![চট্টগ্রামে পোশাকশ্রমিকদের অসন্তোষ, দুদিনে ৯ কারখানায় বিক্ষোভ](uploads/2024/01/10/1704895360.Ctg_Garments.jpg)
চট্টগ্রামে তৈরি পোশাকশিল্পে অসন্তোষ বাড়ছে। গত দুদিনে ৯টি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তারা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামছেন। এর মধ্যে কিছু নামিদামি কারখানাও রয়েছে। পোশাকশিল্পের এ আন্দোলনকে স্থিমিত করতে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতার কাজ করছেন নগরের শিল্প পুলিশ ও কলকারখানা অধিদপ্তর।
জানা যায়, চট্টগ্রামের সিইপিজেড, কেইপিজেড, কালুরঘাট, কর্ণফুলী ও সীতাকুণ্ডে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্টসশ্রমিকরা। অনেক কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি না করায় এ বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রমিকদের দাবি, নতুন বেতন কাঠামোতে অনেক শ্রমিকের বেতন কমে গেছে। কর্তৃপক্ষ বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন সরকার নির্ধারিত সাড়ে ১২ টাকা দিচ্ছেন। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন ১ থেকে দেড় হাজার টাকা কমে যায়। এ কাঠামোতে বেতন বৃদ্ধি পাওয়ার পরিমাণটা যেন ৪ হাজার টাকার কম না হয়, সেই দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
আবার চট্টগ্রাম ইপিজেডে কিছু কিছু কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকদের এ দাবি মেনে নিয়েছেন। আবার কিছু কারখানা এ দাবি না মানায় শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেড, সিইপিজেড, কালুরঘাট ও নগরের আকবর শাহ এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। আগের দিন মঙ্গলবার ইপিজেড এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক রাস্তায় নেমেছিলেন। এ বিক্ষোভ মূলত শুরু হয়েছে ওই দিন থেকেই। তবে শ্রমিকদের এসব বিষয় নিয়ে শিল্প পুলিশ এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দুই পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রাম ইপিজেড মেরিম কু লিমিটেড, এইচ কে ডি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আরএসবি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, কেনপার্ক, প্রিমিয়ার গার্মেন্টস লিমিটেড, সীতাকুণ্ডে প্যাসিফিক নিটেক্স লিমিটেড, কর্ণফুলীতে ফোর এইচ টেক্সটাইল ও এনএসটি ফ্যাশনের শ্রমিকরা ৫ হাজার টাকা বেতন বাড়ানোর দাবিতে এই আন্দোলনে নামেন।
এদিকে সীতাকুণ্ডের পাক্কা রাস্তা মাথা এলাকায়ও বেতন বৃদ্ধি ও সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে প্যাসিফিক নিটেক্স লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ করেছেন। তবে পুলিশি বাধায় তারা বেশিক্ষণ সড়কে অবস্থান করতে পারেননি। দুপুর আড়াইটার দিকে তারা চলে যান।
অপর দিকে নগরের কর্ণফুলী থানা এলাকায় ফোর এইচ গ্রুপের টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করেছেন।
প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত মতে আমরাও বেতন বৃদ্ধি করেছি। শ্রমিকরা সেটি না মেনে কিছু সময় কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করছেন। শ্রমিকরা ৫০০০ টাকা বেতন বাড়ানোর দাবি জানান। আমরা তাদের ৪০০০ টাকা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছি। এটি শুধু আমাদের কোম্পানির শ্রমিকদের জন্য।’
শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলাইমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে। বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে। তবে আমরা মালিক-শ্রমিক দুপক্ষকে নিয়েই বসেছি। কিছু কিছু কারখানার শ্রমিকরা সমঝোতা করে দেওয়ার বিসয়টি মেনে নিয়েছেন। ফলে তারা সন্তোষ্ট হলে আনোলন বন্ধ করে দিবেন।’
চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবাহান বলেন, ‘নতুন বেতন কাঠামোতে অন্যান্য পোশাক কারখানায় নূন্যতম বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। বেপজায় তা ১২ হাজার ৮০০ টাকা। ওই কারখানার শ্রমিকরা কিছু দাবি জানিয়েছেন। বেপজায় ১২ হাজার ৮০০ টাকাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি হচ্ছে ইনক্রিমেন সমন্বয়ে যেন কারো বেতন ৪ হাজার টাকা থেকে না কমে মতো। সুতরাং নভেম্বর মাসে প্রাপ্ত বেতনের সাথে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা বাড়াতে হবে। মালিক পক্ষ তা মেনে নিয়েছে। ফলে আশা করছি আর অসন্তোষ হবে না।’
কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর উপ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাকিব মোবাররাত খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামছেন। তবে যেখানে আন্দোলন হচ্ছে সেখানে আমরা কথা বলছি শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে। আমরা দুই পক্ষকে ডেকে বুঝিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি। অনেক জায়গায় শ্রমিকরাও শান্ত হয়েছে।’