![নির্ভার থেকে শিরোপা জয়ের প্রত্যয়](uploads/2024/02/08/1707367911.SAFF-WOMEN..jpg)
বিকেলের নরম রোদে ম্যাচ ভেন্যুতে ঘড়ি ধরে পুরো এক ঘণ্টা শিষ্যদের অনুশীলন করালেন বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু। অনুশীলন শেষে বাংলাদেশ দল যখন মাঠ ছাড়ছিল, কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে তখন সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা। সেই গোধূলি লগ্নে ভারতীয় দলের মাঠে প্রবেশ। তারা অনুশীলন সারল ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলোয়। দুই দলেরই লক্ষ্য অবশ্য একটাই। এই একই ফ্লাডলাইটের আলোক রোশনাইয়ের মাঝে আজ শিরোপা উল্লাস করা। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। সাফের বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতাটি অনূর্ধ্ব-১৮, ১৯ ও ২০ এই তিন ফরম্যাটে এর আগে মোট চার মাঠে গড়িয়েছে। গত বছরের শুরুতে ঢাকাতেই আয়োজিত অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্যাটাগরিতে ২০২১ সালে সবশেষ হওয়া আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সীদের নিয়ে আয়োজিত আসরে শিরোপার স্বাদ নিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ২০২২ সালে শুধু অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীদের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। সব দিক থেকেই তাই বাংলাদেশের জন্য এই ফাইনালটা শিরোপা ধরে রাখার। চাপহীন থেকে স্বাগতিকরা সেই লক্ষ্য পূরণেই বদ্ধপরিকর।
তবে প্রতিপক্ষ ভারত বলেই বাংলাদেশের জন্য কাজটা কঠিন। এই দলে গত বছর ভারতে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড় রয়েছে। স্কিলের দিক থেকে পুরো দলটাই দারুণ। এবারের প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে সেটা তারা প্রমাণ করে। পরের ম্যাচে বাংলাদেশেরও দারুণ পরীক্ষা নিয়েছে তারা। কিন্তু শেষ মুহূর্তের গোলে হারতে হয় তাদের। ওই জয়টা বাংলাদেশের জন্য সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠে। একে তো এক ম্যাচ হাতে থাকতেই নিশ্চিত হয় ফাইনাল। আর এর সুবাদে ভুটানের বিপক্ষে লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশ খেলতে পারে পুরো নির্ভার থেকে। সেরা একাদশের ৯ জন খেলোয়াড়কে বাংলাদেশ কোচ পরশু বিশ্রামে রেখেছিলেন। কাল অনুশীলনে তাই শুধু সেরা একাদশের খেলোয়াড়দের নিয়েই কাজ করার সুযোগ নিয়েছেন টিটু। যারা ভুটান ম্যাচ খেলেছে, তাদের বেশির ভাগই সেভাবে অনুশীলন করেননি। রিকোভারি সেশনেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কার্যক্রম।
অন্যদিকে ভারতীয় কোচ শুক্লা দত্তকে কাজ করতে হলো পুরো দলকে নিয়ে। লিগ পর্বে তারা শেষ ম্যাচটা খেলেছে নেপালের বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে হারায় এই ম্যাচটা অঘোষিত সেমিফাইনালে রূপ নেয়। সেই বাধা টপকে ভারতের বাঙালি কোচ শুক্লা বিশেষভাবে বলেছিলেন ক্লান্তির কথা। এক দিন পর পর ম্যাচ। খেলোয়াড়দের রিকোভারি ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে উদ্বেগ ঝরে ছিল তার কণ্ঠে। কাল যদিও এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কথা বলতে চাইলেন না তিনি। তবে বাংলাদেশ এখানে পূর্ণ সুবিধাটাই নিতে পারছে। আফঈদা খন্দকার প্রান্তি, মোছা. সাগরিকারা ঝরঝরে হয়ে মাঠে নামতে পারছেন। যা বাংলাদেশকে ফাইনালের আগে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখছে অনেকটাই।
লিগ পর্বে মুখোমুখি দেখায় ভারতকে হারানটাও নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাসে বাড়তি টনিক হিসেবে কাজ করবে। অনুশীলনের ফাঁকে বাংলাদেশ অধিনায়ক প্রান্তি যেমন বলছিলেন, ‘ভারত নাম শুনলেই আমরা অনেকে ভয় পাই। ব্যাপারটা তা না। ওরা যেভাবে খেলে, আমরাও সেভাবে খেলি। (আগের ম্যাচে) রেজাল্ট আপনারা মাঠেই দেখেছেন।’ ফাইনাল নিয়ে বেশি ভেবে চাপ নিতেও রাজি নন তিনি, ‘ফাইনাল ম্যাচের জন্য যতটুকু টেনশন, এর বেশি কিছু হচ্ছে না। ফাইনালকে চাপ হিসেবে নিলে বেশি চাপ মনে হবে। বেশি চাপ নেওয়া ঠিক না। তাই বেশি চাপ নিচ্ছি না।’ তবে প্রান্তি এও বলেছেন, ‘ভারত ম্যাচ, কম সুযোগ আসবে। যে সুযোগই আসবে সেটা কাজে লাগাতে হবে।’
প্রান্তির কথার মতো অনুশীলনেও তাদের সবাইকেই বেশ চনমনে লাগছিল। যাদের নিয়ে কোচ টিটুর আত্মবিশ্বাসের এতটুকুও কমতি নেই, ‘ফাইনালে নার্ভের একটা ব্যাপার থাকতে পারে। আমার যেটা মনে হয় আমাদের মেয়েরা নার্ভের ঊর্ধ্বে। ওদের চলাফেলা, কথাবার্তায় যেটা আমি দেখি, ওরা আলাদা কোনো চাপ নিচ্ছে না। ওরা শুধু উপভোগ করতে চায়।’
এই মন্ত্রেই আজ ভারত বধের স্বপ্ন বাংলাদেশের। তবে প্রতিপক্ষ দলও কি আর বসে থাকবে। শুক্লা দত্ত যেমন বলে দিলেন, ‘গ্রুপে ওদের কাছে আমি ১ গোলে হেরেছি। শেষ মুহূর্তে গোলটা হয়েছে। তবে কালকের ম্যাচটা যেমন ওদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমন আমার কাছেও। ট্রফির জন্য বাংলাদেশও দৌড়াবে, আমিও দৌড়াব।’