ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা পাঁচ দিন সরকারি ছুটি শেষে গতকাল বুধবার (১৯ জুন) অফিস খোলা হলেও চট্টগ্রাম কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি। গতকাল দুপুর ১২টায় কাস্টমস কমিশনার ফাইজুর রহমান কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন শাখা পরিদর্শন করেন।
এদিকে সরকারি ছুটিতে চালু রাখা হয়েছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম। কিন্তু খুব সুফল মেলেনি কনটেইনার ওঠানামার কার্যক্রমে। বন্দর চালু থাকলেও ব্যাংক, কাস্টমসের সেবা পুরোপুরি চালু ছিল না। বন্ধ ছিল শিল্পকারখানা ও গুদাম। সড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলেও ছিল নিষেধাজ্ঞা।
বন্দর সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঈদের দিন ও পরের দিন কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি। তার আগের দিন মাত্র ৩০০ কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছিল।
টানা বন্ধের কারণে ঈদের দিন ও পরের দিন কনটেইনার ডেলিভারি নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। যদিও স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে ছুটির দিনে সব ধরনের সেবা চালু থাকে। কিন্তু আমদানিকারকরা ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দর চালু রাখার সুফল পাওয়া যায় না। ঈদের দিন কয়েক ঘণ্টা ছাড়া বাকি সব সময় বন্দর খোলা ছিল।
আমদানিকারক এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, কাস্টমস বন্ধ থাকায় পণ্যের শুল্কায়ন সম্ভব হয় না। ব্যাংক বন্ধ থাকায় শুল্ক ও বন্দরের চার্জ পরিশোধ করা যায় না। ছুটি থাকায় কারখানার গুদামের শ্রমিক পাওয়া যায় না পণ্য খালাসে। এ ছাড়া মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলে থাকে নিষেধাজ্ঞা। মূলত এসব কারণেই বন্দর চালু থাকলেও এর সুফল মেলে না কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রমে।
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারির হিসাব ধরা হয় প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা, অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে পর দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ জুন ও ১৮ জুন বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারি হয় শূন্য টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। ঈদের আগের দিন ১৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছিল ৩৮৯টি। সেদিন জাহাজ থেকে রিসিভ করা হয়েছিল ৩৪৭টি কনটেইনার। একই দিন চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা কটেইনার সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ২১টি।
এর আগের দিন ১৫জুন ২২৩৯টি কনটেইনার ডেলিভারি হয়। জাহাজে উঠানামা হয় ৪৬৩০টি। আমদানি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের গ্রহণ করা হয় ২ হাজার ৭৬৮টি, জাহাজে তোলা হয় ১ হাজার ৮৬২টি। বন্দরের মোট কনটেইনার সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৮৯৮টি।
ছুটির দিনে কনটেইনার ডেলিভারি না হলেও কনটেনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ হয়ে থাকে। এতে জাহাজ থেকে নামানো কনটেইনার ডেলিভারি না হয়ে ইয়ার্ডে জমা থেকে যায়। ফলে ইয়ার্ডে জমা কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩৫১৮ টিইইউ। বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে সক্ষমতার ১৫ শতাংশ খালি রাখতে হয়। সেই হিসাবে বন্দর ইয়ার্ডে প্রায় ৪৫৫০০ টিইইউ কনটেইনার থাকলে সেটি স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে ১৩ জুন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে মোট কনটেইনার ছিল ৩১ হাজার ১২৪টি। ১৮ জুন পর্যন্ত মোট কনটেইনার জমা হয় ৩৬ হাজার ৩৬২ টি। প্রায় ৫ হাজার কনটেইনার বেড়ে যায় চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে।
এদিকে ১৯ জুন থেকে সরকারি ছুটি শেষ হয়ে সব কিছু খোলা থাকলেও এখনো স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছায়নি ডেলিভারি পরিস্থিতি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু বন্দর খোলা থাকলে হবে না, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে সরকারের উচ্চমহলের সমন্বিত সিদ্ধান্ত দরকার।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ খবরের কাগজকে বলেন, সব ঈদকে কেন্দ্র করে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার জমা থেকে যায়।
ঈদের আগে এবং চার-পাঁচ দিন পরে কনটেইনার ডেলিভারি অনেকটাই কমে যায়। এ কারণে বন্দর এবং ডিপোগুলোতে কিছুটা জট সৃষ্টি হয়। এটি প্রতিবছরের ঘটনা। এবার কোরবানির ঈদেও তাই হয়েছে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘পোশাক কারখানার পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক রাখার কথা বিবেচনা করে বেসরকারি ডিপোগুলো সচল রাখার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে হিসেবে সেবা আমরা পায়নি।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম সচল রেখেছি। কিন্তু ব্যবহারকারীরা না এলে আমাদের করার কিছুই থাকে না। এর পরও আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের চিঠি দিয়েছি সরকারি ছুটির সময়ে সেবা গ্রহণের জন্য। তবে ডেলিভারি না হলেও জাহাজে কনটেইনার উঠানামা অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ফাইজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কাস্টম হাউসের অনেক কর্মকর্তা ছুটিতে রয়েছেন। ঈদের ছুটি ছাড়াও কয়েক দিন ছুটি নিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাই অনেক কর্মকর্তা আসেননি। আগামী সপ্তাহে বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’