![অভিষেক ও বিদায়ে বিশ্বজয়](uploads/2024/07/01/rohit--mamun-OK-1719809356.jpg)
বিশ্বকাপের মঞ্চে শুরু। শেষটাও বিশ্বকাপে। ক্যারিয়ারের শুরুর সঙ্গে শেষের কী চমৎকার মিল! ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু ভারতের হিটম্যানখ্যাত ড্যাশিং ব্যাটার রোহিত শর্মার। পরশু সেই বিশ্বকাপের মঞ্চেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন। অনেক রেকর্ড আর সাফল্যের পঙক্তিমালা রচনা করে বিদায়ের জন্য বড় মঞ্চকেই বেছে নিয়েছেন রোহিত। চার-ছক্কার ধুন্ধুমার ক্রিকেটে ভারতের জার্সি গায়ে আর দেখা যাবে না তাকে। পরশু ব্রিজটাউনের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতকে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ ট্রফি জিতিয়ে রণে ভঙ্গ দেন তিনি।
২০০৭ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে আবারও শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ল ভারত। এই ট্রফি জয়ের সঙ্গেও রয়েছে রোহিতের যোগসূত্র। ২০০৭ সালে ভারত যখন প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়, ওই দলের কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন রোহিত। ১৭ বছর পর ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফিজয়ী দলেও আছেন। তবে এবার আর কনিষ্ঠ হিসেবে নয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ জ্যেষ্ঠ সদস্য, অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ট্রফি উপহার দিলেন হিটম্যান। বলতে গেলে, বিশ্বকাপ জিতে শুরু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার, থামলেনও বিশ্বকাপ জিতে।
এমন একজন ক্রিকেটারের বিদায়ে ব্যথিত তার ভক্তরা। ট্রফি জয়ের আনন্দের পাশাপাশি রোহিতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার কষ্টে কাতর দলীয় সমর্থকরা। বিদায়বেলায় কষ্ট ছুঁয়েছে রোহিতকেও। তবে আবেগকে সংবরণ করে ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষে রোহিত বলেছেন, ‘এটি আমার শেষ ম্যাচ। এই ফরম্যাটকে বিদায় বলার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। আমি প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি। এই ফরম্যাটেই আমার ভারতীয় দলে ক্যারিয়ার শুরু। ভারত বিশ্বকাপে ট্রফি জিতুক, এটি আমি খুব করে চাইছিলাম। বলতে গেলে ভীষণভাবে। আমার জন্য ট্রফি জয়ের মুহূর্তটি খুবই আবেগী এক মুহূর্ত। জীবনে এই শিরোপাটি যেভাবেই হোক পেতে চেয়েছিলাম। আমরা সেটি পেরেছি। খুব খুশি লাগছে।’
ভারতীয় কিংবদন্তি কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের পাশে নিজের নাম যোগ করলেন রোহিত শর্মা। ১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়ে ভারত। ওই বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেন কপিল দেব। এরপর ২০০৭ টি-টোয়েন্টি এবং ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভারত জেতে ধোনির নেতৃত্বে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ট্রফি জয়ে আবারও নাম লেখাল ভারত। এবার রোহিতের নেতৃত্বে এবং তার অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মাঝে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেশ কয়েকবার ফাইনালে উঠেও ট্রফি জিততে পারেনি ভারত। এমনকি গত বছর ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি থেকে বঞ্চিত হয়। ওই আসরেও ভারতের নেতৃত্বভার ছিল এই রোহিত শর্মারই কাঁধে।
একজন সফল অধিনায়ক হিসেবে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে আমৃত্যু নাম লেখা থাকবে রোহিত শর্মার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেও সফল ব্যাটার হিসেবে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে তার নাম। ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে অনেক রেকর্ডের মালিক তিনি। ভারতের জার্সিতে ১৫৯ ম্যাচে ১৫১ ইনিংসে ৩২.০৫ গড়ে মোট ৪ হাজার ২৩১ রান সংগ্রহ করেছেন। যাতে সেঞ্চুরি ছিল ৫টি, হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩৭। স্ট্রাইক রেট ১৪০.৮৯। ঝলমলে এক ক্যারিয়ার। টি-টোয়েন্টিতে রোহিত শুধু ভারতের পক্ষেই সর্বোচ্চ রান কিংবা সর্বাধিক ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়েননি; বিশ্ব ক্রিকেটে এই দুটি রেকর্ড কিন্তু তারই দখলে। এ ছাড়া রোহিত শর্মা এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক (৫টি)। ৩৭টি হাফ সেঞ্চুরি নামের পাশে যোগ করেছেন; যা বিশ্বে ক্রিকেটে চার মারের দিক থেকে তাকে তিনে বসিয়েছে। হিটম্যান রোহিত ছক্কা হাঁকাতে দারুণ পটু। ক্যারিয়ারে মোট ২০৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। বিশ্বে আর কোনো ক্রিকেটার এত ছক্কা হাঁকাতে পারেননি।
রেকর্ডের বরপুত্র রোহিত শর্মার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার নামটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে। প্রোটিয়াদের মাটিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে ডারবানে। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দ্র শেহবাগ, যুবরাজ সিং, রবীন উথাপ্পা, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো হার্ডহিটার ব্যাটারদের কারণে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ব্যাট করা হয়নি। তবে পরদিনই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপ্ক্ষে সুযোগ পেয়ে যান। আর প্রথম সুযোগেই অপরাজিত ৫০ রান করে বিশ্ববাসীকে নিজের আগমনী বার্তাটা দিয়ে রাখেন। এরপর গত ১৭ বছরে রোহিত ভারতের জার্সিতে কী করেছেন ব্যাট হাতে, সেটা তো সবারই জানা।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ক্যারিয়ার শুরু রোহিতের। কাকতালীয়ভাবে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও প্রতিপক্ষ ছিল ওই আফ্রিকাই। এবারও জয় রোহিতদের। ফাইনাল ম্যাচে। বিশ্বকাপ মঞ্চে। কিংবদন্তিরা বোঝেন কোথায় কী করতে হয়? কোথায় ইতি টানতে হয়! বড় মঞ্চে বড় সাফল্যে দলকে রাঙিয়ে কিংবদন্তি রোহিতও বলে দিলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি আর নয়।