![১৭ বছর পর চ্যাম্পিয়ন ভারত](uploads/2024/06/30/India-1719689957.gif)
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। ১৭ বছর পর এই সংস্করণের শিরোপা জিতেছে রোহিত শর্মার দল। সবমিলিয়ে ২০১৩ সালের পর আইসিসি আসরের শিরোপার খরা ঘোচালো ভারত। এটি ভারতের দ্বিতীয় শিরোপা টি-টোয়েন্টির। সবশেষ ২০০৭ সালে প্রথম আসরে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত।
শনিবার (২৯ জুন) বার্বাডোসের কেনসিংটন ওভালে শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও ছুঁয়ে দেখা হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় এইডেন মার্করামরা। শেষ ওভারে জেতার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার ফুলটসে স্ট্রেইটে ছয় হাঁকাতে গিয়ে সূর্যকুমার যাদবের অসাধারণ ক্যাচে আউট হন ডেভিড মিলার। সেখানেই এপিটাফ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপার স্বপ্নের। বাকি বলগুলোতে কাগিসো রাবাদা ও কেশব মহারাজ ৮ রান সংগ্রহ করলেও ৭ রানের পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় প্রোটিয়াদের।
এই লক্ষ্য জবাব দিতে নেমে ১২ রানের ভেতর রেজা হেনড্রিকস ও এইডেন মার্করামের উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। বুমরাহর বলে আউট হন হেনড্রিকস আর অর্শদীপের বলে অধিনায়ক মার্করাম।
পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ট্রিস্টান স্টাবস ও কুইন্টন ডি ককের ব্যাটে। এই দুই ব্যাটার জুটি গড়েন ৩৮ বলে ৫৮ রান। দলীয় ৭০ রানে অক্ষর প্যাটেলের বলে ভাঙে এই জুটি। স্টাম্প ছেড়ে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন স্টাবস ২১ বলে ৩১ রান করে।
এরপর মাঠে নেমে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন হেনরিখ ক্লাসেন। নেমেই ৩ ছয় হাঁকান তিনি ১৩ বলের মধ্যে। তাকে সঙ্গ দেওয়া কক অর্শদীপকে ফাইন লেগে চার মারার পর পরের বল একই জায়গায় আবারও খেলতে গিয়ে কুলদীপ জাদবকে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১০৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।
মাঠে থাকা ক্লাসেন আবারও ঝড় তোলেন ক্লাসেন। অক্ষর প্যাটেলের করা ১৫তম ওভারে দুই চার ও দুই ছয়ে ক্লাসেন তোলেন ২৪ রান। এই ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফেবারিট করে ফেলেন ক্লাসেন। কিন্তু, তাকে ফিরিয়ে ভারতকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন হার্দিক পান্ডিয়া। দলীয় ১৫১ রানে আউট হওয়ার আগে ২৭ বলে ৫২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ক্লাসেন ৫ ছক্কা ও দুই চারে।
ক্লাসেনকে ফেরানোর পর মাঠে আসেন মার্কো জানসেন। মাত্র ২ রান করে বুমরাহর বলে বোল্ড হন তিনি। বুমরাহর বাকি থাকা দুই ওভারে খেলা থেকে ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারের প্রথম বলে মিলারের বিদায়ে আফ্রিকানদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন হার্দিক পান্ডিয়া ও সূর্যকুমার যাদব। শেষমেশ কেশব মহারাজ ও কাগিসো রাবাদা শেষ ওভারে ১৬ রানের জায়গায় ৮ রান রান যোগ করলে ৭ রানে হেরে তীরে এসে তরী ডোবে দক্ষিণ আফ্রিকার।
হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি, অর্শদীপ ও বুমরাহ নেন ২টি আর অক্ষর প্যাটেলের শিকার ১টি উইকেট।
এর আগে, টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ব্যাটিংয়ে নেমে ফর্মে ফেরেন কোহলি। বিশ্বকাপজুড়ে বিরাট কোহলির অফ ফর্ম নিয়ে অনেক কথা হলেও সেই কোহলিই ফাইনালে হয়ে গেছেন ভারতের ব্যাটিংয়ের ত্রাণকর্তা। তার ও অক্ষর প্যাটেলের ৭২ রানের জুটিতে ব্যাটে ভর করেই শুরুর ধাক্কা সামলে ভারতের বোর্ডে সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭৬ রান।
ম্যাচের প্রথম ওভারে মার্কো জানসেনকে তিনটি চার মেরে ভারতের ইনিংসের গতি আনেন বিরাট কোহলি। পরের ওভারে কেশব মহারাজকে দুই বলে দুই চার মেরে সেই রানের চাকায় আরও গতি দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেই ওভারের চতুর্থ বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্লাসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এক বল পর ঋষভ পন্তও আউট হন সুইপ করতে গিয়ে। তিনি ক্যাচ দেন উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কককে। ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত।
মাঠে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সূর্যকুমার যাদবও। কাগিসো রাবাদার বলে পুল করে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন হেনরিখ ক্লাসেনকে। তিনি করেন মাত্র ৩ রান। ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। পাওয়ার প্লে শেষে ভারতের স্কোরবোর্ডে রান দাঁড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান।
এরপর ওপরে ব্যাটিং করতে আসেন অক্ষর প্যাটেল। কুইন্টন ডি ককের থ্রোতে অপ্রত্যাশিত রানআউট হওয়ার আগে তার ব্যাটে আসে ৩১ বলে চারটি ছক্কা ও ১ চারে ৪৭ রান। তখনই ভাঙে কোহলির সঙ্গে তার ৭২ রানের জুটি। অক্ষরের বিদায়ে ১০৬ রানে ৪ উইকেট হারায় ভারত। একপ্রান্ত আগলে রাখা কোহলি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩৮তম অর্ধশতক। মার্কো জানসেনের বলে আউট হওয়ার আগে ৫৯ বলে ৭৬ রান আসে তার ব্যাটে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি চার ২ দুইটি ছয়ের মারে। তিনি আউট হন দলীয় ১৬৩ রানে। তার বিদায়ে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে ভারতের।
কোহলিকে সঙ্গ দিতে আসা শিভম দুবেও খেলেন ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ইনিংস। পুরো বিশ্বকাপে রান খরায় ভোগা দুবেও এদিন পান রানের দেখা। তিনি খেলেন ১৬ বলে ২৭ রাবের ক্যামিও। আউট হন আনরিখ নর্টজের বলে। ব্যাটিং অর্ডার সামলে নীচে ব্যাটিং করতে নামা হার্দিক পান্ডিয়া অপরাজিত থাকেন ২ বলে ৫ রান করে। ইনিংসের শেষ বলে ২ রান করে শেষ ওভারে নর্টজের বলে ক্যাচ দেন কেশব মহারাজকে। ফলে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কেশব মহারাজ ও আনরিখ নর্টজে দুটি, কাগিসো রাবাদা ও মার্কো জানসেন নেন ১টি করে উইকেট।
৭৬ রান করে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বিরাট কোহলি। ১৫ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন জসপ্রিত বুমরাহ।