ অর্থাৎ শতকরা হারে মাত্র ০ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়েছে জেন্ডার বাজেট। আর জিডিপির শতকরা হারের দিকে তাকালে দেখা যায়, নতুন বাজেটে জিডিপির ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ পেয়েছে জেন্ডার বাজেট, যা চলতি বাজেটে আছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ অর্থাৎ জিডিপিতে কমেছে ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগামী বাজেটে জেন্ডার বাজেটের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এখানে উন্নয়ন ব্যয় কম আর পরিচালন ব্যয় বেশি।
মোট ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগকে এই জেন্ডার বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নতুন অর্থবছরে। জেন্ডার বাজেটের গুরুত্ব বোঝাতে ‘সমতার পথে অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে এবার জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকার নারীদের দক্ষ কর্মশক্তিতে রূপান্তরকে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছে এই বাজেটে। এ জন্য এবার চারটি মূল থিমেটিক এরিয়াসহ মোট ৫টি এরিয়ায় ভাগ করা হয়েছে এবারের জেন্ডার বাজেট। এরিয়াগুলো হলো- ১. নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, ২. অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সমতা, ৩. সরকারি পরিষেবাগুলোতে নারীদের কার্যকর প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করা, ৪. নারী উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ। এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের যে সমস্ত কার্যক্রমে জেন্ডার-সংবেদনশীল বরাদ্দ নেই তা নির্ণয় করে এই প্রধান চারটি বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি একটি অতিরিক্ত বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্র ৫. ‘জেন্ডার প্রাসঙ্গিক নয়’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঘোষণা অনুযায়ী নারীদের দক্ষ কর্মশক্তিতে রূপান্তর করতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে নারী উন্নয়নের জন্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ থিমে। আসছে অর্থবছরে নতুন সংযোজিত এই থিমে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৬ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা, যা জেন্ডার বাজেটে ৩২ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সমতা’ খাতে ৭৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। যা জেন্ডার বাজেটে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। বরাদ্দের দিকে থেকে এর পরের অবস্থানে আছে ‘নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি’ থিম- যেখানে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। যা জেন্ডার বাজেটে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম বরাদ্দ পেয়েছে ‘সরকারি পরিষেবাগুলোতে নারীদের কার্যকর প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করা’ থিম, যার বাজেট ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৯ কোটি টাকা।
থিমভিত্তিক বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ‘নারী শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন’ খাতে। এ খাতে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৫৯ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। এর পরই গুরুত্ব পেয়েছে ‘শ্রমবাজার এবং আয়বর্ধক কাজে নারীর অংশগ্রহণ’ খাত, যেখানে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে নারীর অসহায়ত্ব এবং দারিদ্র্যের ঝুঁকি হ্রাস করা’ খাতে, যেখানে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।
‘সমতার পথে অগ্রযাত্রা’ এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অংশীজন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়/বিভাগ, জেন্ডার বিশেষজ্ঞরা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ত্রৈমাসিকভিত্তিতে আলোচনাক্রমে জেন্ডার বৈষম্য মোকাবিলায় সুস্পষ্ট কার্যক্রম গ্রহণসহ আগামী অর্থবছরগুলোর জন্য সম্পদ বরাদ্দের কৌশল নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের পরিবর্তিত বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে অভিযোজন করার জন্য একটি স্থায়ী পর্যালোচনা কৌশল উদ্ভাবন করা প্রয়োজন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।