![রাজার রাজসিক বিদায়](uploads/2024/06/30/kohli cukk-1719690094.jpg)
এ যেন এক রাজসিক বিদায়! ফাইনালের মঞ্চে ঝলসে উঠলেন ব্যাট হাতে। দলের শিরোপা জয়ের দিনে হলেন ম্যাচসেরা এবং সেই ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে দিলেন বিদায়ের ঘোষণা।
যেকোনো ক্রিকেটারই তো এমন বিদায়ের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর কজনেরই বা পূরণ হয়। সিংহভাগের এমন স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেলেও বিরাট কোহলির থাকল না। অর্জনে ভরপুর ক্যারিয়ারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপাটাই শুধু অধরা ছিল তার। সেই অধরা ট্রফিটা মুঠোতে পুরে তবেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেন কোহলি।
বার্বাডোসে শনিবার (২৯ জুন) রাতে অনুষ্ঠিত নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়েছে ভারত। একটা সময় ম্যাচটা ছিল দোদুল্যমান। নার্ভ ধরে রেখে সেই ম্যাচটা নিজেদের করেছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দল। তাতে দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে তাদের। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। মাঝে ৭টি আসরে ব্যর্থ হওয়ার পর অষ্টমে এসে জুজু কাটল দলটির। আইসিসির ইভিন্টেই ২০১৩ সালের পর এটি প্রথম শিরোপা ভারতের।
২০০৭ সালে ভারত টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন হলেও সেই দলে কোহলি ছিলেন না। তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই অভিষেক ২০১০ সালে। তবে এক বছরের মধ্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান তিনি। ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সারথি তিনি। তবে সেই দলে কোহলি ছিলেন কেবলই নবিন একজন। সব আলো তো ছিল শচীন টেন্ডুলকার, বিরেন্দ্র শেবাগ, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের ওপর। তবে শচীন-শেবাগ প্রজন্মের পর ভারতীয় ক্রিকেটের ব্যাটনটা ছিল কোহলির হাতেই। নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটারে পরিণত করেছেন। একের পর এক রেকর্ড নিজের করেছেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদটা পাওয়া হচ্ছিল না। অবশেষে শেষ বিশ্বকাপে সেই মুকুট পরলেন ক্রিকেটে ইতিহাসে নিজের নাম খোদাই করে লিখে রাখা কোহলি।
বিশ্বকাপ জিতে কোহলি যখন থামলেন, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১২৫ ম্যাচে ১১৭ ইনিংসে তার নামের পাশে ৪১৮৮ রান। ১ সেঞ্চুরি ও ৩৮ ফিফটিতে এই রান করেছেন তিনি। গতকাল পর্যন্ত কোহলি ছিলেন টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার ওপেরে ছিলেন কেবল স্বদেশি রোহিত শর্মা। গত এক দশরের বেশি সময় ভারতীয় ক্রিকেটের ব্যাটনটা কোহলির সঙ্গে ভাগাভাগি করে টেনেছেন একজন রোহিতও। যিনি আবার ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সদস্য ছিলেন। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তার। ভারতের ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে ছিলেন না রোহিত। অর্থাৎ রোহিত-কোহলির একসঙ্গে বিশ্বকাপ জেতা এই প্রথম।
এবার কোহলির শেষ ইনিংসের গল্পে আসতেই হয়। শেষ ইনিংস না শেষ কবিতা! দুর্দান্ত এক আইপিএল কাটিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে রান করতে একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন কোহলি। আগের ৭ ইনিংসে তার নামের পাশে ছিল মাত্র ৭৫ রান। সর্বোচ্চ বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৮ বলে ৩৭। ফাইনালের আগে কোহলির এমন পারফরম্যান্সের সমালোচনাও হচ্ছিল তুমুল। তবে অধিনায়ক রোহিত জানিয়ে দিয়েছেলেন কোহলি বড় মঞ্চের খেলোয়াড়। অধিনায়কের কথাকেই শতভাগ স্বার্থক করে ছেড়েছেন কোহলি। আগের ৭ ইনিংসে তার রান ৭৫, সেই কোহলি এদিন খেললেন ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। নামের পাশে চার ৬টি, ছক্কা ২টি।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে ছিল ভারত। এমন মুহূর্তে চতুর্থ উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গী করে ৫৪ বলে ৭২ রান যোহ করেন কোহলি। পঞ্চম উইকেটে শিভাম দুবেকে নি য়ে ৩৩ বলে ৫৭ রান যোগ করেন। ভারতীয় দলের খেলার মূল সুরটা গাঁথা হয়ে যায় ওখানেই। স্কোর বোর্ডে ৭ উইকেটে ১৭৬ রানের পুঁজি গড়তে পারে ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়াদের জন্য যে কোনো উইকেটে এই রান লড়াই করার মতো যথেষ্ট।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে চেয়েছিলেন কোহলি। সেটা যে কোনো মূল্যেই। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও দেশের হয়ে এটাই নাকি হতো তার শেষ ম্যাচ। কোহলি বলেন, ‘এটা আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। আজ হারলেও বলতাম, এটাই দেশের জার্সিতে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এটা ঘোষণার কিছু নেই। ওপেন সিক্রেট।’ ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ভারতীয় ক্রিকেটের ব্যাটনটা তরুণদের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও বলেছেন কোহলি, ‘তরুণদের হাতে পতাকা দিয়ে গেলাম। এ বার ওরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক।’