![বিশ্বকাপের আগে অশনি সংকেত](uploads/2024/05/25/bd--Partha=ok-1716618587.jpg)
গুটিকয়েক ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের মাঝে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধান ১০। সংখ্যাটা ছোট হলেও শক্তিমত্তার বিচারে পার্থক্যের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। শক্তিমত্তায় যোজন যোজন এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ নিজেদের করে নিবে সিরিজ- এমন আশায় বুক বেঁধে ছিলেন দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রত্যাশার সেই প্রতিচ্ছবির দেখা মেলেনি। বরং প্রতিটি বিভাগে ছিল স্বাগতিক মার্কিনিদের দাপট। ইতোমধ্যে টানা দুই ম্যাচ জিতে নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়।
বাংলাদেশকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে প্রথমবার টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে তারা পেয়েছে সিরিজ জয়ের স্বাদ। এমন জয়ের পর মার্কিন পেসার আলী খান স্পষ্ট বলে দেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা দুই জয় কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তার চোখে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। মার্কিনিদের জন্য বাংলাদেশকে হারানো তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ঘটনা। অন্যদিকে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের জন্য অশনি সংকেত।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারের পর অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত খুলে বসেন অভিযোগের ডালি। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ‘ভালো উইকেটে’ না খেলায় মানিয়ে নিতে সমস্যার কথা জানান। দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর প্রায় একই সুরে কথা বলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার কথায় ছিল, প্রস্তুতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাবের কথা। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কণ্ঠে এমন অজুহাত অবশ্য মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। টানা খেলার মধ্যে থাকা বাংলাদেশ দল সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে পারেনি ভালো খেলতে। বছরের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কার কাছে হারে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও খেলতে সেরাটা দিতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তারই প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হার। এমন সিরিজ হার বিশ্বকাপের আগে দলকে জেগে ওঠার সংকেত দিচ্ছেন সেটা মানেন অলরাউন্ডার সাকিব। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হারের পর তার ভাষ্য, ‘এখানে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি। এটা আমাদের জন্য জেগে ওঠার সংকেত হতে পারে। কারণ আমরা যেভাবে চেয়েছি সেভাবে খেলতে পারিনি।’
বিশ্বকাপের আগে সিরিজ হারের চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার হতে পারে ক্রিকেটারদের বাজে পারফরম্যান্স। ওপেনিংয়ে লিটন দাস নেই ফর্মে। রান করাটা যেন ভুলেই গেছেন এই ডানহাতি। বাকি দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকারও দিতে পারছেন না আস্থার প্রতিদান। বিশ্বকাপের বিমান ধরার আগে ধারাবাহিকভাবে রান করেননি। অধিনায়ক শান্তও পারছেন না রান করতে। অধিনায়কত্বের চাপে রান করতেই যেন ভুলে গেছেন। টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতা নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া টাইগারদের নুইয়ে পড়া সময়ের ব্যাপারমাত্র। মিডল অর্ডারও ঠিকঠাক কার্যকরী হতে পারছে না প্রতি ম্যাচে। অবশ্য তাদের ওপর প্রতি ম্যাচে আশা রাখা যে বোকামি! ব্যাটাররা যখন ব্যর্থতার ভারে নুইয়ে পড়ছে তখন খানিকটা আশার আলো জ্বালিয়েছে বোলাররা। তাদের পারফরম্যান্সে আছে খানিকটা ধারাবাহিকতা। তবে ক্রিকেট তো দিন শেষে দলীয় খেলা। সব বিভাগে পারফর্ম করতে পারলে তবেই মেলে জয়ের দেখা। মার্কিন মুল্লুকে এখনো সব বিভাগের সমন্বয়ের দেখা মেলেনি। স্বাগতিক দেশে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সিরিজে থাকা দলীয় সমন্বয়হীনতার অভাব বিশ্বকাপে কতটুকু পূর্ণ হবে সেটাই এখন আশঙ্কার বিষয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আশাবাদী থাকা সমর্থকরাও আশায় বুক বাঁধতে পারছেন না। প্রবাসী সমর্থকদের আচরণে অন্তত সেটা স্পষ্ট। দলের হতশ্রী পারফরম্যান্সের কারণে বিশ্বকাপের টিকিট অর্ধেক দামে বিক্রির বিজ্ঞাপনও দিচ্ছেন তারা। তাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা দেশের ক্রিকেটকে দিচ্ছে অশনি সংকেত। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স করা বাংলাদেশের জন্য হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন। মার্কিনিদের কাছে সিরিজ হারা বাংলাদেশের চাওয়া এখন হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানো। সেই লক্ষ্যে আজ রাত ৯টায় হিউস্টনের প্রেইর ভিউ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সিরিজের শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নামবে শান্তর দল। এ ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের মনোবল কতটুকু শক্ত আছে সেটা নিয়ে থাকে সন্দেহের অবকাশ। সিরিজের শেষ ম্যাচে জিতে মনোবল খানিকটা ফিরিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে পারে কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।