লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়ক সংস্কার না হওয়ায় হাজারো মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি সেতু ও আটিটি আঞ্চলিক সড়কের কারণে প্রায় ৫ বছর ধরে দুর্ভোগে পড়েছে এ ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার পরিবার। ইউনিয়নটির চারদিকে ভারত বেষ্টিত ও দেশের মূলভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন।
ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়কগুলো বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়ে গত ২০২১ সালের ২০ অক্টোবরে ভারতের উজান থেকে আসা তিস্তা নদীর আকস্মিক ঢলে। এতে দহগ্রাম ইউনিয়নে ভয়াবহ বন্যা হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, ধেয়ে আসা প্রবল স্রোতে ফসলি জমি, চলাচলের সড়ক, সেতু, সরকারি-বেসকারি স্থাপনার ক্ষতি হয়, টাকার অংকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানায়, দহগ্রাম ইউনিয়নের মাঝ বরাবর দিয়ে সাকোয়া নদী প্রবাহিত। এ নদীটি ভারতের মেখলিগঞ্জ থেকে দহগ্রাম হয়ে আবারও ভারতে প্রবেশ করেছে। অপরদিকে একই এলাকা হয়ে উত্তর-পশ্চিমে ভারত-বাংলাদেশ লাগোয়া অংশে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। প্রতি বছর তিস্তার পানি বেড়ে দহগ্রামের অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়।
জানা গেছে, তিস্তায় বন্যা দেখা দিলে সাকোয়া নদীও উত্তাল রূপ ধারণ করে। সেতু ও আঞ্চলিক পাকা-কাঁচা সড়ক ভেঙে যায়। দহগ্রাম ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলো হলো ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৃষ্টিয়ারপাড় এলাকার সাকোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতু, একই ওয়ার্ডের সর্দারপাড়া তিস্তা নদীর ক্যানেলের ওপর নির্মিত সেতু, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমবাড়ী মহিমপাড়া এলাকার কালভার্ট ও একই ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রাম সড়কের সেতু, ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড সংযুক্ত বঙ্গেরবাড়ী থেকে নতুনহাট এলাকায় সাকোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাড়িপাড়া-সৈয়দপাড়া সাকোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতু এবং ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সংযুক্ত এলাকার কাজীপাড়া-মমিনপুর মাদ্রাসা এলাকার সাকোয়া নদীর ওপর সেতু।
অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো হলো ১ নম্বর ওয়ার্ডের কলোনীপাড়া থেকে দাখিল মাদ্রাসাগামী ৫ কিলোমিটার সড়ক, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ওলেরপাড়, ডাঙাপাড়া এলাকা হয়ে শেষ পর্যন্ত (ভারত-বাংলাদেশ শূন্যরেখা পর্যন্ত) সড়ক, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দহগ্রামের নয়ারহাটগামী পাকা রাস্তা থেকে গুচ্ছগ্রামে যাওয়ার ২ কিলোমিটার সড়ক, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর দিকের সংযুক্ত পাকা সড়ক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দপাড়া থেকে হাবিব চেয়ারম্যানের বাড়ি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাতিপাড়া থেকে মতিয়ারের বাড়ি পর্যন্ত কাবিখার সড়ক। এ সড়কটি দেবে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম-এলাকা ঘুরে অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকার বিষয়টি জানা গেছে।
দহগ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও পাটগ্রাম সরকারি কলেজের একাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির সরকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়কে চলাচলে সবার সমস্যা হয়। অনেক দিন থেকে এসব সেতু ও সড়কের অবস্থা ভালো না। আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই।’
দহগ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, ‘পুরো দহগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক তিস্তা ও সাকোয়া নদীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সেতু নষ্ট হয়ে সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। সেতু ও সড়কের জন্য খুব কষ্ট করে আমাদের চলাচল করতে হয়।’
পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মাহাবুব-উল আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়ক সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তাড়াতাড়ি কাজ করা হবে।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়ক দিয়ে চলাচলে জনসাধারণকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেকে আহতও হয়েছে। সড়ক ও সেতু সংস্কার করা জরুরি। এসব বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বলা হয়েছে।