ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

জাহাজভাঙা শিল্পে বছরে গড়ে মৃত্যু হয় ১৪ শ্রমিকের

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪০ পিএম
জাহাজভাঙা শিল্পে বছরে গড়ে মৃত্যু হয় ১৪ শ্রমিকের
ছবি : খবরের কাগজ

দেশের জাহাজভাঙা শিল্পে বছরে গড়ে ১৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ২০০৫ সাল থেকে ২০২৩ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত ১৮ বছর ২ মাসে ২৫১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এ শিল্পে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২০১৯ সালে। তবে এরপর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর হার কমে এসেছে। তবে মৃত্যুহার কমার পেছনে কারণ হিসেবে শ্রমিকের উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে, নাকি দেশের জাহাজভাঙা শিল্পে ভাটা পড়েছে, তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ সেমিনারে জাহাজভাঙা শিল্প শ্রমিক, বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতা, পরিবেশ অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ নানা শ্রেণির স্টকহোল্ডার অংশ নেন। 

বিলসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই ৯ বছরে ১২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১৬ জন, ২০১৬-তে ১৮ জন, ২০১৭-তে ১৯ জন, ২০১৮-তে ১৩ জন ও ২০১৯ সালে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। তার মানে ২০১৫ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে শ্রমিকের মৃত্যু বেড়েছে জাহাজভাঙা শিল্পে। তবে এরপর থেকে কমে এসেছে। ২০২০ সালে ১০ জন, ২০২১-এ ৯ জন, ২০২২-এ ৭ জন ও ২০২৩ সালে ৭ জন। এই ৯ বছর গড়ে ১৩ দশমিক ৫৫ জনের মৃত্যু হয়। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিহত শ্রমিকদের গড় বয়স ৩৭ দশমিক ৭৭ বছর। নিহতদের মধ্যে ৩ জন কাটারম্যান, ২ জন ফিটারম্যান, ১ জন ওয়্যার গ্রুপ শ্রমিক এবং ১ জন ইলেকট্রিশিয়ান। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের পরিবার ৭ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। ১ জনের পরিবার ৬ লাখ টাকা পেয়েছেন। বাকি ৩ জনের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে জানা গেলেও টাকার পরিমাণ জানা যায়নি।

ক্ষতিপূরণ সংক্রান্তে ট্রেড ইউনিয়ন সুপারিশ হিসেবে আইএলও কনভেনশন ১২১, মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন-১৮৫৫ এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের ন্যূনতম মানদণ্ড নির্ধারণ জরুরি। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শ্রমিকরা আহত হওয়ার পর প্রথমবার মালিকপক্ষ তাদের চিকিৎসা করালেও পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার জন্য তাদের নাগাল পাওয়া যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে যোগাযোগ করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে অধিকাংশ আহত শ্রমিক ফলোআপ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ শ্রম আইন অনুযায়ী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত মজুরিসহ ছুটি পাওয়া মালিকের খরচে চিকিৎসা পাওয়া প্রত্যেক আহত শ্রমিকের অধিকার রয়েছে। আহত শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেলে আড়াই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া আইনের বিধান রয়েছে। 

প্রতিবেদনে দেখানো হয়, জাহাজভাঙা শিল্পে ২০২৩ সালে মোট ৩৫টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৭টি দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়। আর বাকি ২৮টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭ জনের পা ভেঙে গেছে, ২ জন মাথায় আঘাত পেয়েছেন, ২ জনের হাত ভেঙে গেছে, আগুনে দগ্ধ হয়েছেন ৩ জন, মালামাল আনলোডিং করার সময় আহত ২ জন ও সামান্য আহত হয়েছেন ১৩ জন। 

এসব ছাড়াও জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের ৭টি বঞ্চনার শিকার হতে হয় বলে বিলসের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে। এগুলো হলো ১. তাদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না, ২. লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ ঠিকাদারদের অধীনে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়, বিধায় শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হয় এবং ঠিকাদারদের দায় মালিক পক্ষ প্রায়ই অস্বীকার করে, ৩. শ্রমিকদের সবেতনে ছুটি দেওয়া হয় না, ৪. ২০১৮ সালে ঘোষিত নিম্নতম মজুরি আজও বাস্তবায়ন হয়নি, ৫. অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নাই, ৬. ঠিকাদারদের অধীনের নিয়োজিত শ্রমিকরা অনেক সময় কাজের মজুরিও পান না। ৭. প্রায়ই শ্রমিকদের মৌখিক নির্দেশে চাকরিচ্যুত করা হয়। 

২০২৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের হংকং কনভেনশন অনুস্বাক্ষর এবং পিএইচপি শিপ রিসাইক্লিংসহ আরও ৩টি শিপ ইয়ার্ড সনদ লাভসহ গ্রিন হওয়ায় জাহাজভাঙা শিল্পে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে এসব গ্রিন শিপ ইয়ার্ডে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বড়সংখ্যক শ্রমিক চাকরিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এসব চাকরিচ্যুত শ্রমিকের বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে আবার নতুন করে সামাজিক সংকট তৈরি করবে। গ্রিন শিপ ইয়ার্ডগুলোতে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হলেও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও শ্রম অধিকার বিষয়ে আরও ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। তবে গ্রিন শিপ ইয়ার্ডগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন, জাহাজ কাটায় উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে জাহাজ কাটা হয় বলে ইয়ার্ডে শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং একই সঙ্গে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। 

প্রতিবেদনে সাতটি সুপারিশ জানানো হয়- ১. শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল করতে হবে, ২. কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম থাকতে হবে, ৩. শ্রমিকদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স থাকতে হবে, ৪. শ্রমিকদের জন্য যুগোপযোগী মজুরি নিশ্চিত করতে হবে, ৫. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদান নিশ্চিত করতে হবে, ৬. শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে, ৭. দৈনিক ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ না করানো এবং শ্রম বিধিমালা অনুসরণ করে প্রতি ঘণ্টা অন্তর ১৫ মিনিট বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া জাহাজভাঙা শিল্পে পরিবর্তন ও ন্যায়বিচার প্রয়োজন দাবি করে বলা হয়, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ সব ধরনের শ্রম অধিকার, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা, চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান ইত্যাদি নিশ্চিত করা গেলে জাহাজভাঙা শিল্পে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে তাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

নরসিংদীতে পোশাকশ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১০:০৩ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১০:০৩ পিএম
নরসিংদীতে পোশাকশ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
ছবি : খবরের কাগজ

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় তিন মাসের ওভারটাইম ও বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। ওই সময় তারা কাঠের আসবাবপত্র দিয়ে সড়কের ওপর অগ্নিসংযোগ করেন। 

রবিবার (৩০ জুন) ৩ ঘণ্টাব্যাপী কারারদী এলাকায় আদুরী গার্মেন্টসের শ্রমিকরা এ বিক্ষোভ করেন। এদিকে অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই প্রান্তে সাত কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

শ্রমিকরা জানান, তিন মাস ধরে ওভারটাইমের বকেয়া পরিশোধ করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। ঈদের আগে থেকে দিচ্ছি দিচ্ছি করছে কর্তৃপক্ষ। তবে তা এখনো পরিশোধ করেনি। বকেয়া পরিশোধের দাবি করলে নানা অজুহাতে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়। এসবের প্রতিবাদে রবিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শ্রমিকরা ফ্যাক্টরির সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত চলে এই কার্যক্রম। 

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা করছি।’

পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ‘ভুলবশত’ ছোড়া গুলিতে ২ ব্যবসায়ী আহত

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ‘ভুলবশত’ ছোড়া গুলিতে ২ ব্যবসায়ী আহত
ইয়াকুব আলী (বাঁয়ে) ও নুরুল আবসার। ছবি : খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ‘ভুলবশত’ ছোড়া গুলিতে পঙ্গু হতে বসেছেন ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী। একই ঘটনায় আহত হন নুরুল আবসার (৪৩) নামের আরেক দোকানি। 

গত ২৪ জুন বেলা ২টার দিকে হাটহাজারীর মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হন তারা। এরই মধ্যে ইয়াকুব আলীর পায়ে গুরুতর জখম হয়। অন্যদিকে নুরুল আবসার হাতে আঘাত পান। 

মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ৩০০ মিটার দূরে টেণ্ডলেরঘাটা বাজারে ইয়াকুব আলীর একটি কুলিং কর্নার রয়েছে। অন্যদিকে নুরুল আবসার করতেন মুরগির ব্যবসা। 

গুলিতে আহত হওয়ার পর দুই দিন চিকিৎসা শেষে গত ২৬ জুন দুজনই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। ইয়াকুব আলীর বাড়ি বুড়িশ্চর ইউনিয়নের তালুকদারপাড়ায়। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলের বয়স ১৫ বছর। পুরো পরিবার চলে ইয়াকুব আলীর আয়ে। 

বাড়িফেরার পর ইয়াকুব আলী বলেন, ‘যখন আমার পায়ে গুলি লাগে, আমি ব্যথায় চিৎকার করতে থাকি। চিৎকার শুনে বাজারের লোকজন এগিয়ে আসেন। তারাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তার আমাকে কমপক্ষে ছয় মাস বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। আমি এখন পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছি। অথচ আমি ছাড়া সংসারে আয়ের কোনো লোক নেই। আমার বড় ছেলেরও ব্যবসা সামলানোর মতো বয়স বা সামর্থ্য নেই। সংসার কীভাবে চলবে তা নিয়ে আমি চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি।’ 

এদিকে ইয়াকুব আলীর পাশেই আহত আরেক ব্যবসায়ী নুরুল আবসারের বাড়ি। তার তিন সন্তান। বড় ছেলের বয়স আট বছর।

নুরুল আবসার বলেন, ‘আমার ডান হাতে দুটি গুলি লেগেছে। বেশ ক্ষত হয়েছে। চিকিৎসা নিয়েছি। পুরোপুরি সুস্থ হতে ছয় মাস লাগতে পারে। আমি মুরগি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এখন দোকান বন্ধ। পরিবার কীভাবে চালাব সেটা ভাবলেই বুক কেঁপে উঠছে।’ 

গত ২৪ জুন বেলা ২টার দিকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শটগান পুলিশ ফাঁড়িতে এনে গুলি ছোড়ার কাজ পরীক্ষা করছিলেন এক কনস্টেবল ও ব্যাংকের এক নিরাপত্তা কর্মী। তাদের আকাশের দিকে ছোড়া গুলিতে আহত হন ওই দুই ব্যবসায়ী। এদিকে ঘটনাটি তদন্তে গত ২৬ জুন কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। গুলিবিদ্ধ দুই দোকানির চিকিৎসার ব্যয় পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি পুলিশের।
 
মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন সুমন জানান, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আহত দুই ব্যক্তিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

চোরকে বাড়িতে ডেকে হত্যার শিকার গৃহবধু!

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম
চোরকে বাড়িতে ডেকে হত্যার শিকার গৃহবধু!
ছবি: খবরের কাগজ

নাটোরের লালপুর উপজেলার কামারহাটি তেনাচুরা গ্রামের দুবাই প্রবাসী সোহানুর রহমান শুভ'র স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের শিকার শিউলি খাতুন (২৩) নিজেই তার হত্যাকারীকে বাড়ির ঠিকানা দেয় বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। আসামি আগে থেকেই চোর। তার বিরুদ্ধে চুরির মামলা রয়েছে। হত্যাকারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয় ঢাকার গাজীপুর কোনাবাড়িতে।

এসপির দাবি, কোনাবাড়িতে শিউলীর বোন ভাড়া বাসায় থেকে গার্মেন্টসে কাজ করেন। পাশের রুমেই ভাড়া থেকে এক হোটেলে কাজ করতেন আসামি। বেনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা। শিউলী মেবাইল ফোনে ওই হত্যাকারীকে বাড়ির ঠিকানা দেয়। ট্রেনে লালপুরের আব্দুলপুর স্টেশনে নেমে অটোরিক্সাযোগে শিউলীর বাড়িতে পৌঁছে আসামি।

রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি তরিকুল ইসলাম আরও জানান, ভিকটিম আনুমানিক একমাস আগে তার বোন সোনালী খাতুন এর ভাড়া বাসা গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ী বেড়াতে গেলে সেখানে আসামির সঙ্গে পরিচয় এবং পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৬ জুন  আসামি জাকির হোসেন পরকীয়া প্রেমের সূত্রে গাজীপুর থেকে ট্রেনে ভিকটিমের বাড়িতে মামা পরিচয় দিয়ে বেড়াতে আসে। ভিকটিমের সঙ্গে টাকা পয়সা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২৯ জুন ভোর ৫টার দিকে কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হলে আসামি ভিকটিমের গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে ও বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মো. রফিকুল ইসলাম (৩৪) লালপুর থানায় এজাহার দায়ের করলে মামলা হয়।

গতরাতে বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের মাড়িয়া এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায়,আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় আসামির কাছ থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোন, ২ জোড়া রূপার নুপুর, ১টি স্বর্ণের চেইন, ১টি স্বর্ণের নাকফুল, ২টি রূপার আংটি ও ১ জোড়া কানের দুল উদ্ধার করাহয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

আসামি জাকির হোসেন (৩৫) সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার গচিয়া গ্রামের বিলাল মিয়ার ছেলে। সে বিবাহিত। এর আগে আসামির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে চট্রগ্রামে একটি মামলা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে এসপি জানান, ভুক্তভোগীর বাবার বাড়ি দিনাজপুর, স্বামীর বাড়ি নাটোর। আর আসামির বাড়ি সুনামগঞ্জ। প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির আত্মীয়তার সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তবে কী কারণে শিউলী তাকে মামা পরিচয় দিয়েছে তা তদন্তের পরই জানা যাবে।

লালপুর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ এবং আইও হিমাদ্রি হালদার জানান আসামিকে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে।

কামাল মৃধা/এমএ/

কবরস্থানে মিলল ১০০ বস্তা ভারতীয় চিনি

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:৩৫ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:৩৫ পিএম
কবরস্থানে মিলল ১০০ বস্তা ভারতীয় চিনি
জব্দকৃত ১০০ বস্তা ভারতীয় চিনি। ছবি : খবরের কাগজ

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের রূপনগর গ্রামের কবরস্থান থেকে ১০০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে। 

রবিবার (৩০ জুন) বিকেলে বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের সাকিন বেরবেরী হাওরের কবরস্থান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এই চিনি জব্দ করা হয়।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সাকিন বেরবেরী হাওরের পাশের একটি কবরস্থানে অভিযান চালানো হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কবরস্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ১০০ বস্তা চিনি পাওয়া যায়। তবে অভিযানের সময় কাউকে পাওয়া যায়নি।

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন চিনি জব্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পা দিয়ে লিখে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে রাসেল

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:০০ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:০০ পিএম
পা দিয়ে লিখে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে রাসেল
পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে রাসেল। ছবি : খবরের কাগজ

শারীরিকভাবে সক্ষম দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বাবা-মা যেখানে সন্তানকে পড়ালেখায় মনোযোগী করতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ভুগছেন, তাদের অনুপ্রেরণা হতে পারে নাটোরের সিংড়া উপজেলার প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধা। সে সিংড়া পৌর শহরের শোলাকুড়া মহল্লার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার ছেলে ও শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে এ বছর আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে। 

রবিবার (৩০ জুন) দেশব্যাপী শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সে আলিম পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় আল মাদ্রাসাতুল জমহুরিয়া কেন্দ্রে।

সরেজমিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের শিক্ষার্থীরা হাতে কলম নিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিখতে ব্যস্ত। পাশেই সিটবেঞ্চে বসে বাঁ পায়ের আঙুলে কলম ধরে উত্তর লিখছে রাসেল মৃধা। দেখা যায়, রাসেলের দুই হাত নেই। নেই ডান পা-ও। বাঁ পা থাকলেও তা স্বাভাবিক আকারের চেয়ে ছোট।

২০২২ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় রাসেল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভাব-অনটনের মধ্যেও প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে খুশি তার বাবা। তাইতো শত অভাব অনটনের মধ্যেও তারা রাসেলকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

রাসেল মৃধার বাবা আব্দুর রহিম মৃধা বলেন, দিনমজুরি করে রাসেলকে পড়াশোনা করাচ্ছি। লেখাপড়া শিখে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে এমন আশা রয়েছে। শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোতাররফ হোসেন বলেন, বিগত পরীক্ষাগুলোতেও সে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছে। রাসেল এবারও ভালো ফল অর্জন করবে বলে আমরা আশাবাদী।