![টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে এগিয়ে যারা](uploads/2024/06/29/Man-of-Tournament-1719650966.jpg)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছেন ভারতের হিটম্যান খ্যাত ব্যাটার অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সতীর্থ ওপেনার বিশ্বসেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি যেখানে রান খরায় ভুগছেন। একের পর এক ম্যাচে দলকে বিপদে রেখে দ্রুত আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন। সেখানে দারুণ ব্যাটিং করে দলকে শুরুতেই ভালো একটা সূচনা এনে দিচ্ছেন রোহিত। এ কারণেই মূলত তাকে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে সবার আগে এগিয়ে রাখছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক-বোদ্ধা থেকে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিশেষ করে শেষ দুটি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া (৯২ রান) এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (৫৭ রান) খেলা ইনিংস দুটি তাকে সবার থেকে আলাদাভাবে এগিয়ে রাখছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল ভারতের সেমিফাইনালে ওঠার সিঁড়ি। এরপর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রোহিতের ৫৭ রানের ইনিংসে ভর করে ফাইনালের টিকিট পায় শিরোপা প্রত্যাশী ভারত।
চলতি বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ৩টি ফিফটিসহ ৪১ গড়ে মোট ২৪৮ রান সংগ্রহ করেছেন রোহিত শর্মা। স্ট্রাইকরেটটা দারুণ, ১৫৫.৯৭। বিশ্বকাপে এখনো এক ম্যাচ বাকি রোহিতের। ফাইনাল ম্যাচ। সেই ম্যাচ খেলতে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবেন রোহিতরা। এই ম্যাচেও তার কাছ থেকে দারুণ কিছুর প্রত্যাশা তার সমর্থকদের। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বড়সড় একটা ইনিংস খেলতে পারলে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিশ্চিত হয়ে যাবে রোহিতের। তবে ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে না পারলে সেক্ষেত্রে সেরার দৌড়ে আর যারা এগিয়ে রয়েছেন তাদের পারফরম্যান্স তখন বিবেচনায় আসবে। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে রোহিতের পাশাপাশি এগিয়ে রয়েছেন আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ। এবারের আসরে আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে তুলে আনার পেছনে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন তিনি। ৮ ম্যাচে ৩৫.১২ গড়ে ২৮১ রান সংগ্রহ করেছেন। যা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান। ৩ ফিফটিতে ১২৪ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন গুরবাজ। তার দল সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। ফাইনালে উঠতে পারলে গুরবাজেরও দারুণ সম্ভাবনা ছিল টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতার! তবে সেই সুযোগ যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তাও নয়। কারণ ফাইনাল ম্যাচ এখনো বাকি। সেই ম্যাচ শেষেই ফয়সালা হবে কে হচ্ছেন টুর্নামেন্ট সেরা?
এবারের আসরে অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড (২৫৫ রান), আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরান (২৩১ রান), ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান (২২৮ রান), যুক্তরাষ্ট্রের গাউস (২১৯ রান) কিংবা ইংল্যান্ডের দলপতি জস বাটলার (২১৪ রান) করলেও তাদের দল আসরের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় কিংবা সেমিফাইনালে না ওঠার দরুণ তাদের সেরা হওয়ার সম্ভাবনা আগেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তবে ব্যাট হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি ককের এখনো ভালো সুযোগ রয়েছে। আজ ভারতের বিপক্ষে শতরানের একটা ইনিংস ডি কককে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে। কারণ ৭ ম্যাচে ইতোমধ্যে ১৪৩ স্ট্রাইকরেটে ২০৪ রান সংগ্রহ করেছেন এ প্রোটিয়া ওপেনার। ব্যাটিংয়ে ভারতের সূর্যকুমার যাদবকেও ভুলে গেলে চলবে না। কোহলি, রিশাভ পান্থদের ব্যর্থতার দিনে ভারতকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছেন এ মিডলঅর্ডার। ৭ ম্যাচে ১৩৭ স্টাইকরেটে ১৯৬ রান তুলেছেন সূর্যকুমার। ফাইনালে
ঝলমলে একটা ইনিংস খেলে টুর্নামেন্ট সেরার কাতারে তারও চলে আসার দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ব্যাটে-বলে ডাবল রোল-প্লে করে টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ভারতের অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মারকাস স্টইনিসরাও। ৭ ম্যাচে ১৩৯ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ৮ উইকেট শিকার করেছেন পান্ডিয়া। আজ ফাইনালেও সুযোগ থাকছে নিজেকে প্রমাণের। ভারতকে এবার দারুণ কিছু ইনিংস উপহার দিয়েছেন; প্রয়োজনের সময় কখনো ব্যাট হাতে কখনো আবার বল হাতে সেবা দিয়ে শিরোপার মঞ্চে তুলে এনেছেন হার্দিক। এদিকে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দারুণ একটা সুযোগ বলতে গেলে হাতছাড়া হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ান স্টয়নিসের। কারণ তার দল সেমির আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে। তারপরও স্টয়নিসের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স তাকে এখনো আলোচনার টেবিলে রেখেছে। ৭ ম্যাচ খেলে ১৬৯ রান করার পাশাপাশি ১০ উইকেট শিকার করেছেন এ অজি স্টাইলিশ অলরাউন্ডার। স্টয়নিসও তাই টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতার দৌড়ে রয়েছেন।
বিশ্বকাপে এবার ব্যাটারদের চেয়ে ভালো করছেন বোলাররা। ২০২৪ যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপকে বোলারদের বিশ্বকাপ বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। এবারের আসরে বল হাতে সবার আগে নাম রয়েছে আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকীর। ৮ ম্যাচে ৬.৩১ ইকোনমিরেটে টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ৯ রানে ৫ উইকেট শিকার এই আসরে ফারুকীর সেরা বোলিং ইনিংস। টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে ফারুকীকে তাই এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে। ভারতের তরুণ পেসার অর্শদ্বীপ সিং ১৫ উইকেট নিয়ে ফারুকীর গায়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলছেন। ফাইনাল ম্যাচে দারুণ বোলিং করলে অর্শদ্বীপেরও সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দারুণ সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া বল হাতে আফগান অধিনায়ক রশিদ খান (১৪ উইকেট), বাংলাদেশি অলরাউন্ডার রিশাদ হোসেন (১৪ উইকেট), আফগান পেসার নাভিন-উল-হক (১৩ উইকেট) দখল করলেও তাদের সেরা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ১৩ উইকেট শিকার করা ভারতের আরেক পেসার জসপ্রিত বুমরাহ কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার এনরিচ নর্টজে (১৩ উইকেট), কাগিসো রাবাদাদের (১২ উইকেট) টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার সুযোগ একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ফাইনাল ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স এখনো বাকি রয়েছে।