![এক কারখানায় বেতন বৃদ্ধির খবরে ১০ কারখানা উত্তাল](uploads/2024/01/13/1705122086.ctg-soromick-andolon.jpg)
চট্টগ্রাম ইপিজেডের এক পোশাক কারখানায় বেতন বৃদ্ধির খবরে আন্দোলনে নামেন ১০ কারখানার শ্রমিকরা। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার কাজ বন্ধ রেখে লাগাতার বিক্ষোভ করেন ওই সব কারখানার শ্রমিকরা। ওই সময় তারা তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানান।
জানা যায়, বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি ‘ইয়ংওয়ান’ তাদের শ্রমিকদের বোনাস হিসেবে গড়ে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন বাড়ায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কারখানার শ্রমিকরা একই হারে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
গত বৃহস্পতিবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, সরকারনির্ধারিত বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক শ্রমিক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন একদম নতুন শ্রমিকরা। যারা সম্প্রতি চাকরিতে যোগদান করেছেন তাদের বেতন এক লাফে ৪ হাজার টাকা বেড়ে গেছে।
ফোর এইচ গ্রুপের শ্রমিক রোমানা আক্তার বলেন, ‘নতুন যেসব শ্রমিক ৮ হাজার ৫০০ টাকায় চাকরিতে প্রবেশ করেছেন, তাদের বেতন এক লাফে বৃদ্ধি পেয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হয়ে গেছে। কিন্তু পুরোনো যেসব শ্রমিক আগে থেকেই ১০ থেকে ১১ হাজার বেতন পেতেন, নতুনদের মতোই এখন তাদেরও বেতন হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। সে হিসাবে নতুনদের বেতন বেড়েছে ৪ হাজার টাকা। আর পুরোনোদের বেতন বেড়েছে কম। অথচ তাদের ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা বেতন এক দিনে হয়নি। কয়েক বছর ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর তারা ওই বেতন পেয়েছেন। কিন্তু এখন পুরোনো ও নতুন শ্রমিকদের বেতন একই হয়ে গেল। তার মধ্যে কারও কারও বেতন বাড়েইনি। এতে জ্যেষ্ঠ এবং দক্ষ কর্মীদের মাঝে কিছুটা চাপা অসন্তোষ আগে থেকেই ছিল। ইয়ংওয়ান কারখানায় সব শ্রমিকের সমান বেতন বৃদ্ধির খবর শুনে আশপাশের কারখানার শ্রমিকদের চাপা ক্ষোভ প্রকাশ হতে শুরু করে। তারা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করার পাশাপাশি রাস্তায় নেমে গাড়ি অবরোধ করেন। এসব কারণে এ অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, সরকারনির্ধারিত বেতনের সঙ্গে পুরোনো শ্রমিকদের বেতন কমপক্ষে আরও ৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা যেন ৪ হাজার টাকার কম না হয়।’
সিইপিজেড, কেইপিজেডসহ আশপাশের মোট ১০টি কারখানায় আন্দোলন হয়েছে। এর মধ্যে আছে ইপিজেড মেরিম কু লিমিটেড, এইচ কে ডি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আরএসবি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, কেনপার্ক, প্রিমিয়ার গার্মেন্টস লিমিটেড, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সীতাকুণ্ডে প্যাসিফিক নিটেক্স লিমিটেড, কর্ণফুলীতে ফোর এইচ টেক্সটাইল, স্মার্ট জিন্স ও এনএসটি ফ্যাশন।
এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার ক্লিপটন গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পোশাকশ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার কর্তৃক সমাধানকৃত। এ ইস্যুতে পুনরায় আন্দোলন হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য হিসাবমতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বাড়িয়ে বেতন সমন্বয় করেছি। শ্রমিকরা এই সমন্বয়ের বিষয়টি ৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি চাইছে। যা মেনে নিয়ে কারখানা চালানো সম্ভব হবে না। পোশাক কারখানার মালিকরা গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন ঋণে জর্জরিত। অনেক কারখানা বন্ধের পথে।’
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, এ পরিমাণ টাকা বৃদ্ধি করা অনেক কারখানার মালিকের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে অনেকে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন। এটি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ইস্যু। সেটিতেই মালিক-শ্রমিক সবাইকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবাহান বলেন, ‘নতুন বেতনকাঠামোতে অন্যান্য পোশাক কারখানায় ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি হচ্ছে, নভেম্বর মাসে প্রাপ্ত বেতনের সঙ্গে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা বাড়াতে হবে। অনেক মালিক বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলেছেন।
বৃহস্পতিবার প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছি। ফলে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।’
শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলাইমান গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। তবে আমরা মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষকে নিয়েই বসেছি। কিছু কিছু কারখানার শ্রমিকরা সমঝোতা করে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।’